Friday, 15 November 2024

গুরু নানক জন্ম জয়ন্তী --স্মৃতি রোমন্থন

শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা শ্রী গুরুনানকজীর আজ জন্মদিন। তাঁর  জন্মদিন নিয়ে একটু দ্বিমত রয়েছে । কেউ কেউ  বলেন যে তাঁর জন্ম হয়েছিল  পাকিস্তানের  নানকানা সাহেবের  তালওয়ান্দি  গ্রামে। কিন্তু ভাইবালা জন্মসখী এবং  অন্যান্য বিশিষ্ট শিখ ধর্মগ্রন্থের লেখকদের পরিভাষায় কার্তিকমাসের পূর্ণিমার দিন  নানকজীর জন্ম হয়েছিল  এবং  সেটাই সরকারের মান্যতা পেয়েছে এবং  সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ  মহা সমারোহে এই দিনটি পালন করেন এবং  তাঁর বাণী প্রচার করেন সঙ্গীত ও লঙ্গরখানায় বহু লোককে খাওয়ানোর মাধ্যমে ।
আজ ১৫ইনভেম্বর ২০২৪ শ্রী নানকজীর জন্মদিন । কিন্তু ৫২ বছর আগে ১৯৭২ সালে কার্তিকপূর্ণিমা ছিল ২০ই নভেম্বর, সোমবার সারা ভারতবর্ষে স্বীকৃত ছুটির দিন  এবং   আমার  বন্ধুবান্ধবেরা ঠিক করল যে শনিবার তাড়াতাড়ি কাজ সেরে লালগোলা প্যাসেঞ্জারে  বহরমপুর  যাবে এবং সেখান থেকে মুর্শিদাবাদ বেড়াতে যাবে রবিবার ও ফিরে আসা সোমবার অর্থাৎ গুরু নানকজীর জন্মদিনে । কোথায়  থাকা হবে? ঠিক হলো তারা সবাই উঠবে আমাদের বাড়ি। শ্যামল দা যেতে পারলেন না, অমরনাথ মিত্র মুস্তাফি,  হরিশচন্দ্র, শিবু, সুজিত, জয়ন্ত, চৌধুরি, শিবুর এক বন্ধু দীপু ও মেয়েদের মধ্যে ছায়াদি,  মাধবিকা ও কনিকা। তখন বহরমপুরে বেশ ঠাণ্ডা পড়তে শুরু করেছে,অন্তত কলকাতার  তুলনায়  তো যথেষ্ট  ঠাণ্ডা । আমার ঘরে দাদুর দুটো জম্পেশ খাটে ছায়াদিদের শোয়ার ব্যবস্থা হলো, মুস্তাফি সাহেবের ব্যবস্থা হল ঐ বাইরের বিশাল ঘরে আর সুজিত, শিবু , জয়ন্ত, চৌধুরী,  হরিশচন্দ্র ও দীপুদের সদ্য কেনা লালুদার বাড়িতে। সবার জন্য  লেপ, তোষক ও মশারির ব্যবস্থা করতে হয়েছে নাহলে যত ই নাক মুখ চাপা দিয়ে  লেপ মুড়ি দিয়ে  শোওয়া যাক না কেন মশা তাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। ওরা সবাই এসেছে এসপ্ল্যানেড থেকে বাসে। আমি একদিন আগে ছুটি নিয়ে  এসে গেছি। দাদাও এসে গেছে বিরাট মাছ নিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে থাকা কুতুবপুর  থেকে। হৈ হৈ ব্যাপার আর কি। বাবা ও আমি সাইকেল  নিয়ে  বাস স্ট্যাণ্ডে ওদের  নিয়ে  আসতে গিয়েছি। লালু দা, সেজদি এবং  আজিমগঞ্জ থেকে  বড়পিসিমাও এসে গেছে ওদের  আদর আপ্যায়নে যাতে কোন ত্রুটি  না হয়। রিক্সা সব বলাই ছিল। ওরা  আলো ঝলমলে জজসাহেবের বাড়িতে এসে পৌঁছানো মাত্র ই  গরমজলে হাত পা ধুয়ে বসে পড়ল বাইরের ঘরে। গরম চা ও  হালকা জলখাবার খেয়ে  বেশ খানিকক্ষণ  আলাপ পরিচয়ে কেটে গেল।   আমাদের  বাড়ির ভেতরের বারান্দায় আসন পেতে রাতের খাওয়া দাওয়া  হলো। মুস্তাফি সাহেব জমিদার বাড়ির ছেলে এবং যথেষ্ট  ভোজন রসিক, বড়সড় মাছের মাথাকে কি করে খেতে হয়, তা দেখিয়ে দিলেন । মুস্তাফি সাহেব বললেন উনি একা বাইরের ঘরে থাকবেন না, তিনিও লালুদার বাড়িতেই থাকবেন । ওখানে তিনটে বেশ বড় ঘর ছিল , ভালভাবেই  সেখানে সবাই ঠিকঠাক ভাবেই ম্যানেজ হয়ে গেল। লালুদার  বাড়িটা ছিল  আমাদের  বাড়ির  তিনটে বাড়ি পরে। সকাল বেলায় গরম চা নিয়ে দাদা, আমি ও লালুদা যখন এলাম তখন দেখি অনেকে ফ্রেশ হয়ে গেলেও হরিশচন্দ্র এবং  মুস্তাফি সাহেব  তখনও  বিছানা ছেড়ে ওঠেন নি। শিবু সুজিতের পিছনে লাগছে এবং  হাসি ঠাট্টার মধ্যে দিয়ে  এবাড়ির আনন্দের  রেশ  ও বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছে।  যাই হোক, এক প্রস্থ চায়ের পর  সবাই স্নান সেরে আমাদের  বাড়িতে এসে গেছে এবং  লুচি, তরকারি, বেগুনভাজা এবং  মিষ্টি সহযোগে জলখাবার সেরে চা খেয়ে একটা মিনিবাসে সবাই রওনা দিলাম  লালবাগের  পথে। একটু বেলাই হয়ে গেল হাজারদুয়ারি  দেখে ফিরে আসায় কিন্তু খিদেটা বেশ চাগিয়ে উঠেছে ইতিমধ্যে । জবরদস্ত খাওয়া দাওয়ার পর দরকার  একটু গা গড়িয়ে নেওয়ার তবে কেউ আর লালুদার বাড়িতে  গেলনা, বাইরের  ঘরেই সবাই মিলে গল্পগুজব করে কাটিয়ে দিল। সন্ধের সময়ে মোহন হাউসে সবাই মিলে সিনেমা দেখতে যাওয়া এবং রাতে মাংস ভাত ও বহরমপুরের বিখ্যাত ছানাবড়া।  অনেক রাত অবধি গল্প গুজব করে রাতে গভীর ঘুম। এদিন আর মুস্তাফি সাহেব লালুদার বাড়িতে গেলেননা, বাইরের ঘরেই শুয়ে পড়লেন। সকাল  হতেই সব চা জলখাবারের ব্যাপার  কিন্তু মুস্তাফি সাহেব বললেন বাসি মাংস  দিয়ে মুড়ি খাবেন। তাই হলো, অন্যরা লুচি তরকারি আর মিষ্টি খেল। দুপুর  বেলায় খাওয়া  মাছের ঝোল,  ভাত, চাটনি দই ও মিষ্টিতে সারা হলো তারপর রিক্সায় চড়ে স্টেশনে লালগোলা প্যাসেঞ্জারে শিয়ালদহে ফিরে আসা । দুদিনের ঠাসা প্রোগ্রাম,  এক ঝাঁক পায়রা ঘুটুর ঘুঁ, ঘুটুর ঘুঁ করতে করতে সবাই  ফিরে এল।
ইতিমধ্যে এদের মধ্যে অনেকেই চলে গেছেন না ফেরার দেশে । শ্যামল দা, মুস্তাফি সাহেব,  সুজিত,  চৌধুরী , দীপু আগেই চলে গেছেন । সেই লিস্টে  নবতম সংযোজন ছায়াদি । হরিশচন্দ্র কোথায় আছেন জানিনা। 
আজ এতদিন  বাদে এই লেখার উদ্দেশ্য স্মৃতিটাকে একটু ঝালিয়ে নেওয়া এবং যারা অবশিষ্ট রয়েছে তাদের হৃদয়ে পুরনো দিনের  একটু বিদ্যুতের ঝলক আনা।

Saturday, 9 November 2024

"বাসুদেব"

বাসুদেব থাকতো সুবীরবাবুর  বাড়িতে। তাকে সেন্ট্রাল স্টেট  ওয়েলফেয়ার  হোম থেকে সুবীরবাবু এনেছিলেন তাঁর বন্ধু ঐ হোমের সুপারিনটেনডেন্ট অসীমবাবুর অনুরোধে। অসীমবাবু ছিলেন অকৃতদার  এবং  খুবই  আমুদে। মানুষটি ছোটখাটো হলেও ছিলেন একজন খুব ভাল বন্দুকবাজ শিকারী। ছুটির দিনে  বেড়িয়ে পড়তেন শিকারের খোঁজে এই জঙ্গলে বা ঐদিকের বিলে  এবং সঙ্গী থাকতেন আদি অকৃত্রিম বন্ধু সুবীরবাবু। কোন সময় রাতে দুই বন্ধু ফিরে এলেন কোন  বনমুরগী বা হাঁস শিকার করে এবং সুবীরবাবুর স্ত্রীকে বললেন, " বৌঠান, বেশ ঝাল ঝাল করে মাংস রাঁধতে হবে, ভাল করে মশলা বাঁটুন; আর ইতিমধ্যে আমরা এটার ছাল চামড়া ছাড়িয়ে পরিষ্কার  করছি। তখনকার দিনে  না ছিল মিক্সি, না ছিল ফ্রিজ বা প্রেশার কুকার । শিল নোড়ায় বাঁটা মশলা ও কড়াইয়ে ঘুচ ঘুচ করে সিদ্ধ  হওয়া মাংসের স্বাদ ই হতো আলাদা। বাসুদেব ছিল  অসীমবাবুর হোম থেকে সদ্য বেড়িয়ে আসা ছেলে। সরকারী নিয়ম অনুযায়ী হোমে একটা বয়সের পরে আর থাকা যায়না । সুতরাং নিয়ম লঙ্ঘন করে অসীমবাবুর পক্ষে বাসুদেবকে ওখানে  রাখা সম্ভব ছিলনা। হোমে থাকাকালীন  ছেলেদের  বিভিন্ন বিষয়ে ট্রেনিং  দেওয়া হয়। যাতে পরবর্তী জীবনে সে নিজেই জীবিকা অর্জনে সক্ষম হয়। কিন্তু চাকরি করব বললেই তো আর চাকরি পাওয়া যায়না। সবসময়ই চাকরির আকাল ছিল, এখনও  আছে এবং  ভবিষ্যতেও থাকবে। যতদিন ও একটা ঠিকমতন চাকরি না‌ পায় ততদিন সুবীরবাবুর  বাড়িতে বাসুদেব  থাকবে এবং  ফাইফরমাশ খাটবে ও খাওয়া দাওয়ার অভাব ওর হবে না। ইতিমধ্যে সুবীরবাবুর ছোট ছেলেটা বছর দুয়েক হয়েছে এবং  তার দেখাশোনা করার  জন্য একটা লোকের  দরকার  ছিল  যেটা বাসুদেব মিটিয়ে দিত। দুজনের  দুজনকেই দরকার  ছিল, অতএব বাসুদেবের  ঠাঁই  হলো সুবীরবাবুর বাড়িতে ।

অসীমবাবুর ব্যবহারের জন্য  উনি সকলের খুব প্রিয় ছিলেন কিন্তু  বন্ধু বলতে সেই সুবীরবাবু এবং  ঐ একটি বাড়ি ছাড়া উনি আর কোথাও যেতেন না। তাঁর হোমটা ছিল স্টেশনের কাছে যা সুবীরবাবুর বাড়ি থেকে  প্রায় আড়াই মাইলদূরে। বেশীরভাগ দিন ই অসীমবাবুর রাতের খাওয়া হতো সুবীরবাবুর বাড়িতে এবং  তারপর সাইকেল চালিয়ে হোমে ফিরে যাওয়া।  একদিন কথায় কথায় বাসুদেবের প্রসঙ্গ উঠল। উনি জানালেন যে একদিন  উনি সকাল বেলায়  উঠে দেখেন দরজার বাইরে  কাঁথায় মোড়ানো একটা  ছোট্ট শিশু । মাঝে মাঝেই  কেঁদে  উঠছে । একে অকৃতদার মানুষ,তার উপর ঐ শহরে কোন  আত্মীয় স্বজন নেই । বাচ্চাটাকে নিয়ে কি করবেন  ভেবেই পাচ্ছিলেন না। অগতির গতি সুবীরবাবু । একটা রিক্সা করে বাচ্চাটাকে নিয়ে সোজা তাঁর বাড়ি। বললেন বৌঠান একটা ব্যবস্থা করতে হবে এই বাচ্চাটার। অনেক ভেবেচিন্তে সুবীরবাবুর  স্ত্রী একটা উপায় বের করলেন । ওঁদের  বাড়িতে কাজ করা শিবানীর কোন সন্তানাদি ছিলনা এবং  এখানে সেখানে  কোন পীঢ় বাবা বা সন্ন্যাসীর  পায়ে মাথা ঠুঁকতো এবং  মানত করতো একটা সন্তানের আশায়। অভাবের সংসার,  একটা বাচ্চাকে মানুষ করা খুব  সহজ কথা নয়,তবুও শিবানীর  মনে হলো এটা ভগবানের দান এবং বাচ্চাটিকে নিতে রাজি হলো। সুবীরবাবুর স্ত্রী শিবানীর  মাইনে একটু বাড়িয়ে দেবেন বলে একটু আশ্বস্ত করলেন। শিবানীর  আদরে মানুষ  হওয়া বাসুদেব একটু বড়সড় হতেই ঠাঁই  হলো সরকারী  হোমে এবং  তারপর আবার  সেই  সুবীরবাবুর বাড়ি।
বাসুদেবের মা কিংবা বাবার মধ্যে কেউ একজন নেপালি ছিল কারণ বাসুদেবের চেহারায় ছিল নেপালিদের মতন হাবভাব। যাই হোক হোমের খাতায় তার পদবী হলো মণ্ডল। বাসুদেব কয়েকবছর হোমে থাকার সুবাদে কাঠের কাজে  হাত পোক্ত করেছে এবং কাজের অপেক্ষা করছে । বাসুদেব  সুবীরবাবুর ছোট  ছেলেটার যাবতীয় বায়না মেটায় যেখানে  কোন পয়সা খরচ হয়না। খুবই ভাল বাসে  ছোট বাচ্চা  সুমনকে। তাকে নিয়ে  কোলে করে ঘোরা, তার সঙ্গে খেলা করা, স্কুলে নিয়ে যাওয়া আসা সবকিছুই আব্দার বাসুদেবের কাছে। সুবীরবাবুর  ব্যবসায় ইদানিং একটু মন্দা চলায় টাকা পয়সা  নিয়ে একটু টানাটানি চলছে।বাসুদেব এটা বুঝতে পারছে কিন্তু কোথায়  যাবে সে এবং একটা চাকরি যোগাড় না করতে পারা পর্যন্ত্য, তাকে সুবীরবাবুর বাড়িতে ই থাকতে হবে। তার পালিত মা শিবানীও বাচ্চা হতে গিয়ে দেহ রক্ষা করেছে আর শিবানীর  স্বামীও মদ খেয়ে লিভারের বারটা বাজিয়ে মারা গেছে। সুতরাং  বাসুদেবের এই বাড়ি ছাড়া আর কোনও  জায়গা নেই। দিন দিন সুবীরবাবুর আর্থিক অবস্থা শোচনীয়  হয়ে পড়ছে কিন্তু তিনি একজন প্রকৃত ভদ্রলোক,  হাজার কষ্টের মধ্যেও  বাসুদেবকে  চলে যেতে  বলছেন না। ব্যবসায় যারা ধার বাকিতে জিনিস পত্র নিয়েছিল তারাও ঠিকমতো পেমেন্ট না করায় তাঁকে ও ধার করতে হয়েছে  এবং সেই ধারের মাত্রা দিন দিন বেড়ে এক অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। মাঝে মাঝেই  ঋণদাতারা এসে অপমান করছে যেটা বাসুদেবের একদম সহ্য হচ্ছে না। অসীমবাবু ঐ শহর  থেকে  বদলি হয়ে গেছেন। তিনি থাকলেও হয়তো খানিকটা সুরাহা হতো । যাই হোক বাসুদেব  একদিন  ঘরের  সব কাজ সেরে  পল্টনবাবুর কাঠের  গোলায়  দেখা করল এবং  একটা কাজ চাইল। কোথায়  থাকো জিজ্ঞেস করায় জানালো যে সুবীরবাবুর বাড়িতে  থাকে এবং  একটা চাকরির খুব  দরকার । সুবীরবাবুদের একটা সুনাম ছিল  ভদ্রলোক হিসেবে এবং  কানাঘুষোয়  জানতে পেরেছিলেন তাঁর  দুর্দশার কথা। সুতরাং  তিনি মনে মনে স্থির করেছিলেন  যে বাসুদেবকে একটা কাজ দেবেন ।  কি কি কাজ করতে পার জিজ্ঞেশ করায় বাসুদেব জানালো যে সে হোমে কাঠের  কাজ করতে শিখেছিল এবং  সুযোগ পেলে সে ঐ কাজ ভালভাবেই করতে পারবে। পল্টন বাবু বিশ্বাস  করতেন যে নেপালিরা খুব  বিশ্বস্ত হয়। তিনি ভাবছিলেন  যে কাঠের  গোলায়  তাকে দারোয়ানের কাজে লাগাবেন । দুদিন বাদে তাকে দেখা করতে বললেন। বাসুদেব তো ভগবানের কাছে  প্রার্থনা করতে  লাগল যাতে চাকরিটা সে পায়। বাড়ি ফিরে আসতে বেশ  দেরী  হয়েছে  আর মা( সুবীরবাবুর  স্ত্রীকে সে মা বলে ডাকতো) ভাতের থালা  নিয়ে  বসে আছে, অপেক্ষা করছে তার জন্য। বাসুদেবের  চোখে জল এসে গেল মাকে না খেয়ে বসে থাকতে দেখে। 
 "কোথায়  ছিলি এতক্ষণ? "
কিছু না বলে হাত পা ধুয়ে বসে পড়ল রান্নাঘরে আসন পেতে।
মা জিজ্ঞেস করল আবার কিন্তু কোন উত্তর দিতে পারল না সে , কেবল চোখ  দিয়ে জল বেরোতে থাকল।
মা বলল যে খেয়ে নে বাবা, খাওয়ার সময় চোখের জল ফেলতে নেই।
মায়ের মুখের দিকে  তাকাতে পারছে না সে , কেমন একটা অপরাধ বোধে তার মনটা ভার হয়ে আছে। ভাবছে এত কষ্টের মধ্যেও  মা বা বাবা কেউ কিছু বলছেনা তাকে। যাই হোক,  তাকে এই বাড়ির জন্য কিছু করতেই হবে কিন্তু যতক্ষণ কিছু না হয় ততক্ষণ সে কিছুই  বলবে না। নিজের  বাবা মাকে সে দেখেনি। শিবানী মায়ের  কাছে ছোট অবস্থায়  ছিল, পেয়েছে তাদের  ভালবাসা, তারপর দেবতা তুল্য মানুষ অসীমবাবুর ভালবাসা ও শাসন এবং  সবশেষে এই বাবা মা আর ছোট ভাই যাকে সে বড়দাদার মতো মানুষ  করেছে আর সুবীরবাবুর মেয়েদের  দিদির মতন দেখেছে। আর কি চাই ভগবানের কাছে?  সব  তো তিনি দিয়েছেন। 
দুদিন  পরে বাসুদেব দেখা করেছে পল্টন বাবুর সঙ্গে। কাঠের  গোলায়  তাকে থাকতে হবে রাতে। বাসুদেব  তাঁকে অনুরোধ  করল যে শহরে তাকে কারখানায় রাখার  জন্য কারণ রাতে সেই কাঠগোলায় থাকতে হলে সুবীরবাবুর বাড়িতে  সে কখন  কাজ করবে?  মন তার ভীষণ খারাপ । যারা তাকে এতদিন  আশ্রয় দিয়েছে , দুর্দিনের মধ্যে ও তার খাওয়া পড়া নিয়ে  কিছু বলেন নি,  তাদের  এই বিপদের দিনে সে ছেড়ে চলে যাবে এটা সে কিছুতেই মন থেকে  মেনে নিতে  পারছে না। বাড়ি ফিরে  এল সে। মা তো বুঝতে পারছেন যে কিছু একটা হয়েছে বাসুদেবের কিন্তু কি হয়েছে সেটা বুঝতে  পারছেন না। শেষে মায়ের  কাছে  কাঁদতে কাঁদতে সত্যি কি হয়েছে সেটা বলল। সুবীরবাবু পাশ থেকে  সব শুনতে পেয়েছেন এবং  দুঃখ  পাওয়া সত্ত্বেও তাকে উৎসাহিত করলেন কাজটা নেওয়ার জন্য। পরদিনই বাসুদেব নিজের  কিছু জামা টা পড় ও খানিকটা চাল ডাল ও কিছু দরকারি জিনিস  নিয়ে চলে গেল  কাজে যোগ দিতে, বেশীরভাগ জিনিস ই রইল পড়ে। যাবার আগে বাবা মাকে প্রণাম করে ভাইকে কাঁধে তুলে নাচানাচি করে জলভরা চোখে চলে গেল পল্টনবাবুর  কাঠগোলায় । টালির ছাউনি কাঠগোলায় । বাঁশের বেড়া দিয়ে দরজা, ঐদিকে মেসিনগুলো আর একদিকের কোণে একটা চাটাই,  সতরঞ্চি, মশারি ও চাদর। দিনের  বেলায়  মেশিন চলত, অনেক লোক কাজ করছে, গমগম করছে জায়গাটা কিন্তু সন্ধে নামতেই অন্য সব লোক জন চলে গেল কর থাকল ও একা। জঙ্গলের মধ্যেই মেশিন ঘরের দিকে ইলেকট্রিক বালব জ্বলছে আর নিজে যেখানে  থাকবে সেখানেও একটা টিমটিমে বালব জ্বলছে আর আছে এক কেরোসিনের লন্ঠন যেটা কারেন্ট চলে গেলে কাজে লাগে। বেশীরভাগ সময়েই রাতে নাকি কারেন্ট থাকেনা আর সেই কারণেই নাকি লণ্ঠনের উপযোগিতা অনিবার্য। এই জঙ্গলের মাঝে একা থাকা বেশ কঠিন  ব্যাপার । জন্তু জানোয়ার ছাড়াও  বিষাক্ত সাপ খোপ তো থাকতেই পারে। কিন্তু বাসুদেবের  কোন ভয়ডর বলে কোন জিনিস  নেই । নিজের শরীরটা বেশ শক্তপোক্ত এবং  সাহস ও ছিল অদম্য। একটা বেশ শক্ত বাঁশের  লাঠি আর আছে একটা ছোরা আত্মরক্ষার জন্য। সেদিন ই প্রথম রাত,কিছুতেই ঘুম আসছেনা , কেবল ই মায়ের, বাবার ও ছোট ভাইয়ের  কথা ভাবছে। কখন যে চোখের পাতা ভারী হয়ে লেগে এসেছে খেয়াল  নেই। রোদ বাঁশের বেড়ার ফাঁক দিয়ে মুখের ওপর পড়তে ঘুম ভাঙল। একটু দূরেই একটা ছোট ঘর চোখে পড়ল, সম্ভবত সেটাই বাথরুম । একটা ছোট টিউব ওয়েল রয়েছে  তার ই পাশে। প্রাতঃকৃত্য সেরে স্নান সেরে উনুনে কাঠকুটো জ্বেলে সকালের খাবার  তৈরী করে ফেলল সে। একবার  মেশিন চালু হলে আর অন্য দিকে  তাকাবার সময় পাবে না সে। আগে যে লোকটা ছিল সে বাড়ি গেছিল কয়েকদিনের জন্য কিন্তু  তার পরে সে আর আসে নি । আদৌ আসবে কিনা তাও  জানা নেই । সুতরাং, পল্টনবাবুকে একটা লোক রাখতেই হতো। উনি ভাবছিলেন ও সেইরকম ই আর তারই মাঝে বাসুদেবের আগমন এবং  তার চাকরি । কাঠগোলায়  একটা পুরনো ঝরঝরে সাইকেল আছে।বাসুদেব দেখে নিল যে ওটাকে কি ভাবে কাজে লাগানো  যায় । সাইকেল টাকে ঝেড়ে মুছে রাখল কিন্তু চাকায় হাওয়া নেই।  বেশ খানিকটা দূরে  একটা সাইকেল রিক্সা সারানোর দোকান  আছে, যেখান থেকে ও সাইকেল টা সারিয়ে নিল। সারাদিন কাজ করে পরেরদিন সাইকেল  নিয়ে  সাতসকালে বাবা মা ভাইয়ের  সঙ্গে দেখা করতে আসা। অত সকালে মা বাসুদেবকে দেখেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলেন কিন্তু পরক্ষণেই ঘোর দুশ্চিন্তায় মন ভরে গেল । হ্যাঁ রে কেমন আছিস বাবা? একটা দিন তোকে দেখিনি  কিন্তু মনে হচ্ছে  কতদিন তোকে দেখিনি ।সুবীরবাবু ও ইতিমধ্যে হাজির,  ভাই ও এসেছে দাদাকে দেখতে। মা চট করে একটু চায়ের জল চাপিয়ে দিয়ে কয়েকটা রুটি করে দিয়েছে। চা ,জলখাবার  খেয়ে তাড়াতাড়ি সাইকেল নিয়ে  কাঠগোলায়  ফিরে আসা । দৈবাত কেউ এসে যদি পড়ে এবং  কাঠগোলায় ঢুকতে না পারে তাহলে তো ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটে যাবে এবং চাকরিটাও চলে যাবার সম্ভাবনা থাকতে পারে। যাই হোক,  কোন বিপত্তি ঘটেনি। কোন লোক আসার আগেই  সে ফিরে এসেছে এবং  কাজ ও সব ঠিকঠাক হয়ে গেছে । প্রায় রোজই বাসুদেব  সাইকেল নিয়ে চলে আসে এবং  চা ও জলখাবার খেয়ে কাজে চলে যায়। মাস শেষ হলো। আজ মাইনে দেবেন পল্টনবাবু। সবাই খুব  খুশী র মেজাজে। টাকা পেয়ে সবাই খুব খুশী  কিন্তু বাসুদেবের আনন্দের  কোন সীমা নেই কারণ এটাই তার প্রথম রোজগার । সারা রাত ঘুমাতে পারেনি। ভোরের আলো ফুটতেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে সে। মা অত সকালে  বাসুদেবকে দেখে চমকে উঠেছেন। হ্যাঁ রে শরীর ঠিক আছে তো রে? 
হ্যাঁ মা, ঠিক আছি, ভাল ই আছি। বলে মাকে প্রণাম  করে প্যান্টের পকেট থেকে  মাইনের সব টাকা মায়ের  পায়ের কাছে  রেখে দিল। মায়ের  চোখে জল, উনি কিছুতেই নেবেন না।সুবীরবাবু ও এসে পড়েছেন। তাকেও প্রণাম করল বাসুদেব । ভাই অকাতরে ঘুমোচ্ছে।  বাসুদেব কাঁদছে আর বলছে মা তুমি যদি টাকা না নাও তাহলে আমি বুঝব যে তোমরা আমাকে ছেলের মতো ভালবাসনি। আজকে আমি যেখানেই  থাকি না কেন  তা তোমার   বাবার এবং কাকাবাবুর জন্য। আমাকে তোমরা দূরে সরিয়ে  দিওনা।  যথারীতি চা ও জলখাবার  খেয়ে কাঠগোলার দিকে রওনা দিল। দেখতে দেখতে তিনটে মাস কেটে গেছে বাসুদেবের  ঐ কাঠগোলায় । আর এদিকে ফিরে  এসেছে  সেই আগের  লোক যে বাড়ি গিয়ে অসুস্থ  হয়ে পড়েছিল। পল্টন বাবু একটু ধন্দের মধ্যে পড়ে গেছেন । পুরনো লোকটাকে রাখতে গেলে বাসুদেবকে  ছাড়িয়ে দিতে হয়। আর বাসুদেব এই তিন মাস যেভাবে কাজ করেছে তাকেও হাত ছাড়া করতে চাইছেন না। সমাধান  বেরোল সবচেয়ে  পুরনো  মিস্ত্রীর পরামর্শে। বহাল হলো পুরনো লোক কাঠগোলায় আর বাসুদেবের স্থান হলো ফার্নিচার দোকান  সংলগ্ন কারখানায় আর সঙ্গে বাড়ল মাইনেও। 
বাসুদেব  এখন সুবীরবাবুর বাড়িতে মা ও ভাইয়ের  সঙ্গে। সুবীরবাবুর কাছে যারা ধারে মাল নিয়েছিল  তারাও অনেকে টাকা ফেরত দেওয়ায়  অবস্থার অনেক  উন্নতি হয়েছে । সৎ পথে থাকলে সাময়িক কষ্ট হলেও ভগবান তাদের  শান্তি দেন ।

Wednesday, 6 November 2024

বন্ধন

বন্ধন কি, কেন আসে, কোথা থেকে আসে এইসব নানাধরণের  চিন্তা য় মাথাটা কেমন ভার হয়ে গেল । বন্ধন তো ভালবাসার ই আর একটা রূপ। রক্তের সম্পর্ক থাকতেই হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই । অনেক সময়ই দেখা যায়  যে সম্পূর্ণ একজন অজানা ব্যক্তির প্রতি তীব্র আকর্ষণ আবার  কোন রক্তের সম্পর্কের প্রতি  একেবারেই ভ্রূক্ষেপহীন। সব সময় যে কোন ব্যক্তি ই হতে হবে এমন কোন  কথা নেই, কোন প্রাণীর প্রতিও হতে পারে। সুতরাং,  সংক্ষেপে বলা যায় যে ভালবাসা না থাকলে বন্ধন আসতে পারেনা। ডাক্তারি শাস্ত্রে বলে অক্সিটোসিন ভালবাসার উৎস। এটা না থাকলে ভালবাসা ভুলেও আসবে না। সুতরাং যে সংসারে একটু খুটোখুটি চলছে সেখানে ডাক্তার বাবুরা একবার ভেবে দেখতে পারেন  যে বিবদমান  ব্যক্তিদের মধ্যে কোনভাবে এটা সঞ্চার করা যায়না কিনা।
অনেকদিন ধরেই নাতি নাতনিরা আবদার করছে ওদের সঙ্গে  কিছুদিন  কাটিয়ে যাওয়ার কিন্তু নানা কারণে  তা আর হয়ে উঠছে না। এবার  কিন্তু আর ছাড় পাওয়া গেলনা। ছেলে টিকিট কেটে পাঠিয়ে দিয়েছে,  আর বারবার তাদের অনুরোধ  ফেলাও যাচ্ছে না। ভাইফোঁটার দিন  সন্ধের ফ্লাইটে রওনা  দেওয়া হলো। দুজনের ই হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা হয়েছে। এতে সুবিধা ও আছে আবার  অসুবিধা ও রয়েছে । মালপত্রের সঙ্গে নিজেদেরকেও একটা লাগেজের( মাল বলতে একটু লজ্জ্বা লাগল) মতন মনে হতে লাগল। দিব্যি হেঁটে যাওয়া যায় তবে অনেকটা  রাস্তা  চলতে হবে।এ ছাড়াও রয়েছে  চেক ইন করা, সিকিওরিটি চেক করার সময় মোবাইল,  মানি ব্যাগ মায় কোমরের বেল্টটা পর্যন্ত খুলে এক্সরে মেশিনে চেক করানো এক ভীষণ ঝামেলার ব্যাপার  যেটা সামলে দেয় ঐ হুইল চেয়ার  বাহকেরা। নিজেরা বোকার মতো হুইল চেয়ারে বসে সবকিছুই লক্ষ্য  করা একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মোকাবিলা করা। সিকিওরিটির লোকজন একটু করুণার সঙ্গে ব্যবহার করে এটা ভাবলেই কেমন ভেতরে ভেতরে  কুঁকড়ে যেতে হয়। যাই হোক,  হুইল চেয়ারে বসলে লাইনে না দাঁড়িয়ে অন্যদের টাটা বাই বাই করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এগিয়ে  যাওয়া। হাতে যে ব্যাগটা যাবে তাকে কোলের ওপর বসিয়ে বেল্ট বাঁধা অবস্থায় চেয়ারে অসহায়ভাবে বসে থাকা । একা থাকলে খুবই বিশ্রী লাগত কিন্তু দুজনে থাকায় একটু কম হয়েছিল অস্বস্তি। কিন্তু বোর্ডিংয়ের সময় একেবারে শেষে হুইল চেয়ারের যাত্রীদের নিয়ে যাওয়া মানে প্রায় দুঘন্টার বেশী সময়  ধরে ঐ বাঁধা ছাঁদা  অবস্থায় বসে থাকা কোন সুখকর পরিস্থিতি  নয়। এয়ারোব্রিজ হলে গড়গড়িয়ে প্লেনের দরজা অবধি পৌঁছে যাওয়া যায় কিন্তু বাসে করে গিয়ে তারপর সিঁড়ি দিয়ে একটা প্রায় আশি কেজির জ্যান্ত লাগেজকে ওঠানো সেটা খুব সহজ সাধ্য নয়। কিন্তু ঐ অবস্থায় চেয়ার থেকে নেমে আমি চলে যেতে  পারব বলাটাও নিজেকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করা ছাড়া আর কিছুই নয়। এয়ারলাইন্সের  নিয়ম অনুযায়ী ঐ হুইল চেয়ার বাহকদের কিছু টাকা পয়সা দেওয়া বারণ। ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি যে হুইল চেয়ার ব্যবহারকারীদের কাছে কিছু টাকা নেওয়া  উচিত আর সেক্ষেত্রে  নিজেদের  অপরাধ বোধে ভুগতে হয়না। যাই হোক দুঘন্টা ধরে  বোর্ডিং গেটের সামনে বসে নানা ধরণের যাত্রীদের নানারকম ব্যবহার লক্ষ্য করা সেটাও একটা বিরাট ব্যাপার । ভিনদেশী একটা ছোট্ট শিশু নিজের  মনে গান করে চলেছে, ভাষাটা বুঝতে না পারলেও সুরেলা মিষ্টি সুর সব বাধা অতিক্রম করে মনে যথেষ্ট আনন্দের  সঞ্চার করছে। একে একে সবাই চলে গেল নিজেদের গন্তব্যস্হলের প্লেনের  দিকে, চলে গেল সেই মিষ্টি বাচ্চাটাও।  বোর্ডিংয়ের সময়ে একটা জিনিস নজরে এল। প্রায়োরিটি বোর্ডিং বলে একটা কথা কানে এল। যারা বিজনেস ক্লাস বা এক্সিকিউটিভ ক্লাস বা  প্রিমিয়ার ইকনমি  ক্লাসের যাত্রী তারা একটু আগে যাবেন । একজন সাধারণ ইকনমি ক্লাসের টিকিটধারী তাদের সঙ্গে একসাথে  যেতে পারবেন না। কথাটা কানে গেল যখন একজন সাধারণ ইকনমি ক্লাসের যাত্রী হয়তো ঠিকমতন না শুনেই ঐ প্রায়োরিটি বোর্ডিং এর যাত্রীদের সঙ্গে যেতে গিয়েছিলেন এবং তাঁকে যেতে দেওয়া হলোনা এবং বলেও দেওয়া হলো। ব্যাপার টা হচ্ছে  ফেল কড়ি মাখো তেল।    
এরপর ই শুরু হলো আমাদের  বোর্ডিং। সবশেষে আমরা চারজন হুইল চেয়ারের যাত্রী। 

নাতি নাতনিদের কাছে বলা হয়নি যে আমরা তাদের  সঙ্গে কদিন কাটাতে আসছি। হঠাৎই এসে তাদের সারপ্রাইজ দেওয়াটাই উদ্দেশ্য । কিন্তু বাচ্চারা  ভীষণ বুদ্ধিমান । তারা ঠিক জেগে বসে আছে। আট বছরের মিশু আর সাড়ে চার বছরের লিও, ওরাই আমাদের সারপ্রাইজ দেওয়াটা বানচাল করে দিল যারা নটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে তারাই সাড়ে এগারটা অবধি জেগে আমাদের ভালোবাসায় ভরিয়ে দিল। বুড়ো বয়সের সমস্যা হলো যে একজায়গায় যেখানে  ওঁরা থাকেন সেইখানে ই তাঁরা খুব স্বচ্ছন্দে  থাকেন এবং বাইরে বেড়াতে গেলেও দুচারদিনের বেশী থাকতে চাননা । যদিও মিশু এবং লিওর খুব ব্যস্ত শিডিউল কিন্তু তাদের ওর ই মধ্যে অন্ধকার রাতে বিদ্যুত ঝলকের মতো উপস্থিতি আমাদের মতো বুড়োবুড়িদের শরীরে অক্সিটোসিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং ভালবাসা আরও কিছুদিন বাঁচার তাগিদ বাড়িয়ে দেয়।