Tuesday, 17 January 2023

অনীকের অনেক না বলা কথা(এক)

হাতে সময় খুব কম, কিছু না বলা কথা এখনই না বললে হয়তো আর সময় পাবেনা বলার।  ডাক্তার তো প্রায় জবাব দিয়েই দিয়েছে।
অনীক বোস সুন্দর ল্যান্সডাউন রোডে নতুন খোলা ব্যাঙ্কের হেড ক্যাশিয়ার। ছিমছাম  ব্যাঙ্কের ঝকঝকে কাউন্টার আর গ্রাহকরাও সবাই বেশ ঝকঝকে। গ্রাহকেরা আসছে ,চটপট কাজ সারছে আর কিছু মিষ্টি হাসি দামী সেন্টের গন্ধের  সঙ্গে ছড়িয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছে। গ্রাহকরাও  বেশ  নামী দামী, নানাধরণের গাড়ি নিয়ে আসেন ব্যাঙ্কের কাজ সারতে যদিও অনেক সময়ই দরকার  পড়েনা গাড়িটা  আনার কারণ বাড়ি থেকে দু পা ফেললেই তো ব্যাঙ্ক। কিন্তু স্টেটাস বলে একটা কথা আছে না যেটা গাড়ি না আনলে ঠিক মানানসই  হয়না। তবে কিছু ব্যবসায়ীরা আসেন  যাঁরা একেবারে কাজ সেরে তাঁর নিজের  কাজে চলে যান।  সেক্ষেত্রে গাড়ি আনাটা  ভীষণ প্রয়োজন। এইরকম  একটা ব্যস্ত দিনে গ্রাহকের আনাগোনা বেশ ভালই চলছে, হঠাৎই  একটা ভীষণ জোরে আওয়াজ এল যেন কিছু একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে।  ক্যাশ রিসিপ্ট এবং পেমেন্ট  কাউন্টারেও বেশ লোকজন রয়েছে, এমন সময় ঐ আওয়াজে একটু সতর্ক হয়েই অনীক বেরিয়ে এল কি ব্যাপার ঘটেছে দেখার জন্য।  হেড  ক্যাশিয়ার হবার জন্য স্ট্রংরুমের  চাবি সে সবসময়ই নিজের  কাছেই  এমনভাবে রাখে যাতে চাবি তার শরীরকে স্পর্শ  করে থাকে। ও কখনোই নিজের  ড্রয়ারে  রাখেনা।কাউন্টার ঘুরে বাইরে এসেই দেখে একজন  বৃদ্ধ  ভদ্রলোক উপুড়  হয়ে রাস্তায় পড়ে আছেন  এবং একটা ট্যাক্সি তাঁকে বেশজোরে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই আছেন  রাস্তায় কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেন না। উল্টোদিকের হকার্স  কর্ণারে  একটা টিভি সারানোর দোকান  ছিল। ঐ ভদ্রলোক কে নিয়ে একজন কাস্টমারের গাড়িতে বসে থাকা ড্রাইভারকে নিয়ে ভদ্রলোককে উঠিয়ে শিশুমঙ্গল হাসপাতালে নিয়ে গেল  এমার্জেন্সিতে।  ওরা কিন্তু ভর্তি করল না। তখন তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলো শম্ভুনাথ পণ্ডিত  হাসপাতালে। সেখানেও  তারা দেখলনা। তখন  অগত্যা পিজি হাসপাতালে যাওয়া হলো এবং সেই টিভি সারানোর দোকানের  লোকটিকে সেই অ্যাক্সিডেন্ট হওয়া ভদ্রলোককে জিম্মা করে অনীক  বলল যে চাবিটা  হ্যান্ড ওভার করে ও ফিরে আসছে। ঐ গাড়ির  মালিক  ছিলেন  ভাল্লা  ফুটওয়্যারের মালিক  মিস্টার  ভাল্লার। তিনি তাঁর  কাজ সারতে সারতে অনীক  ফিরে এসেছে এবং মিস্টার ভাল্লার কাছে তাঁর  অনুমতি ছাড়া গাড়িটি নিয়ে যাওয়ার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে এবং ড্রাইভারের কোন দোষ নেই এবং তাকে প্রায় একরকম  জোর  করেই  সে নিয়ে গেছে একথাও  জানিয়ে দিল যাতে ড্রাইভার বেচারা আর বকুনি না খায়। যাই হোক, চাবিটা অন্য একজনের  কাছে দিয়ে ম্যানেজারের  পারমিশন নিয়ে ট্যাক্সি ধরে ফিরে গেল পিজি হাসপাতালে।
কিন্তু ততক্ষণে ঘটে গেছে বিপত্তি। ঐ বয়স্ক  ভদ্রলোক  ততক্ষণে না ফেরার দেশে চলে যাওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর দিয়েছে এবং তারা তো অনীক  এবং টিভি সারানোর দোকানের  মালিককে প্রায় গ্রেফতার করার  জোগাড়। যাই হোক সমস্ত ঘটনা আদ্যোপান্ত  শোনার পর  দুই জনের  নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর  নিয়ে ছেড়ে দিল কিন্তু ততক্ষণে অনেক  সময় পেরিয়ে গেছে। ভদ্রলোকের  পকেট থেকে একটা কাগজে লেখা  ফোন নম্বর দেখে ফোন করে জানা গেল যে সেটা তাঁর  মেয়ের ।ফোন  করে ডেকে আনা হলো তাঁর মেয়েকে। প্রথমে তাদের  সন্দেহ  যে অনীক  এবং টিভির  দোকানের মালিকের  দ্বারাই কিছু  হয়েছে কিন্তু সমস্ত কিছু জানার  পর আর কিছু বললনা। কিন্তু এখানেই সমস্যার  শেষ  নয়। দু চার দিন  বাদে বাদে অনীক দের  ডেকে পাঠায় লালবাজার থেকে। অনেকগুলো ছুটি নষ্ট  হয়েছে তার আর ভদ্রলোককেও  দোকান  বন্ধ  রেখে হাজিরা দিতে হয়েছে এবং ঘন্টার পর ঘন্টা বসেথেকে একই    প্রশ্নের  ঘুরিয়ে ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করার  উত্তর  দিতে হয়েছে। একদিন  অত্যন্ত  বিরক্ত  হয়ে অনীক সেই পুলিশ ইন্সপেক্টরকে  বলে ফেলল যে আপনাদের  এই ধরণের  ব্যবহারে অতিষ্ঠ  হয়ে আর কেউ কোনদিন  কার ও বিপদে সাহায্য  করতে এগিয়ে আসবে না। তারপর মৃতের মেয়ে এবং জামাইএর  কাছে লিখিত বয়ান  যে অনীকদের তাঁকে বাঁচানোর  সাহায্য  করা ছাড়া আর কোন  উদ্দেশ্য  ছিলনা নিয়ে তাদের  মুক্তি দেওয়া হলো।
মানবিকতা দেখাতে গিয়েও যে কত বিপদের  সম্মুখীন হতে হয় তার এক প্রকৃষ্ট নিদর্শন।  তা বলে কি অনীকরা আবার ও ঐভাবে কাউকে সাহায্য  করতে এগিয়ে আসবে না?