গতকাল এক বন্ধুর বাড়ি থেকে ফেরার সময় এইরকম এক ঘটনার মুখোমুখি হ'লাম। ওখান থেকে ফেরার উপায় হয় নিজের গাড়ি নিয়ে যাও না হলে বেশ খানিকটা দূর হেঁটে এসে অটোতে চড়ে মেন রোডে এসে ট্যাক্সি নাও কিংবা ভাগ্য ভাল থাকলে ট্যাক্সি পাওয়া গেলে সরাসরি বাড়ি ফিরে এস আর একান্তই কিছু না থাকলে উবের নিয়ে চলে এস। কিন্তু এত নানান দিকে রাস্তা আর খোঁড়াখুঁড়ির দৌলতে উবের পেলেও তাকে যথাযথ ডিরেক্শন দিয়ে নিয়ে আসা বন্ধুর সাহায্য ছাড়া সম্ভবই নয়। যাই হোক, শেষ পন্থাই নিতে হ'ল অর্থাৎ বন্ধুর সাহায্য নিয়ে উবেরে চলে আসা।
অনেক ঘোরাঘুরি করে ভদ্রলোক অনেকবার টেলিফোন করে এসে উপস্থিত হলেন। এসেই হাঁফ ছেড়ে বললেন, " বাপরে, ফর্টিস হাসপাতাল থেকে হাঁটু অপারেশন করা এক রোগীকে এখানেই ছাড়তে এসে আমারও অপারেশন করা স্পাইন্যাল কর্ডের ব্যথাটা চাগিয়ে উঠল।" আঁতকে উঠে আমার গলা থেকে " অ্যাঁ" শব্দটা বেরিয়ে এল।
স্যার, আপনার কি লাগল?
না, না, না। ভাগ্যচক্রে আপনি এক হাঁটু অপারেশন করা রোগীকে নিয়ে এসে আবারও এক হাঁটু অপারেশন করা রোগীকে নিয়ে যাচ্ছেন। ধীরে ধীরে গল্পটা জমে উঠল রাস্তা সরু হওয়ার জন্য এবং গাড়ি নিয়ে তাড়াতাড়ি না যেতে পারার জন্য। করোনার দৌলতে বাড়ির বাইরে না যেতে পারার জন্য একটু কথা বলার জন্য ভিতরটা হাঁকপাঁক করে। সুতরাং যে কোন লোক পেলেই তার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা করে এবং তার হাঁড়ির খবর জানতে ইচ্ছে করে। কথায় কথায় জানলাম যে সদানন্দ বাবুর( উবর ড্রাইভারের নাম সদানন্দ সরকার) স্পাইন্যাল কর্ডের অপারেশন হয়েছে এবং কোনরকম পয়সা খরচ না করেই। একটু বিস্মিত হয়েই জিজ্ঞেস করলাম, কোথায়, কোন সহৃদয় ডাক্তারের সহায়তায়? তার উত্তরে তিনি জানালেন যে সরকারি হাসপাতাল পি জি হাসপাতালে ডাক্তার অমিতাভ চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে একদম নিখরচায়। সঙ্গে সঙ্গে বহু সমালোচিত মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসাও করলেন। শুনে মনটা একটু আশ্বস্ত হ'ল যে পি জি হাসপাতালে শুধু বদমাস দুর্নীতিবাজ নেতাদের পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্যই নয়, সাধারণ লোকেরও কিছু চিকিৎসা হয়। এটাই তো হওয়ার কথা, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এটা দালালদের মাধ্যমে এখন রাজনৈতিক দাদাদের কব্জায় চলে গেছে । কথায় কথায় জানলাম যে তাঁর একটা স্টেন্ট ও বসেছে নিখরচায়। ঔৎসুক্য না চেপে জিজ্ঞেস করেই বসলাম যে পি জি হাসপাতালে দু দুবার বিনা খরচে চিকিৎসা করালেন , কোন নেতাকে ধরে ? উনি তো পরিষ্কার জানালেন যে কোন নেতাকে না ধরেই আউটডোরে দেখিয়ে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়েছে যদিও এখনও আমার সন্দেহটা এখনও যায়নি। আবার জিজ্ঞেস করলাম যে স্পাইন্যাল কর্ডের অপারেশনের পরে গাড়ি চালাচ্ছেন, কোন অসুবিধা হচ্ছে না? উনি বললেন, গাড়ি না চালালে সংসার কি করে চালাবেন। বাড়িতে কে কে আছেন জিজ্ঞেস করায় উনি জানালেন যে তাঁরা স্বামী , স্ত্রী এবং তাঁদের একমাত্র ছেলে।
" ছেলে কি করে?"
উত্তর শুনে মাথা একদম ঘুরে গেল। ছেলে অ্যাস্ট্রোফিজিক্সে এম এস সি করে পি এইচ ডি করছে। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র সৌহার্দ্য, সদানন্দ সরকারের একমাত্র সন্তান, ডক্টরেট করে তার বাবাকে গাড়ি চালানো থেকে বিরত করবে এই প্রার্থনাই ভগবানের কাছে করি। আরও অনেক সৌহার্দ্যর সমাহার আমাদের দেশে আসুক এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাক এই আশা নিয়েই বেঁচে থাকি।
No comments:
Post a Comment