অনেক রথী মহারথীর মাঝে একটা অবাঞ্ছিত লোককে দেখে সবার ভ্রূকুঞ্চন শুরু হয়ে গেল। ইতিউতি ফিসফাস থেকে একটা চাপা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ল। একজন হোমরাচোমরা গোছের উদ্যোক্তা তাকে এসে চেপে ধরে জিজ্ঞেস করল," অ্যাই, তুইই গুরুদেবের কলমটা চুরি করেছিলি না? " আজ্ঞে হ্যাঁ। "হতভাগা, গুরুদেবের কলম চুরি করে তুইই আবার এই সুন্দর অনুষ্ঠানে এসেছিস? চিনতে পারছিস আমাকে? আমিই তোকে জেলে চালান করেছিলাম। হুঁ, হুঁ আমিই সেই কোর্ট ইন্সপেক্টর শরত ঘোষ। আমার চোখকে ফাঁকি? স্বর্গ, মর্ত্ত, পাতাল যেখানেই থাকো না কেন ঠিইক খুঁজে বের করব। এখন এখান থেকে দূর হ ,ব্যাটা চোর কোথাকার। " শরত বাবুর গলার আওয়াজ নেহাতই কম নয়। চেঁচামেচির আওয়াজ গুরুদেবের কানে পৌঁছেছে। উনি শশব্যস্ত হয়ে সশরীরে উপস্থিত। আহা হা, ছেড়ে দিন বেচারিকে। কিন্তু শরতবাবু ইতিমধ্যেই গদাম করে একটা কিল বসিয়ে দিয়েছেন তার পিঠে। বেচারার নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ হবার জোগাড়। ইতিমধ্যেই অ্যাডভোকেট সৌরীনবাবু মানে সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়ের আগমন। তিনি কোনমতে চোরকে শরতবাবুর হাত থেকে উদ্ধার করে সস্নেহে জিজ্ঞেস করলেন, বাপু তুমি গুরুদেবের কলমটি কেন চুরি করলে? উত্তরে চোর যা বলল তাতে অনেকেই বিস্মিত হয়ে গেল। চোর জানালো যে সে ভাবত যে গুরুদেবের অত সুন্দর সুন্দর লেখা ঐ কলমের জন্যই হয়। এত সুন্দর সুন্দর কবিতা লেখেন তিনি যে তার সর্বদাই মনে হতো গুরুদেবের ছান্দিক জীবনের পিছনের ঐ কলম। তার নিজের জীবন কখনোই পদ্য হয়ে উঠতে পারেনি এবং সদাই গদ্যময়। সে যে একেবারেই গোমূর্খ তা নয় কিন্তু কবিতার ছন্দ কেন যেন আসেনা তার কলমে। সুতরাং সে কখনোই কবি হতে পারেনি, অ-কবিই থেকে গেছে। ঝলমলে ডগ শোয়ের মাঝে নেড়ি কুত্তার যে অবস্থা হয় কবিকূলের মাঝে অ-কবির সেই অবস্থাই হলো। চোখের জলে টলটল করছে এহেন অবস্থায় সে সভাত্যাগ করল আর অন্যান্য বহু গুণীজনের চোখে জল সিঞ্চিত করে গেল।
Saturday, 8 May 2021
কবি ও অ-কবি
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন। অনেক জ্ঞানী গুণী মানুষের সমাগম। সবাই এসেছেন কবিকে একবার চোখের দেখা দেখতে। উনি যে সবার প্রিয়। বেশীর ভাগ মানুষ এসেছেন কবিকে ভালবাসার জন্য আবার কেউ কেউ এসেছেন স্ট্যাটাস সিম্বল বজায় রাখতে। এ যেন পন্ডিত রবিশঙ্কর বা বিলায়েত খানের সেতার শোনার জন্য সবচেয়ে দামী টিকিট কেটে হলে আসা। কমদামী টিকিট ওঁরা ভুলেও বসবেন না। ঝাঁ চকচকে জামা কাপড়, গয়নাগাঁটি লোককে দেখানোর এ এক অপূর্ব সুযোগ। পিছনে কারা বসে? ওরা সঙ্গীত হয়তো একটু আধটু বোঝে কিন্তু রেস্তয় টান পড়ার ভয়ে তারা আসে শুধু সঙ্গীত শুনতেই আসে। ওরা কি বুঝবে এইসব দামী গয়নাগাঁটির কদর। ঐখানে বসব, নৈব নৈব চ। সুতরাং অমুক দাদা,তমুক ভাইকে ধরে একেবারে সামনের সারির টিকিট চাই। বাজাতে বাজাতে পন্ডিতজীর বা ওস্তাদজীর একবার চোখ যদি পড়ে তাহলে জীবনটাই ধন্য হয়ে গেল। আর যদি বা একটা অটোগ্রাফ নেওয়া যায় তাহলে তো তিন চার পুরুষের স্মৃতি রোমন্থন চলতে থাকবে। যাক এসব কথা। এবার আসল প্রসঙ্গে আসা যাক।
Subscribe to:
Posts (Atom)