বাসুদেব থাকতো সুবীরবাবুর বাড়িতে। তাকে সেন্ট্রাল স্টেট ওয়েলফেয়ার হোম থেকে সুবীরবাবু এনেছিলেন তাঁর বন্ধু ঐ হোমের সুপারিনটেনডেন্ট অসীমবাবুর অনুরোধে। অসীমবাবু ছিলেন অকৃতদার এবং খুবই আমুদে। মানুষটি ছোটখাটো হলেও ছিলেন একজন খুব ভাল বন্দুকবাজ শিকারী। ছুটির দিনে বেড়িয়ে পড়তেন শিকারের খোঁজে এই জঙ্গলে বা ঐদিকের বিলে এবং সঙ্গী থাকতেন আদি অকৃত্রিম বন্ধু সুবীরবাবু। কোন সময় রাতে দুই বন্ধু ফিরে এলেন কোন বনমুরগী বা হাঁস শিকার করে এবং সুবীরবাবুর স্ত্রীকে বললেন, " বৌঠান, বেশ ঝাল ঝাল করে মাংস রাঁধতে হবে, ভাল করে মশলা বাঁটুন; আর ইতিমধ্যে আমরা এটার ছাল চামড়া ছাড়িয়ে পরিষ্কার করছি। তখনকার দিনে না ছিল মিক্সি, না ছিল ফ্রিজ বা প্রেশার কুকার । শিল নোড়ায় বাঁটা মশলা ও কড়াইয়ে ঘুচ ঘুচ করে সিদ্ধ হওয়া মাংসের স্বাদ ই হতো আলাদা। বাসুদেব ছিল অসীমবাবুর হোম থেকে সদ্য বেড়িয়ে আসা ছেলে। সরকারী নিয়ম অনুযায়ী হোমে একটা বয়সের পরে আর থাকা যায়না । সুতরাং নিয়ম লঙ্ঘন করে অসীমবাবুর পক্ষে বাসুদেবকে ওখানে রাখা সম্ভব ছিলনা। হোমে থাকাকালীন ছেলেদের বিভিন্ন বিষয়ে ট্রেনিং দেওয়া হয়। যাতে পরবর্তী জীবনে সে নিজেই জীবিকা অর্জনে সক্ষম হয়। কিন্তু চাকরি করব বললেই তো আর চাকরি পাওয়া যায়না। সবসময়ই চাকরির আকাল ছিল, এখনও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। যতদিন ও একটা ঠিকমতন চাকরি না পায় ততদিন সুবীরবাবুর বাড়িতে বাসুদেব থাকবে এবং ফাইফরমাশ খাটবে ও খাওয়া দাওয়ার অভাব ওর হবে না। ইতিমধ্যে সুবীরবাবুর ছোট ছেলেটা বছর দুয়েক হয়েছে এবং তার দেখাশোনা করার জন্য একটা লোকের দরকার ছিল যেটা বাসুদেব মিটিয়ে দিত। দুজনের দুজনকেই দরকার ছিল, অতএব বাসুদেবের ঠাঁই হলো সুবীরবাবুর বাড়িতে ।
অসীমবাবুর ব্যবহারের জন্য উনি সকলের খুব প্রিয় ছিলেন কিন্তু বন্ধু বলতে সেই সুবীরবাবু এবং ঐ একটি বাড়ি ছাড়া উনি আর কোথাও যেতেন না। তাঁর হোমটা ছিল স্টেশনের কাছে যা সুবীরবাবুর বাড়ি থেকে প্রায় আড়াই মাইলদূরে। বেশীরভাগ দিন ই অসীমবাবুর রাতের খাওয়া হতো সুবীরবাবুর বাড়িতে এবং তারপর সাইকেল চালিয়ে হোমে ফিরে যাওয়া। একদিন কথায় কথায় বাসুদেবের প্রসঙ্গ উঠল। উনি জানালেন যে একদিন উনি সকাল বেলায় উঠে দেখেন দরজার বাইরে কাঁথায় মোড়ানো একটা ছোট্ট শিশু । মাঝে মাঝেই কেঁদে উঠছে । একে অকৃতদার মানুষ,তার উপর ঐ শহরে কোন আত্মীয় স্বজন নেই । বাচ্চাটাকে নিয়ে কি করবেন ভেবেই পাচ্ছিলেন না। অগতির গতি সুবীরবাবু । একটা রিক্সা করে বাচ্চাটাকে নিয়ে সোজা তাঁর বাড়ি। বললেন বৌঠান একটা ব্যবস্থা করতে হবে এই বাচ্চাটার। অনেক ভেবেচিন্তে সুবীরবাবুর স্ত্রী একটা উপায় বের করলেন । ওঁদের বাড়িতে কাজ করা শিবানীর কোন সন্তানাদি ছিলনা এবং এখানে সেখানে কোন পীঢ় বাবা বা সন্ন্যাসীর পায়ে মাথা ঠুঁকতো এবং মানত করতো একটা সন্তানের আশায়। অভাবের সংসার, একটা বাচ্চাকে মানুষ করা খুব সহজ কথা নয়,তবুও শিবানীর মনে হলো এটা ভগবানের দান এবং বাচ্চাটিকে নিতে রাজি হলো। সুবীরবাবুর স্ত্রী শিবানীর মাইনে একটু বাড়িয়ে দেবেন বলে একটু আশ্বস্ত করলেন। শিবানীর আদরে মানুষ হওয়া বাসুদেব একটু বড়সড় হতেই ঠাঁই হলো সরকারী হোমে এবং তারপর আবার সেই সুবীরবাবুর বাড়ি।
বাসুদেবের মা কিংবা বাবার মধ্যে কেউ একজন নেপালি ছিল কারণ বাসুদেবের চেহারায় ছিল নেপালিদের মতন হাবভাব। যাই হোক হোমের খাতায় তার পদবী হলো মণ্ডল। বাসুদেব কয়েকবছর হোমে থাকার সুবাদে কাঠের কাজে হাত পোক্ত করেছে এবং কাজের অপেক্ষা করছে । বাসুদেব সুবীরবাবুর ছোট ছেলেটার যাবতীয় বায়না মেটায় যেখানে কোন পয়সা খরচ হয়না। খুবই ভাল বাসে ছোট বাচ্চা সুমনকে। তাকে নিয়ে কোলে করে ঘোরা, তার সঙ্গে খেলা করা, স্কুলে নিয়ে যাওয়া আসা সবকিছুই আব্দার বাসুদেবের কাছে। সুবীরবাবুর ব্যবসায় ইদানিং একটু মন্দা চলায় টাকা পয়সা নিয়ে একটু টানাটানি চলছে।বাসুদেব এটা বুঝতে পারছে কিন্তু কোথায় যাবে সে এবং একটা চাকরি যোগাড় না করতে পারা পর্যন্ত্য, তাকে সুবীরবাবুর বাড়িতে ই থাকতে হবে। তার পালিত মা শিবানীও বাচ্চা হতে গিয়ে দেহ রক্ষা করেছে আর শিবানীর স্বামীও মদ খেয়ে লিভারের বারটা বাজিয়ে মারা গেছে। সুতরাং বাসুদেবের এই বাড়ি ছাড়া আর কোনও জায়গা নেই। দিন দিন সুবীরবাবুর আর্থিক অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ছে কিন্তু তিনি একজন প্রকৃত ভদ্রলোক, হাজার কষ্টের মধ্যেও বাসুদেবকে চলে যেতে বলছেন না। ব্যবসায় যারা ধার বাকিতে জিনিস পত্র নিয়েছিল তারাও ঠিকমতো পেমেন্ট না করায় তাঁকে ও ধার করতে হয়েছে এবং সেই ধারের মাত্রা দিন দিন বেড়ে এক অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। মাঝে মাঝেই ঋণদাতারা এসে অপমান করছে যেটা বাসুদেবের একদম সহ্য হচ্ছে না। অসীমবাবু ঐ শহর থেকে বদলি হয়ে গেছেন। তিনি থাকলেও হয়তো খানিকটা সুরাহা হতো । যাই হোক বাসুদেব একদিন ঘরের সব কাজ সেরে পল্টনবাবুর কাঠের গোলায় দেখা করল এবং একটা কাজ চাইল। কোথায় থাকো জিজ্ঞেস করায় জানালো যে সুবীরবাবুর বাড়িতে থাকে এবং একটা চাকরির খুব দরকার । সুবীরবাবুদের একটা সুনাম ছিল ভদ্রলোক হিসেবে এবং কানাঘুষোয় জানতে পেরেছিলেন তাঁর দুর্দশার কথা। সুতরাং তিনি মনে মনে স্থির করেছিলেন যে বাসুদেবকে একটা কাজ দেবেন । কি কি কাজ করতে পার জিজ্ঞেশ করায় বাসুদেব জানালো যে সে হোমে কাঠের কাজ করতে শিখেছিল এবং সুযোগ পেলে সে ঐ কাজ ভালভাবেই করতে পারবে। পল্টন বাবু বিশ্বাস করতেন যে নেপালিরা খুব বিশ্বস্ত হয়। তিনি ভাবছিলেন যে কাঠের গোলায় তাকে দারোয়ানের কাজে লাগাবেন । দুদিন বাদে তাকে দেখা করতে বললেন। বাসুদেব তো ভগবানের কাছে প্রার্থনা করতে লাগল যাতে চাকরিটা সে পায়। বাড়ি ফিরে আসতে বেশ দেরী হয়েছে আর মা( সুবীরবাবুর স্ত্রীকে সে মা বলে ডাকতো) ভাতের থালা নিয়ে বসে আছে, অপেক্ষা করছে তার জন্য। বাসুদেবের চোখে জল এসে গেল মাকে না খেয়ে বসে থাকতে দেখে।
"কোথায় ছিলি এতক্ষণ? "
কিছু না বলে হাত পা ধুয়ে বসে পড়ল রান্নাঘরে আসন পেতে।
মা জিজ্ঞেস করল আবার কিন্তু কোন উত্তর দিতে পারল না সে , কেবল চোখ দিয়ে জল বেরোতে থাকল।
মা বলল যে খেয়ে নে বাবা, খাওয়ার সময় চোখের জল ফেলতে নেই।
মায়ের মুখের দিকে তাকাতে পারছে না সে , কেমন একটা অপরাধ বোধে তার মনটা ভার হয়ে আছে। ভাবছে এত কষ্টের মধ্যেও মা বা বাবা কেউ কিছু বলছেনা তাকে। যাই হোক, তাকে এই বাড়ির জন্য কিছু করতেই হবে কিন্তু যতক্ষণ কিছু না হয় ততক্ষণ সে কিছুই বলবে না। নিজের বাবা মাকে সে দেখেনি। শিবানী মায়ের কাছে ছোট অবস্থায় ছিল, পেয়েছে তাদের ভালবাসা, তারপর দেবতা তুল্য মানুষ অসীমবাবুর ভালবাসা ও শাসন এবং সবশেষে এই বাবা মা আর ছোট ভাই যাকে সে বড়দাদার মতো মানুষ করেছে আর সুবীরবাবুর মেয়েদের দিদির মতন দেখেছে। আর কি চাই ভগবানের কাছে? সব তো তিনি দিয়েছেন।
দুদিন পরে বাসুদেব দেখা করেছে পল্টন বাবুর সঙ্গে। কাঠের গোলায় তাকে থাকতে হবে রাতে। বাসুদেব তাঁকে অনুরোধ করল যে শহরে তাকে কারখানায় রাখার জন্য কারণ রাতে সেই কাঠগোলায় থাকতে হলে সুবীরবাবুর বাড়িতে সে কখন কাজ করবে? মন তার ভীষণ খারাপ । যারা তাকে এতদিন আশ্রয় দিয়েছে , দুর্দিনের মধ্যে ও তার খাওয়া পড়া নিয়ে কিছু বলেন নি, তাদের এই বিপদের দিনে সে ছেড়ে চলে যাবে এটা সে কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারছে না। বাড়ি ফিরে এল সে। মা তো বুঝতে পারছেন যে কিছু একটা হয়েছে বাসুদেবের কিন্তু কি হয়েছে সেটা বুঝতে পারছেন না। শেষে মায়ের কাছে কাঁদতে কাঁদতে সত্যি কি হয়েছে সেটা বলল। সুবীরবাবু পাশ থেকে সব শুনতে পেয়েছেন এবং দুঃখ পাওয়া সত্ত্বেও তাকে উৎসাহিত করলেন কাজটা নেওয়ার জন্য। পরদিনই বাসুদেব নিজের কিছু জামা টা পড় ও খানিকটা চাল ডাল ও কিছু দরকারি জিনিস নিয়ে চলে গেল কাজে যোগ দিতে, বেশীরভাগ জিনিস ই রইল পড়ে। যাবার আগে বাবা মাকে প্রণাম করে ভাইকে কাঁধে তুলে নাচানাচি করে জলভরা চোখে চলে গেল পল্টনবাবুর কাঠগোলায় । টালির ছাউনি কাঠগোলায় । বাঁশের বেড়া দিয়ে দরজা, ঐদিকে মেসিনগুলো আর একদিকের কোণে একটা চাটাই, সতরঞ্চি, মশারি ও চাদর। দিনের বেলায় মেশিন চলত, অনেক লোক কাজ করছে, গমগম করছে জায়গাটা কিন্তু সন্ধে নামতেই অন্য সব লোক জন চলে গেল কর থাকল ও একা। জঙ্গলের মধ্যেই মেশিন ঘরের দিকে ইলেকট্রিক বালব জ্বলছে আর নিজে যেখানে থাকবে সেখানেও একটা টিমটিমে বালব জ্বলছে আর আছে এক কেরোসিনের লন্ঠন যেটা কারেন্ট চলে গেলে কাজে লাগে। বেশীরভাগ সময়েই রাতে নাকি কারেন্ট থাকেনা আর সেই কারণেই নাকি লণ্ঠনের উপযোগিতা অনিবার্য। এই জঙ্গলের মাঝে একা থাকা বেশ কঠিন ব্যাপার । জন্তু জানোয়ার ছাড়াও বিষাক্ত সাপ খোপ তো থাকতেই পারে। কিন্তু বাসুদেবের কোন ভয়ডর বলে কোন জিনিস নেই । নিজের শরীরটা বেশ শক্তপোক্ত এবং সাহস ও ছিল অদম্য। একটা বেশ শক্ত বাঁশের লাঠি আর আছে একটা ছোরা আত্মরক্ষার জন্য। সেদিন ই প্রথম রাত,কিছুতেই ঘুম আসছেনা , কেবল ই মায়ের, বাবার ও ছোট ভাইয়ের কথা ভাবছে। কখন যে চোখের পাতা ভারী হয়ে লেগে এসেছে খেয়াল নেই। রোদ বাঁশের বেড়ার ফাঁক দিয়ে মুখের ওপর পড়তে ঘুম ভাঙল। একটু দূরেই একটা ছোট ঘর চোখে পড়ল, সম্ভবত সেটাই বাথরুম । একটা ছোট টিউব ওয়েল রয়েছে তার ই পাশে। প্রাতঃকৃত্য সেরে স্নান সেরে উনুনে কাঠকুটো জ্বেলে সকালের খাবার তৈরী করে ফেলল সে। একবার মেশিন চালু হলে আর অন্য দিকে তাকাবার সময় পাবে না সে। আগে যে লোকটা ছিল সে বাড়ি গেছিল কয়েকদিনের জন্য কিন্তু তার পরে সে আর আসে নি । আদৌ আসবে কিনা তাও জানা নেই । সুতরাং, পল্টনবাবুকে একটা লোক রাখতেই হতো। উনি ভাবছিলেন ও সেইরকম ই আর তারই মাঝে বাসুদেবের আগমন এবং তার চাকরি । কাঠগোলায় একটা পুরনো ঝরঝরে সাইকেল আছে।বাসুদেব দেখে নিল যে ওটাকে কি ভাবে কাজে লাগানো যায় । সাইকেল টাকে ঝেড়ে মুছে রাখল কিন্তু চাকায় হাওয়া নেই। বেশ খানিকটা দূরে একটা সাইকেল রিক্সা সারানোর দোকান আছে, যেখান থেকে ও সাইকেল টা সারিয়ে নিল। সারাদিন কাজ করে পরেরদিন সাইকেল নিয়ে সাতসকালে বাবা মা ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে আসা। অত সকালে মা বাসুদেবকে দেখেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলেন কিন্তু পরক্ষণেই ঘোর দুশ্চিন্তায় মন ভরে গেল । হ্যাঁ রে কেমন আছিস বাবা? একটা দিন তোকে দেখিনি কিন্তু মনে হচ্ছে কতদিন তোকে দেখিনি ।সুবীরবাবু ও ইতিমধ্যে হাজির, ভাই ও এসেছে দাদাকে দেখতে। মা চট করে একটু চায়ের জল চাপিয়ে দিয়ে কয়েকটা রুটি করে দিয়েছে। চা ,জলখাবার খেয়ে তাড়াতাড়ি সাইকেল নিয়ে কাঠগোলায় ফিরে আসা । দৈবাত কেউ এসে যদি পড়ে এবং কাঠগোলায় ঢুকতে না পারে তাহলে তো ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটে যাবে এবং চাকরিটাও চলে যাবার সম্ভাবনা থাকতে পারে। যাই হোক, কোন বিপত্তি ঘটেনি। কোন লোক আসার আগেই সে ফিরে এসেছে এবং কাজ ও সব ঠিকঠাক হয়ে গেছে । প্রায় রোজই বাসুদেব সাইকেল নিয়ে চলে আসে এবং চা ও জলখাবার খেয়ে কাজে চলে যায়। মাস শেষ হলো। আজ মাইনে দেবেন পল্টনবাবু। সবাই খুব খুশী র মেজাজে। টাকা পেয়ে সবাই খুব খুশী কিন্তু বাসুদেবের আনন্দের কোন সীমা নেই কারণ এটাই তার প্রথম রোজগার । সারা রাত ঘুমাতে পারেনি। ভোরের আলো ফুটতেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে সে। মা অত সকালে বাসুদেবকে দেখে চমকে উঠেছেন। হ্যাঁ রে শরীর ঠিক আছে তো রে?
হ্যাঁ মা, ঠিক আছি, ভাল ই আছি। বলে মাকে প্রণাম করে প্যান্টের পকেট থেকে মাইনের সব টাকা মায়ের পায়ের কাছে রেখে দিল। মায়ের চোখে জল, উনি কিছুতেই নেবেন না।সুবীরবাবু ও এসে পড়েছেন। তাকেও প্রণাম করল বাসুদেব । ভাই অকাতরে ঘুমোচ্ছে। বাসুদেব কাঁদছে আর বলছে মা তুমি যদি টাকা না নাও তাহলে আমি বুঝব যে তোমরা আমাকে ছেলের মতো ভালবাসনি। আজকে আমি যেখানেই থাকি না কেন তা তোমার বাবার এবং কাকাবাবুর জন্য। আমাকে তোমরা দূরে সরিয়ে দিওনা। যথারীতি চা ও জলখাবার খেয়ে কাঠগোলার দিকে রওনা দিল। দেখতে দেখতে তিনটে মাস কেটে গেছে বাসুদেবের ঐ কাঠগোলায় । আর এদিকে ফিরে এসেছে সেই আগের লোক যে বাড়ি গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। পল্টন বাবু একটু ধন্দের মধ্যে পড়ে গেছেন । পুরনো লোকটাকে রাখতে গেলে বাসুদেবকে ছাড়িয়ে দিতে হয়। আর বাসুদেব এই তিন মাস যেভাবে কাজ করেছে তাকেও হাত ছাড়া করতে চাইছেন না। সমাধান বেরোল সবচেয়ে পুরনো মিস্ত্রীর পরামর্শে। বহাল হলো পুরনো লোক কাঠগোলায় আর বাসুদেবের স্থান হলো ফার্নিচার দোকান সংলগ্ন কারখানায় আর সঙ্গে বাড়ল মাইনেও।
বাসুদেব এখন সুবীরবাবুর বাড়িতে মা ও ভাইয়ের সঙ্গে। সুবীরবাবুর কাছে যারা ধারে মাল নিয়েছিল তারাও অনেকে টাকা ফেরত দেওয়ায় অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে । সৎ পথে থাকলে সাময়িক কষ্ট হলেও ভগবান তাদের শান্তি দেন ।