তিরুপতিতে সবসময়ই ভিড় । ভারতের বিভিন্ন অংশ থেকে দলে দলে লোক আসে বাবা ভেঙ্কটেশের দর্শনে পুণ্যলাভের আশায়। আর আসবে নাই বা কেন। কত লোক কতরকম অনৈতিক কাজ করে পাপস্খালনের উদ্দেশ্যে মন্দিরে বহুমূল্য কিছু জিনিস বাবার চরণে সমর্পণ করে (একরকম ঘুষ দিয়ে) আত্মপ্রসাদ লাভ করে কিন্তু এটা বুঝতে পারেনা যে ঘুষ তুমি যতই দাও চিত্রগুপ্তের খাতায় তা উঠে গেছে এবং ঠিক সময়ে তা প্রকাশিত হবে। অনেকেই এতে বিশ্বাস করে বলে পাপের সংখ্যা কিছুটা হলেও কমে। কিন্তু বর্তমান যুগে সবাই বিনধাস চলে এবং ফলস্বরূপ ছোট বড় কুচোকাচা লোক প্রায় সবাই খুব বেশিমাত্রায় পাপ করে। এরই মধ্যে ও দেখে একটা জায়গায় খুব জটলা আর একটা মেয়ে তারস্বরে চিৎকার করে মানুষের সাহায্য চাইছে আর যথারীতি সাধারণ মানুষ সাহায্য করার বদলে আনন্দ উপভোগ করছে যেমনটি হয়েছিল কুরুপাণ্ডবের দ্যুতসভায় দ্রৌপদীর সঙ্গে। সেইদিন ভীষ্ম, দ্রোণ, কৃপাচার্য, ধৃতরাষ্ট্র ও বিদুর যেমন মৌন ছিলেন তেমনই আজকের জনতাও ছিল মৌন। কিন্তু পাঞ্চালির আর্তনাদে যেমন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, আজও তেমন তিনি একদল কুকুরের রূপ ধরে মেয়েটির সাহায্যে এগিয়ে এলেন। ঘেউ, ঘেউ করে সারমেয় দলের সমবেত স্বর এগিয়ে আসতে লাগল ঐ মেয়েটির দিকে এবং তাতে হেনস্থাকারীরা এদিকে ওদিকে পালাতে লাগল। ক্রমশ ভিড় একটু পাতলা হয়ে এলে একটি কুকুর মেয়েটির খুব কাছে এসে শুঁকে তার অসুস্থতার গুরুত্ব বোঝার চেষ্টা করল এবং তার দলের অন্যদের সেখানে রেখে দৌড় দিল এবং একটি ছোট্ট হাসপাতালের সামনে ঘেউ ঘেউ করে ডাকতে শুরু করল এবং নাচতে থাকল। ডাক্তার বা নার্সের মধ্যেও তো অনেক সহৃদয় লোক থাকেন তাঁদেরই মধ্যে একজন নার্স কুকুরটি কি বলতে চাইছে বোঝার জন্য বাইরে এলেন এবং কুকুরটিও তাঁকে দেখে আরও জোরে ঘেউ ঘেউ করে নাচতে থাকল এবং কিছু বলার চেষ্টা করতে থাকল নিজের ভাষায়। ভদ্রমহিলা কুকুরটির কাছে আসতেই সে লেজ নাড়িয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে ডাকতে থাকল এবং তাঁকে অনুসরণ করার অনুরোধ করতে থাকল এবং সেই ভদ্রমহিলাও তাকে অনুসরণ করতে থাকলেন। মেয়েটির ঐ অবস্থা দেখে তিনি তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন এবং সুস্থ করে তোলেন। সুস্থ হবার পরেই মেয়েটি বাবা ভেঙ্কটেশের দর্শনে জেদ করায় কুকুরটিও তাঁর পিছু পিছু চলতে থাকে এবং খানিকটা যাওয়ার পরেই অন্য একদল কুকুর তাদের এলাকায় ঢোকার জন্য শাসাতে থাকে। আর কি করা যাবে, অতএব ফিরে চল নিজের এলাকায় কিন্তু ততক্ষণে সেই মেয়েটি সম্পূর্ণ সুস্থ এবং তাকে হেনস্থাকারীদের হাত থেকে উদ্ধার করার জন্য তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাল। বন্ধুর গল্পশেষে মনে হলো যে আজও তিনি আছেন এবং আর্তের ডাকে সাড়া দেন।
Saturday, 2 December 2023
গল্প হলেও সত্যি ----"ঘেউ"
সকাল বেলায় মোবাইলে বার্তালাপে আমার বন্ধুপ্রতিম ও সহকর্মী তপন বিশ্বাস তার নিজের জীবনের এক দারুণ অভিজ্ঞতা জানালো। কুশল বিনিময়ের প্রাথমিক পর্যায়ের শেষে জানতে পারলাম তার এই বিশেষ অভিজ্ঞতার কথা। ও তখন তিরুপতিতে কর্মরত। তিরুপতির কথা উঠলেই চোখ দুটো কেমন নিজের থেকেই বন্ধ হয়ে যায় আর বিড়বিড় করে বাবা ভেঙ্কটেশের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন হয়, আবার কেউ বা হাত জোড় করে কপালে ঠেকিয়ে নেয়। আমি এই ব্যাপারে আজকের রাজনীতিবিদদের মতন দলবদলু। বিপদে পড়লে ভগবানের উদ্দেশ্যে প্রণাম আর আনন্দে ভাসা অবস্থায় একদম ভুলে যাবার মাস্টার। তা এইরকম এক দিনে ও ব্রাঞ্চের দিকে চলেছে। ও বরাবরই ব্যাঙ্কের কাজকর্ম শুরু হওয়ার অনেক আগেই পৌঁছে যেত যাতে গ্রাহকদের কোনরকম অসুবিধার মধ্যে না পড়তে হয়। অফিস থেকে কখনোই ও বেশি দূরে থাকতো না যাতে পায়ে হেঁটেই অফিস পৌঁছানো যায়। যারা মানুষকে ভালবাসে তারা প্রকৃতির রূপ ও তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করে। ঐ পথচলাতেই নানাধরণের ঘটনা তার স্মৃতির মণিকোঠায় জমা হয় এবং একান্ত আলাপচারীতায় বেরিয়ে আসে মাঝে মাঝে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment