গেট দিয়ে ঢুকেই ডানদিকে একটা ছোট্ট সাইনবোর্ডে বাঁকা ট্যারা ভাবে লেখা আছে ফর সিনিয়র সিটিজেন'স ওনলি। সুন্দর ফুলের গাছ দিয়ে বেড়া দেওয়া বেশ প্রশস্ত একটা জায়গা। সুন্দর সাজানো গোছানো ফুলের গাছ এখানে ওখানে। মাথার উপর ছাতা করা সিমেন্টের বাঁধানো গোল বসার জায়গা অনেকগুলো যেখানে অনেক ভিন্ন বয়সী ভিন্ন স্বাদের আলোচনাকারী বুড়োবুড়ি বসে গল্প গুজব করতে পারেন। এখানকার মেম্বারশিপ প্রায় বাঁধা। নতুন কোন বুড়ো বুড়ি এলেই হঠাৎ ঐ বাঁধা মেম্বারের জায়গায় বসতে পারবেন না। ঐ ছাতাগুলোও ভিন্ন আলোচনাকারী মেম্বারদের জন্য। কোন জায়গায় ধর্মীয় আলোচনা তো কোথাও রাজনীতি বা কোথাও সঙ্গীতের আলোচনা চলে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে এক রসের ব্যক্তি অন্য রসে বেমানান। এছাড়াও রয়েছে বুড়িদের আলাদা বসার জায়গা। জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও লেডিজ আর জেন্টস। কিছুদিনের মধ্যেই তো একই জায়গায় পৌঁছাতে হবে, সেখানেও কি লেডিজ আর জেন্টস থাকবে? যাই হোক, ঐ বাঁধানো সিমেন্টের ছাতাওয়ালা সিটে মাথা ঢোকানো যে সে কম্মো নয়, সেখানেও কারও রেকমেন্ডেশন বা কেউ হঠাৎই না ফেরার দেশে চলে গেছেন এবং একই ধরণের আলোচনায় অংশ গ্রহণ করবেন এইরকম লোকই ঐ বিশেষ জায়গায় বসতে পারবেন নাহলে হয় অন্য টাইম স্লটে বসতে হবে আর তা নাহলে ইতিউতি উঁকিঝুঁকি মেরে কোথায় জায়গা খালি আছে দেখে বসতে হবে। অন্য পাড়ার কুকুর বেপথু হয়ে যদি অন্য কোন জায়গায় ঢুকে পড়ে তার যা হাল হয় এখানেও প্রায় সেইরকম অবস্থাই হয়। এখানে কেউ কামড়াকামড়ি করেনা বটে কিন্তু জোড়া জোড়া কোটরাগত ঠাণ্ডা হিমশীতল দৃষ্টিতে নবাগত বৃদ্ধ প্রায় দগ্ধ হয়ে যান।
বিভিন্ন ছাতার তলায় বিভিন্ন ধরণের আলোচনা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বুড়োবুড়িদের খিটিমিটির কথা নয়তো বৌমার উপেক্ষার কথা। সত্তরোর্দ্ধ ব্যক্তিদের আলোচনার বিষয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বৌমার এবং বৌ ন্যাওটা ছেলের উপেক্ষার কথা বিশেষত যেখানে বাবা ও মা তাঁদের সন্তানের উপর নির্ভরশীল আর ষাটোর্দ্ধ এবং সত্তরের মধ্যে আলোচনার বিষয়বস্তু নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্যের কথা, প্রায় হিন্দুস্থান পাকিস্তানের মতন। এ যদি বলে ডান তো অন্যজন বলেন বাম। যাক যতই ডান বাম চলুক না কেন নিজেদের মধ্যে, জিত সেই একপক্ষের। আলোচনায় ক্ষান্তি দিয়ে বলতে হবে আচ্ছা বাবা তুমিই ঠিক নতুবা কোন অজুহাতে স্থান ত্যাগ করা, নিদেন পক্ষে বাথরুম চলে যাওয়া। যাঁরা তুমিই ঠিক বলতে পারেন তাঁরা এই সিটে বসবেন না আর যাঁরা তা মেনে নিতে পারেন না তাঁরা পরদিন এসে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে প্রসঙ্গ উত্থাপন করে খানিকটা হাল্কা হয়ে ফিরে যান তাঁরই কাছে। এটা ঠিক কথা যে একটু ফ্যাঁস ফোঁস না হলে সংসারের মজাটা ঠিক জমেনা। এই ফ্যাঁস ফোঁস করতে করতেই একদিন এই সংসারের সব মায়া কাটিয়ে চলে যেতে হবে সবাইকে, কেউ দুদিন আগে আর কেউ দুদিন পরে।
No comments:
Post a Comment