Wednesday, 27 October 2021

গল্প নয় আর লেখকও নই।

গল্প নয় আর লেখক নই। কিছু পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণা।।
বয়স তখন খুবই কম। লোকে গান করতে বললে লাজ লজ্জাহীন হয়েই গান শুরু করে দিতাম। সুতরাং, বয়সটা সহজেই অনুমেয়।

পাড়ার দুর্গাপুজো আমাদের বাড়ীর মাঠেই হতো অন্তত জন্ম ইশতক দেখছি। বাইরের বারান্দায় আমাদের ঠাকুর বানাতো ধীরেন পাল। পাড়ার লোকের চাঁদা দিয়েই হতো পূজো ছিলনা কোনো স্পন্সরশিপ বা বিজ্ঞাপন। ধীরেন কাকার প্রায় হাতে খড়ি আমাদের পাড়ার দুর্গা প্রতিমা দিয়ে। সুতরাং যত কম পয়সা দিয়ে করিয়ে নেয়া যায় আর কি। সব যুগেই একটা শোষণের পন্থা চলে এসেছে। মাত্র চল্লিশ টাকা দিয়ে তাকে দিয়ে দুর্গা ঠাকুর বানানো হতো। ছিল অনেক বড় বড় শিল্পী কিন্তু তারা আমাদের ধরা ছোয়াঁর বাইরে। সব চেয়ে দামী ছিলেন যামিনী পাল, তার পরে বিমল পাল, শীতল দাস এবং বাঙাল রা। লোকে বলতো বাঙাল নাকি যামিনী পালের ছাঁচ চুরি করেছে। কি করে? যামিনী পালের ঠাকুর বিসর্জনের পরে বাঙাল নাকি তার লোকজন দিয়ে মায়ের মূর্তির মাথাটা ভেঙে নিয়ে এসেছিল এবং যামিনী পালের মতনই মায়ের মুখ বানাতো ওই ছাঁচ দিয়ে। সত্যি বাঙাল সেটা করেছিল কিনা কারো জানা নেই কিন্তু লোকমুখে প্রচার হয়ে গিয়েছিল চোর বাঙাল। বাঙাল কে এভাবে বলাটা এখন মনে হয় তার শিল্পকীর্তিকে নিচে দেখানো। যাই হোক বাকিদের নিজস্বতা ছিল কিন্তু যামিনী পালের নাম উঠলেই বাঙাল এর নামটা উঠে আসতো।

এবার আসি ধীরেন কাকার কথায়। আমাকে খুব ভাল বাসতো কারণ সবাইকে ধীরেন কাকাকে বকতে শুনতাম। যে লোকটার শিল্প সম্বন্ধে জ্ঞান শূন্য সেও এসে জ্ঞান দিত। মাঝে মাঝে ধীরেন কাকাকে নীরবে চোখ মুছতে দেখতাম। আমি ছোট হলেও ধীরেন কাকার সমব্যথী ছিলাম।  ঠাকুর তৈরীর কয়েকটা ধাপ আছে। শুকনো খড় দিয়ে প্রথমে শরীরটা মোটামুটি ভালো ভাবে বেঁধে তারপর একমাটির প্রলেপ পড়তো। তারপর দুমাটির প্রলেপ। তারপর রোদে শুকানো এবং সাদা রং হতো এবং তারপর যে রঙে প্রতিমাকে রাঙানো হবে সেটা হতো। এরপর চোখ আঁকা এবং সবশেষে চালি বসানো হতো। ধীরেন কাকা বাবার কাছে অনুমতি নিয়ে আমাদের   বাড়ীর বাইরের বারান্দায় সব কাজটাই করতো এবং নিজের বাড়ী ফিরে যাবার আগে সব জায়গাটা পরিষ্কার করে যেত। ধীরেন কাকার চ্যালা হিসেবে আমিও খুব গর্ব অনুভব করতাম মনে মনে। কাকা মাঝে জল খেতে চাইলে আমি চুরি করে দু চারটে নারকেলের নাড়ু নিয়ে দিতাম। কাকা জিজ্ঞেস করতো মাকে বলেছ তো? আমি থাকতাম চুপ করে। একদিন মা কি কারণে বাইরে আসলে ধীরেন কাকা বলে উঠলো " বৌদি নারকেলের নারুটা খুব ভালো হয়েছে। মা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে কোনোরকমে সামলে নিলো । পরে আমাকে বললো তুমি আমাকে না বলে কেন এই কাজ করেছ? আমি কেঁদে ফেললাম বললাম মা কাকার খুব খিদে পেয়েছিল কিন্তু কিছু বলছিল না।রোজ যে মুড়ির একটা ছোট্ট পুঁটলি আনে আজ তাও ছিলোনা। মা বললো আছছা ঠিক আছে কিন্তু এবার থেকে আমায় জিজ্ঞেস করে দেবে। আমি কেবল মাথাটা নাড়ালাম। অসুরের চেহারাটা কি রকম হবে কাকা আমায়  জিজ্ঞেস করলো। আমি বললাম মদন দার মতন করতে হবে। মদনদা জুনিয়র ভারতশ্রী হয়েছে আর চেহারাটাও ছিল গ্রীক দের মতন। মদনদাকে নকল করার মতো আমার চেহারা কোনোদিন ছিলোনা কিন্তু মদন দা যেভাবে দেখাত সেইভাবে দেখাতে পাটকাঠির মতন চেহারায় যখন দেখালাম তখন সবাই হাসতে থাকলো কেবল ধীরেন কাকা ছাড়া। কাকা সেইমতন খড় বেঁধে ,যেখানে যেমন মাসল হবে প্রয়োজনীয় খড় বাঁধল। আমার না আছে পড়াশুনো না আছে অন্য কিছু । বুঁদ হয়ে দেখতাম ধীরেন কাকার কাজ আর অন্যান্য শিল্পীদের কাজ দেখে এসে কাকাকে বলতাম। জানিনা ধীরেন কাকা তার থেকে কোন কিছু নিয়েছিলেন কিনা। প্রায় বছর পাঁচেক কাকা আমাদের দুর্গা, কালী ,লক্ষ্মী এবং সরস্বতী ঠাকুর করেছিলেন। তারপর দীর্ঘদিন কেটে গেছে কাকার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ নেই। এখন ধীরেন কাকা নিশ্চয়ই বেঁচে নেই কিন্তু হঠাৎ এক ঝলক দমকা হাওয়ায় স্মৃতির পুরোনো পাতাটা উল্টে গেল আর এদিক ওদিক থেকে উড়ে যাওয়া পাতাগুলো যথাসম্ভব  একত্রিত  করে লিপিবদ্ধ করে ফেললাম। 

Tuesday, 19 October 2021

ঝুলনযাত্রা

আজ শ্রাবণের পূর্ণিমাতে কি এনেছিস, বল্?


কি চাই বল্? তোদের জন্য ঝুলনযাত্রা এনেছি এখন, খুশী কি না বল্। সত্যিই তো, ঝুলনযাত্রা এমনই  এক অনুষ্ঠান  যা সমগ্র উত্তর, পশ্চিম এবং পূর্ব ভারতে মহা সমারোহে পালিত হয়। হোলি এবং জন্মাষ্টমীর পরেই এই গুরুত্বপূর্ণ  উৎসব যা হিন্দুরা অত্যন্ত ধূমধাম  করে পালন করেন। রাধা এবং কৃষ্ণকে  নিয়ে বহু চর্চিত প্রেমগাথা  এই উৎসবের  মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। ঝুলনযাত্রা মানে কোনসময় রাধা দোলনায় বসে আছেন এবং শ্যামসুন্দর  তাঁকে দোলা দিচ্ছেন এবং মাঝে এত জোরে তিনি দোলা দিতে থাকলেন যে শ্রীরাধা ভীত সন্ত্রস্ত  হয়ে পড়লেন এবং হে মাধব আমায় রক্ষা করো এবং সেই  সুযোগে শ্যামসুন্দর তাঁর পাশে দোলনায় বসে পড়লেন  এবং শ্রীরাধার  সখীরা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলেন।  আবার  কোন  কোন  ক্ষেত্রে শ্রীরাধা এবং শ্রীমাধব  পরস্পর উল্টোদিকে দোলায় দুলছেন  এবং সখীরা তাঁদের  সেবা করছেন। প্রায় ষাট বছর আগে ইসকন ( ইন্টারন্যাশনাল  সোসাইটি  ফর কৃষ্ণ কনসাসনেস)  মানে উনিশশো বাহাত্তর সালে তাঁদের  মন্দির  বা অফিস  রাসবিহারী মোড়ে প্রতাপাদিত্য  রোডের  সন্নিকটে খোলে এবং পরবর্তীকালে স্থান সঙ্কুলান  না হওয়ায় থিয়েটার রোডে তাদের  মন্দির  স্থাপন  করে। ধীরে ধীরে এর কলেবর  বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন  জায়গায় এঁদের  সম্প্রসারণ  হয় এবং বর্তমানে কলকাতা থেকে একশ  চল্লিশ  কিলোমিটার  দূরে মায়াপুরে সর্ববৃহৎ মন্দির  স্থাপন  করেন  এবং এটাই এঁদের  হেড অফিস। যাই হোক, এবার  ফিরে আসা  যাক ঝুলনযাত্রায়।

প্রচন্ড  গরমের পরে বৃষ্টি আসায় সবাই  খানিকটা হাঁফ  ছেড়ে বাঁচে।শুকিয়ে যাওয়া গাছপালা স্বস্তির  নিঃশ্বাস ফেলে আবার  সবুজ  পাতায় সেজে ওঠে আর এর মধ্যেই শ্রাবণ  পূর্ণিমার স্নিগ্ধ  আলোকে শুরু হয় ঝুলনোৎসব।  শৈশবের  সেই ঝলমলে দিনগুলো চোখের  সামনে জ্বলজ্বল  করে ওঠে। শেখর, মলয়, প্রকাশ  এবং আমার কাজ ছিল  পাড়ার যত ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের  নিয়ে শহরের  অলিতে গলিতে দু পা অন্তর বাড়িতে বাড়িতে বিভিন্ন  রকমের  পুতুল দিয়ে সাজানো ঝুলন দেখানো। ঘাসের চাপড়া  দিয়ে তৈরী হতো পাহাড়, তার  মধ্যেই  করা হতো কুলু কুলু বয়ে যাওয়া ঝর্ণা।  অদূরে শহরের  রাস্তা এবং চলছে রিক্সা , চলছে গাড়ি এবং রাস্তার  মোড়ে  ট্রাফিক পুলিশ। একটু দূরে করা হতো বাজার,  নানারকম  তরি তরকারি  নিয়ে বসতো বুড়ি মা এবং ক্রেতা হিসেবে  থাকতো কিছু  লোকজন।  আমরা যদি আজে বাজে দাম বলতাম  তাহলে সূত্রে বাঁধা বুড়ির মাথা  নাড়িয়ে দেওয়া হতো যার অর্থ  না ঐদামে সে বিক্রি করবেনা। পাহাড়ের  মাঝখানে থাকতো  একটা দোলনা যেখানে শ্রীরাধা ও শ্রীকৃষ্ণ  বসে থাকতেন  এবং দোল খেতেন।  কোন একটা বাড়িতে সবরকমের  পুতুল  না থাকায় বিভিন্ন  বাড়ি থেকে এইসমস্ত  পুতুল  সংগ্রহ করা হতো এবং ঝুলন  শেষে ঐ পুতুলগুলো আবার  ফিরিয়ে দেওয়া হতো। তুতু,  জলু,  টিঙ্কু, রিঙ্কু,  ইতি, গজু,ঝকান এবং আরও  অনেক ছোট ছোট  ছেলেমেয়েদের  ঝুলনোৎসব দেখিয়ে আনা আমাদের  কাজ ছিল। তখন বাড়িতে বাড়িতে টিভির  আক্রমণ  ছিলনা আর সেই কারণেই  খেলাধূলো  ছেড়ে দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা চোখ সাঁটিয়ে  বসে থাকা ছিলনা, ছিল ক্লাবে যাওয়া, ড্রিল করা,মেয়েদের  খো খো খেলা বা যোগাসন  করা এবং রাস্তার  আলো জ্বলে ওঠার  আগেই  বাড়ি ফিরে হাতমুখ ধুয়ে পড়তে বসা এবং রাত নটার  আগে খেয়েদেয়ে ঘুম। আবার  সকালে উঠে পড়তে বসা এবং স্কুলে যাওয়া এবং স্কুল  থেকে ফিরেই  কিছু খেয়ে ক্লাবে যাওয়া। এই ছিল  দৈনন্দিন  রুটিন এবং মাঝে মাঝেই  এইধরণের  পূজো, অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে এক বিশেষ  আনন্দ  পাওয়া।

সময়ের  পরিবর্তনে সবকিছুই  পরিবর্তন  হয়েছে। পড়াশোনার  ধাঁচ পাল্টেছে, জীবন যাত্রায় এসেছে বহুল পরিবর্তন কিন্তু এরই মধ্যে সেই অনাবিল  আনন্দ  যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। চাকা তো আর উল্টোদিকে ঘুরবে না, সুতরাং পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে  এবং যারা পারবে না তারা পিছনে পড়ে থাকবে। জানিনা এখন  কটা বাচ্চা ছেলেমেয়েরা  ঝুলনোৎসব  পালন করে এবং আনন্দ  উপভোগ  করে।

Friday, 15 October 2021

কুমড়ো কাটা ভাসুর

আগে যখন  যৌথ পরিবার  ছিল তখন প্রত্যেক  সংসারেই পাঁচ সাতটা ভাইয়ের ছেলেমেয়েদের ও তাদের  বাবা মায়েদের এবং অনেক ক্ষেত্রে বোন ভগ্নীপতিও তাদের  সংসার এর মধ্যেই  থেকে যেত। পুরোনো কলকাতায় বিশেষ করে উত্তর কলকাতায় এইরকম  বড় বাড়িতে এক ছাদের তলায় বহু মানুষের বাস ছিল। মফস্বলেও  এইরকম  বাড়ির  সংখ্যা নিতান্ত  কম ছিলনা। এইসব যৌথ পরিবারকে ধরে রাখতো  তাদের  জমিদারি কিংবা পারিবারিক  ব্যবসা। ব্যাঙ্কে যৌথ হিন্দু পরিবারের  অ্যাকাউন্টে সংখ্যাও  নিতান্ত  কম ছিলনা। এখনও  অবশ্য  এইরকম  অ্যাকাউন্ট  আছে কিন্তু সেটা কি করে কম ট্যাক্স দেওয়া যায় সেই চিন্তা মাথার  মধ্যে ঘোরার  জন্য। পারিবারিক  ব্যবসার তো অ্যাকাউন্ট  রাখতেই  হবে ,সেখানে দোষের  কিছু নেই  কিন্তু ট্যাক্স  ফাঁকি দেবার  উদ্দেশ্যে যখন  সেটা ব্যবহৃত  হয় তখন  সেটা নিশ্চয়ই  গর্হিত  অপরাধ।  অবশ্য  এখানে ছোট  বড় সবার  মানসিকতাই  এক। আইনের  প্রাবধানে যেটা করা সম্ভব  সেটা করেও  রিটার্নে কিছু আয় না দেখানো এটা একটা স্বভাবে পরিণত হয়ে গেছে। গতবছর অর্থাৎ দুহাজার কুড়ি সালে সেপ্টেম্বর  মাসে লোকসভায় জানানো এক তথ্য  অনুযায়ী মাত্র এক শতাংশ  লোক ইনকাম  ট্যাক্স  দেয়। কেউ কেউ  বলেন, না এটা ঠিক  নয়,  এটা প্রায় এক দশমিক  ছয় শতাংশ সাবালক লোকদের  অর্থাৎ যাঁরা রোজগার  করেন। এঁদের  মধ্যেই রয়েছেন  দরিদ্র এবং অতি দরিদ্র যাঁদের  নুন আনতে পান্তা ফুরায়  তাঁদের  ট্যাক্স  দেওয়ার প্রশ্ন  তো আসেই না বরং তাঁদের  বেঁচে থাকার  জন্য  সরকারকে নানাধরণের  সাহায্য  করতে হয়। আর এই সাহায্য  পাওয়ার  জন্য তাঁদের  রাজনৈতিক  নেতাদের  দ্বারস্থ হতে হয় এবং এইখানেই  চলে কেরামতি। আমরা তোমাদের জন্য  চোখের জল ফেলব, তোমাদের  কথা যথাযথ জায়গায় পৌঁছে দেব, সব ঠিক আছে কিন্তু  তাতে আমাদের  পেট চলবে কি করে? তোমরা আমাদের  কিছু ভাগ দাও আর তোমরা ও বেঁচে থাকো আর আমাদেরও  শাঁসালো করে রাখো। তোমাদের  ভাগের  টাকায় আমাদের  ছেলেমেয়েরা ভাল  স্কুলে পড়বে, বড় হয়ে বিদেশ  যাবে, সেখান  থেকে মেধা না থাকলেও  একটা সার্টিফিকেট  কিনে আনবে যার জোরে ভাল  চাকরি না পেলেও নেতা হতে কোন আপত্তি নেই,  তাদের দিকে তোমরা হাঁ করে তাকিয়ে থাকবে আর বলবে বাবুসাহেবকে জেতাতেই  হবে, উনি তো আমাদের  ঘরের  ছেলে। এই খেলা  চলতেই  থাকবে ততদিন পর্যন্ত  যতদিন  এই সাধারণ  মানুষের  জ্ঞাননেত্র  উন্মীলিত না হয় এবং সেই আশা সুদূর  পরাহত। তোমাদের  ছেলেমেয়েরা মিউনিসিপ্যাল স্কুলে পড়ুক,  পড়াশোনা কিছু হোক না হোক ,দুপুর বেলায় কিছু খাবার  খাক আর ফিরে এসে গুলতানি করুক আর একটু বড় হয়ে আমাদের  পার্টিতে নাম লেখাক। যখন  দরকার  পড়বে তখন  কারো বাড়িতে বোমা মেরে বা দরকার  পড়লে প্রতিবাদী কন্ঠ চিরতরে স্তব্ধ  করে দিয়ে আমাদের  পার্টির পাকাপাকি সদস্য  হয়ে যাবে। দরকার  পড়লে আমরাই তোমাদের  পুলিশের  হাজতে পাঠিয়ে দিয়ে চিরতরে সরকারি চাকরির  সুযোগ  বন্ধ করে দিয়ে আমাদের  অঙ্গুলিহেলনে নাচতে বাধ্য  করবো। তোমাদের  জন্য  মাঝেমধ্যেই  চোখে গ্লিসারিন দিয়ে চোখের  জল ফেলব, মাঝে মাঝেই কিছু শাঁসালো মানুষকে ঠান্ডা চোখে হুমকি দিয়ে টাকা তুলে তোমাদের  খাওয়াব আর ফটোগ্রাফার  আমাদের ফটো  তুলে বিভিন্ন  পত্রপত্রিকায়  ছাড়বে আর লোকে ধন্য ধন্য  করবে। এই চক্রব্যূহ  থেকে বেরোনোর  কোন রাস্তা নেই। 

কিন্তু এতসব কিছু বলার  সঙ্গে কুমড়োকাটা ভাসুরের কি সম্পর্ক?  যে কোন যৌথ পরিবারেই  এক আধটা ভাই থাকতো যারা বিয়ে থা না করে সংসারের যাবতীয় খুঁটিনাটি সব কাজ করতো এবং বাবা মায়েদের  দেখাশোনা ,বাজার  করা, ভাইদের  বাচ্চাদের খেলতে মাঠে নিয়ে যাওয়া , ভাই ভাদ্দর বৌদের  সিনেমার  টিকিট  কেটে আনা মায় যাবতীয় ফাই ফরমাস  খাটা এইসব কাজ করা। এঁদের  মধ্যে কেউ যদি সর্বজ্যেষ্ঠ  হতেন তাহলে  বৃদ্ধ বাবা মায়ের সমস্ত  কিছু  দায়দায়িত্ব সামলে সংসারের সব ঝামেলা মেটাতে গিয়ে আর বিয়েই করা হয়ে  উঠতো না। এঁরা নিজের  প্রয়োজনের কথা বলতেই পারতেন  না এবং যদি বা কোন বিয়ের সম্বন্ধ  এল সেটাকেও  কিভাবে নাকচ করতে হয় তা এঁদের  ওপর যারা নির্ভরশীল  তাদের  কাছে শিক্ষনীয়  ছিল। কোন কোন বাবা মা বলতেন  বা অন্যান্য  ছেলে বা বৌমারা তাঁদের  বলতে বাধ্য  করতেন যে ও তো বিয়ে করবে না বলেছে। আর সেই বড় ভাই  কি করে লজ্জ্বার মাথা খেয়ে বলেন  যে আমি বিয়ে করব। সেটা বলাও হতো না আর তিনি অকৃতদার হয়ে সবার  প্রতি দায়িত্ব পালন করে একদিন  পৃথিবীর মায়া ছাড়াতেন। অত বড় সংসারে সবার  মুখে খাবার  জোগাতে  শস্তার  তরকারি কুমড়ো আসত কিন্তু কোন ভাই বা ভাইয়ের  বৌদের  ঐ কুমড়ো কাটার ইচ্ছে না থাকায় সেই  অগতির  গতি বড়ভাসুরকে অনুরোধ  কুমড়ো কেটে দেওয়ার জন্য।  যুক্তি শুনলে মাথা ঘুরে যাবে। কুমড়ো কাটলে  তাদের  স্বামীদের  জীবন হানির  আশঙ্কা থাকে। এই কথা শোনার  পর আর কোন ভদ্রলোক  আর কুমড়ো  না কেটে থাকতে পারেন।  কে চান তার ভাইয়ের  বৌ বিধবা হন।এই কারণেই  তাঁদের  কুমড়ো কাটা ভাসুর বলা হতো। 

এবার  আসি আমাদের  দেশের  নব্য যুগের কুমড়ো কাটা ভাসুর কে হতে পারেন? হয়তো এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে খুব  কম হলেও এখনও  আছেন এইসমস্ত বিরল প্রজাতির  মানুষ  যাঁরা নিজেদের  স্বার্থ না দেখেই অন্যের  সাহায্যে এগিয়ে আসেন। নিশ্চয়ই  একজনের  কথা বিশেষ ভাবে মনে আসে আর তিনি হচ্ছেন  টাটা গোষ্ঠীর  কর্ণধার  শ্রী রতন টাটা মহাশয়। দেশের  প্রয়োজনে, দশের  প্রয়োজনে তিনি যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাতে একনম্বর  কুমড়োকাটা ভাসুর  তিনিই হতে পারেন। ভারতের  মতন এত বড় দেশে আরও  অনেক  ভাই রয়েছেন  কিন্তু তাঁরা নিজেদের  সম্পদ বাড়িয়েছেন এবং তুলনামূলক ভাবে  দেশের জন্য  সেরকম কিছু করেন  নি। অবশ্য  একেবারেই  কিছু করেন  নি বললে সত্যের অপলাপ হবে কারণ  তাঁরা বহুলোকের অন্নসংস্থান করেছেন  এবং দেশের  অগ্রগতিতে যথেষ্ট  সাহায্য করেছেন  কিন্তু তাঁরা কেউই এঁর সমগোত্রীয়  নন। অকৃতদার  এই  ভদ্রলোক বিভিন্ন  সময়ে যথেষ্ট  অপমানিত  হয়েছেন  কিন্তু তিনি ন্যাড়া বেলতলায় একবার  যান এই প্রবাদ বাক্যটিকে  মিথ্যা প্রমাণিত  করেছেন।  তাঁর  দীর্ঘ জীবন  কামনা করি এবং ভগবানের  কাছে অশেষ প্রার্থনা আরও  অনেক  রতন টাটা সৃষ্টি করুন  তিনি যাতে আমাদের  মতন স্বার্থপর  লোকেরা যারা আমাদের  কোন দায়িত্ব  নেই এবং অন্যের  ঘাড়ে দায়িত্ব  চাপিয়ে আরও  নিশ্চিন্তমনে  ঘুমাতে পারি।