মহিলাদের শাড়ি ও গয়নার প্রতিযোগিতা এই অনুষ্ঠানের মধ্যে দেখা যায়। আর দেখা যায় মেক আপের প্রতিযোগিতা। ভাল অনুষ্ঠান দেখব না এদের দেখব এই নিয়ে রীতিমত ধন্দে পড়ে যেতে হয়। দামী শাল কিন্তু শীত নিবারণ করার বদলে গয়নাগাঁটির প্রদর্শনে সহায়তা করে। যাই হোক, এটা এলিট সমাজের অনুষ্ঠান এবং এঁরা যতটা সম্ভব সামনের সারির টিকিট সংগ্রহ করেন এবং যতটা গান বোঝেন তার থেকে বেশী বোঝার ভান করেন। দেখা যায় যাঁরা ছোটখাট শিল্পী বা সত্যিই শিল্পানুরাগী তাঁরা আপাদমস্তক চাদর বা শালে মুড়ে সবচেয়ে কম দামের টিকিটে একদম পিছনের সারিতে বসে সুরজালের মায়ায় বুঁদ হয়ে রয়েছেন। এতো গেল ক্ল্যাসিকাল গানের আসর। এবার আসা যাক, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের অনুষ্ঠান। বিশ্বভারতীর কপিরাইট শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন শিল্পীদের রবীন্দ্র সঙ্গীতের পরিবেশন যেন অবাধ স্বাধীনতা পেয়ে গেছে। যে যেমন ইচ্ছা গেয়ে চলেছে, কারও কিছু বলার নেই। এঁদের মধ্যে অনেকেই হয়তো বেশ নাম করে ফেলেছেন এবং স্বঘোষিত অথরিটির তকমা লাগিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু অতীতের প্রথিতযশা শিল্পীদের গাওয়া গানের সঙ্গে এদের আকাশ পাতাল তফাত। হয়তো আমাদের সকলের মনে আছে যে দেবব্রত বিশ্বাসের মতন শিল্পীর গাওয়া গানও বিশ্বভারতী মিউজিক বোর্ডের অনুমোদন না পাওয়ায় রেকর্ড হিসেবে বেরোয়নি। এই নিয়ে শিল্পীর মনঃকষ্টের কোন শেষ ছিলনা। তাহলে আজ যাঁরা পয়সা দিয়ে রেকর্ড করছেন তাঁদের কি অবস্থা হতো ভাবতেই ভয় লাগে। সুতরাং, যাঁরা সুবিনয় রায়, সুচিত্রা মিত্র বা কণিকা বন্দোপাধ্যায়ের গান শুনেছেন তাঁরা চট করে এমুখো হবেন না। কিন্তু এখনও কিছু শিল্পী আছেন যাঁরা ঐ প্রবাদপ্রতিম শিল্পীদের যোগ্য উত্তরসূরী হিসাবে বিশুদ্ধ ভাবেই গাইছেন এবং যোগ্য সম্মান পাচ্ছেন।
এবার আসা যাক, পাঁচমিশেলি ঝকমক রামা হো টাইপের গানের আসরে। যেমন শিল্পী তেমনই শ্রোতা। টাইট জিনস, অন্ধকারেও সান গ্লাস পরা, সাধারণ লোক পরলে যখন তখন হোঁচট খেয়ে মরবে। বড় বড় ড্রাম, হাতে লাঠি সোঁটা( ড্রাম বাজানোর কাঠি) , হাতে নানান ধরণের গিটার, শিল্পীদের মাথায় বাঁধা চকরা বকরা রুমাল, দেখলেই গা টা কেমন ঘুলিয়ে ওঠে। শ্রোতাদের চেহারা এবং বেশবাস ও প্রায় একই রকম। প্রায় ষোল সতের বছর আগে বান্দ্রায় অনেক রাতে একগুচ্ছ আধুনিকা কে ছেঁড়া, ফাটা জিনসের প্যান্ট পরতে দেখে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারিনি। কিন্তু এখন তো দেখছি এগুলো আকছার। শিল্পীর গলায় নেই কোন সুর যা ঢাকা পড়ে যায় বাজনার গগনভেদী আওয়াজে। সুতরাং, মান বাঁচিয়ে পাশ কাটানোই ভাল।
এবার আসা যাক, এক বিচিত্র গানের আসরে। যাঁরা খুব ভোরে ওঠেন তাঁরা নিশ্চয়ই এই গানের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই শুরু হয়ে যায় এই কলতান। টিয়া , বুলবুল, পায়রা, কাক,শালিক, চড়াই, ঘুঘু ,কোকিল, কাঠঠোকরার তির তির তির তির তির তির ডাক এবং মাঝে মাঝেই বসন্ত বাউরির টুই টুই রব মনকে ভীষণ পবিত্র করে তোলে। শ্রোতা কে আছে না আছে তার বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করে নিজেদের মনে আপন খেয়ালে গেয়ে চলে নতুন দিনের আগমনবার্তা। এই আসরের কিন্তু কোন তুলনা নেই । সবাই নিজেদের সাধ্য মতো গেয়ে চলেছে, কোথাও কোন সমালোচক নেই, আছে শুধু সঙ্গীত এবং এ এক অপূর্ব বিচিত্রানুষ্ঠান।
No comments:
Post a Comment