শমীক দার সঙ্গে রেখার একটু কাছাকাছি আসার সম্ভাবনাটা প্রায় এটাতেই শেষ। তখনকার প্রেম নিবেদন একটা কিরকম যেন ছিল। একটা ফিসফিসানি চুপিচুপি কথা একান সেকান হতে হতে পাত্র এবং পাত্রীর কানে পৌঁছে যেত, তারপর সেটা টিকবে কি টিকবে না নির্ভর করতো পরিস্থিতির উপর। যদি পাত্র শাঁসালো হতো মানে বাবার প্রচুর টাকা, বাড়ি গাড়ি জমিজমা আছে তাহলে আপত্তির তো কোন কারণ ই নেই। কত সুন্দরী মেয়েরা কতছেলেদের বুক ভাসিয়ে চলে গেছে তার ইয়ত্তা নেই। এইরকম ই এক ফিসফিসানি রেখার কানে পৌঁছেছিল কিন্তু ও ছিল এক অন্যধাতের মেয়ে। ঐরকম মাকাল ফলকে ও কিছুতেই মেনে নিতে পারবে না। সুতরাং সুযোগের অপেক্ষায় থাকা রেখা এর পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করল এবং ফল যা হবার তাই হলো। শমীক দার আপনি থেকে তুমিতে আসা আর হয়ে উঠল না। হঠাৎই একদিন দেখি একটা অ্যাম্বাসডার গাড়ি এসে থামল হোস্টেলের সামনে। এক সুপুরুষ ভদ্রলোক নামলেন গাড়ি থেকে এবং সরাসরি চলে গেলেন স্যারের ঘরের দিকে। দেখি স্যারের হাত ধরে মাথা ঝুঁকিয়ে কিছু যেন বলছেন আর স্যার মাথা নাড়িয়ে একটু করুণ করুণ মুখে কিছু বলছেন যে না না কিছুই হয়নি।
তখন একই ক্লাসে পড়া ছেলেমেয়েরাও আপনি আপনি করেই কথা বলতো এবং বেশ কিছুদিন যাবার পর আপনি থেকে তুমি বা তুই সম্বোধনে আসত সম্পর্কের গভীরতার উপর। দুটো ছেলের মধ্যে সম্বোধন একধাপ বা দুই ধাপ নামতো। এখানে ধাপটা এইরকম। আপনি (এক), তুমি(দুই) এবং তুই( তিন)। কিন্তু একটা ছেলে এবং একটা মেয়ের সম্বোধন এক থেকে তিনে নামলেও এক থেকে দুইয়ে নামলেই ছেলেমেয়েদের মধ্য গুঞ্জন শুরু হয়ে যেত। জানিস ,বলেই ফিসফিসানি শুরু হতো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ছেলেমেয়েরা আজকাল অনেক সহজভাবেই মিশতে শুরু করেছে এবং তিন থেকে দুই বা এক যাবার প্রশ্নই নেই। বন্ধুত্বের পরিণতি যদি বিয়ে অবধিও গড়ায় তাহলেও তুই থেকে তুমি সম্বোধনে আসেনা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রুতিশক্তি কম হবার উপকারিতাটা বোঝা যায় কারণ কানে আর খটকা লাগেনা।
No comments:
Post a Comment