Sunday, 7 November 2021

আত্মীয়

আত্মীয় শব্দটা শুনলেই মনে হয় যেন কোন রক্তের সম্পর্ক  আছে কিন্তু ঘটনাচক্রে শব্দটা একটু গোলমেলে। প্রায়শই  দেখা যায় যেখানে কোন  রক্তের  সম্পর্ক ই নেই সেখানেই  প্রগাঢ় বন্ধুত্ব এবং রক্তের  সম্পর্কে একদম লাঠালাঠি ব্যাপার। কিন্তু এরকম  উলট পুরান কেন? আসলে আত্মীয় মানে যেখানে আত্মার  সম্পর্ক  আছে বা যোগ আছে এবং সেখানে রক্তের সম্পর্ক  থাকতেও পারে নাও পারে। অনেক ঘটনা মনে আসে এ সম্বন্ধে আলোচনা করতে গেলে কিন্তু কিছু কিছু ঘটনার  কথা বললেই এই শব্দের  তাৎপর্য বোঝা যাবে।

আমেদাবাদে ওসমানপুরায় গুজরাট বিদ্যাপীঠের পাশের  গলির ডালবড়া অত্যন্ত বিখ্যাত। ভাল করে ফাঁটানো ডালের  বড়া লেবুর রসে জারিত পেঁয়াজ কুচি এবং গরম তেলের  কড়াইয়ে  একবার  ছেড়ে দিয়েই উঠিয়ে নেওয়া আধভাজা কাঁচালঙ্কার  যে কি অপূর্ব  স্বাদ সেটা যে না খেয়েছে সে কিছুতেই  বুঝতে পারবে না। অনুজের  এটা ছিল  খুবই  পছন্দের  খাবার  এবং বহুদিন  অফিসের  পরে রান্না করে খেতে ইচ্ছে না হলে বেশ খানিকটা  ডালবড়া  খেয়েই উদরপূর্তি করতো। পাশেই ছিল  তুকারামজীর সাইকেল ভ্যানে লাগানো দোকান যেখানে ভাত, ডাল, তরকারি পাওয়া যেত। মাঝে মাঝে অনুজ তুকারামজীর  দোকানের খদ্দেরও   হয়ে যেত। ডালবড়ার দোকান এবং তুকারামজীর দোকানের  সামনে সারি সারি বেঞ্চ পাতা থাকত যেখানে বসে খরিদ্দাররা  বসে খেতে পারতো। বেঞ্চগুলোর সামনে পাতা থাকতো টুল যেখানে  লোকে খাবার রাখত। অফিসের  খুব কাছেই তার বাড়ি এবং দোকান গুলো থাকার জন্য খুব  বেশি সময় যেতনা খাবার  সংগ্রহের জন্য। ডালবড়াই হোক আর তুকারামজীর  দোকানের রুটি তরকারিই হোক একটা দৃশ্য  অনুজের  নজর এড়ায় না। একটা অন্ধ লোককে রোজ তুকারামজীর  দোকানের  সামনে বসে থাকতে দেখত। কৌতূহলবশত একদিন জিজ্ঞেস  করে ফেলল তুকারামজী এই লোকটিকে রোজ দোকানের  সামনে বসে থাকতে দেখি, কি ব্যাপার? জবাবে সে জানালো যে ওর নাম জিতুভাই এবং ও সারাদিন  ভিক্ষা করে রাত্রিবেলায় ও এখানে আসে খাবার  খেতে। অনুজ একটু আগ্রহ  দেখিয়ে আরও  জিজ্ঞেস  করল ওর খেতে  কত টাকা লাগে এবং তার উত্তরে সে জানালো যে দশ টাকা কিন্তু ও জিতুভাইয়ের  কাছে কোন  পয়সা নেয়না। আশ্চর্য ব্যাপার,  রাস্তার  ফুটপাথের ধারে চালানো এক দোকানের  মালিক  এই গরীব  অন্ধ মানুষটিকে অন্তত  একবেলা পেটভরে খাবার  জোগায় অথচ এত পয়সাওয়ালা লোক চারিদিকে এত বাজে পয়সা খরচ করে কিন্তু কাউকে কিছু দিতে গেলেই এদের  প্রাণ বেরিয়ে যায়। 

অনুজের  বদলির  অর্ডার  এসে গেছে কারণ তার এখানে থাকার  মেয়াদ  শেষ। রিলিভারকে চার্জ বুঝিয়ে দিতে আরও  তিন চার দিন  লাগবে। তুকারামজী, একটা কথা বলব আপনাকে? বলুন স্যার।  তুকারামজী, আপনি তো জিতুভাইকে রোজই খাওয়ান,  আমাকে একটু ওর সেবা করতে দেবেন? তুকারাম তো একটু অবাক হয়ে গেল, বলল আপনি কেন দেবেন? অনুজ  জানালো যে ওর বদলি  হয়ে গেছে এবং সে একহাজার  টাকা দিতে চায় জিতুভাইয়ের  খাবারের  জন্য। তুকারামজী একটু অস্বস্তিতে পড়ে গেল কিন্তু অনুজ তার হাতে জোর করে টাকাটা গুঁজে দিল। জিতুভাইয়ের  সঙ্গে না তুকারাম না অনুজ কারো কোন  রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও কোথাও  যেন  একটা যোগ  রয়েছে যার নাম আত্মীয়তা। 
 

1 comment:

  1. মানবিকতার নাম ও আত্মীয়তা |অপূর্ব লাগলো |

    ReplyDelete