Saturday, 18 December 2021

বিয়েবাড়ির চাটনি খবর

বিয়েবাড়িতে নানা ঘটনা ঘটে যেগুলো খুবই মজাদার  রসাল হয় এবং বিয়ে মিটে গেলেও তার রেশ  বহুদিন বজায় থাকে। অনেক মজাদার  ঘটনা ঘটলেও সব ঘটনার  সাক্ষী হওয়া কোন লোকের  পক্ষেই সম্ভব  নয়। সেইকারণে এই প্রবন্ধের  সংযোজন হতেই  থাকবে এবং এই প্রবন্ধ  কবে শেষ হবে তা একমাত্র ভগবানই বলতে পারেন। সবার কাছেই  অনুরোধ  থাকল  যে মুখরোচক কিছু খবরের  সন্ধান থাকলে যদি জানান তাহলে একটা  সার্থক গল্প দাঁড়ায়।

তখন মফস্বলে টেবিল  চেয়ারে বসে খাওয়া চালু হয়নি, ক্যাটারার  তো কোন দূরস্থান। বাড়ির শক্ত সামর্থ্য লোকেরাই পরিবেশন করত এবং লোকজন যদি সেরকম না থাকত তবে পাড়ার  লোকজন এসে কার্যোদ্ধার করে দিত। বিয়েবাড়িতে  তখন  মাটিতে বসেই  খাওয়া দাওয়ার রেওয়াজ  ছিল। পরিবেশনকারীরা পাজামা বা প্যান্টের উপর গামছা বা তোয়ালে জড়িয়ে শুরু করে দিত। টিমের  একজন ক্যাপ্টেন  থাকতেন  যিনি বাড়ির  মালিকের  সঙ্গে আলোচনা করে নিতেন  যে কত গেস্ট আছে এবং সেই সঙ্গে দেখে নিতেন যে কত পরিমাণ  খাবার  আছে। সেই বুঝে ঢালাও  পরিবেশন  বা হাত টেনে পরিবেশন করার  নির্দেশ তাঁর  টিমের  লোকজনদের  দিতেন। তবে প্রথম  দুটো ব্যাচ একটু টেনেই  পরিবেশন করা হতো।তারপর মালের স্টক এবং গেস্ট সংখ্যা বুঝে পরিবেশন করা হতো। তখন  আইসক্রিমের  চল আসেনি। দইয়ের হাঁড়ি বা মালসা  এক হাতে নিয়ে আর এক হাতে একটু বড় ধরণের  চামচ দিয়ে খুবই  মোলায়েমভাবে দইএর  উপর চালিয়ে দিতে হতো। সুতরাং, বুঝতে অসুবিধে  হয়না যে সবচেয়ে  অভিজ্ঞ পরিবেশকের হাতে এটা ন্যস্ত  হতো। পাঁচসেরি  একটা দইয়ের মালসা  এক হাতে নিয়ে ঝুঁকে পড়ে দই পরিবেশন করা কত কঠিন  কাজ  ছিল  সেটা অনুমেয়। এরপর  সবাই  চায় দইয়ের মাথা, আর নিজের  মাথা ঠাণ্ডা রেখে পরিবেশন করা এক দুরূহ  ব্যাপার ছিল। আর কিছু লোক  খেতেই  আসত যেন  মনে হয় সাতজন্মের খাওয়া ঐদিন ই খাবে। কিছু লোক  শুধু মাছ, মাংস  আর মিষ্টিই  খাবে যেন  বাড়িতে ঐরকম ই খায়। লাল শাকে বাদাম ভাজা আর তার উপর ছেটানো নারকেল কোঁড়া  দিয়ে শুরু করে নৌকার  মতন  বেগুন ভাজা কলাপাতায় পটাপট  পড়ত। এরপর গরম গরম  লুচিএবং আলুর দম বা এঁচোড়ের  ডালনা বা আলু পটলের তরকারি বা মটরশুঁটির কচুরী এবং আলু ফুলকপির  তরকারি( শীতের সময়) এবং এরপর আসত পোলাও এবং মাছের  কালিয়া এবং তারপর আসত পাঁঠার  মাংস। কম্পিটিশন করে খাবার  লোকজন এইবার  জামার হাতা ভাল করে গুটিয়ে নিয়ে বলতে থাকল বালতিটা  এখানেই  রেখে অন্য  বালতিতে  বাকিদের  সব দিন। আহা রে , চাঁদু,  বাড়িতে কটা পিস মাংস  খাও।  তখন  জিনিস পত্রের দাম  শস্তা হলেও  মাইনেও ছিল কম। সুতরাং, বাড়িতেও দুই তিন টুকরোর  মধ্যেই  সীমিত থাকত। এটাই  স্বাভাবিক। কেউ  অন্য কিছু না খেয়ে শুধু মাছ বা মাংস বা মিষ্টি খাবে এটা ঠিক  নয়। তবে অনেক  লোকেই তখন  খেতে পারত এবং সেই খাওয়াতে  যদি সামঞ্জস্য  থাকে তাহলে ঠিক  আছে। যেমন কেউ  লুচি, পোলাও এবং তার আনুষঙ্গিক  তরকারিপাতি খেয়ে মাছ বা মাংস খায় এবং তারপর আনুপাতিক হারে দই বা মিষ্টি খায় তাহলে আলাদা কথা। অনেকে রস চেপে রসগোল্লা খাওয়ার  সংখ্যা বাড়ায়। পরিবেশনকারিদের মধ্যেও  বেশ রসিক মানুষ থাকত  আর বলত ছানাচ্যাপ্টা দেব? এরকমই  সহকর্মীর  এক বিয়েতে বরযাত্রীদের  একজন আর একজনকে উস্কে দিল।   একজন সহকর্মী রসগোল্লা যতই  দেয় ততই  আলাদা একটা মাটির  ভাঁড়ে রস চিপে ফেলে দেয় এবং ছানাটা মুখের  মধ্যে দেয়।  পরিবেশন যিনি করছেন তিনি মনে মনে খুব  ক্ষুব্ধ  হলেও  কিছু বলতে পারছেন না। হাজার  হলেও  বরযাত্রী বলে কথা। যে সহকর্মীকে উস্কে দিয়েছিল সে একটু দূরে বসেছিল। সে একজন  পরিবেশনকারিকে ডেকে বলল," দাদা, একটা কথা বলব ? কিছু মনে করবেন  না তো?" না, না, না বলুন।  ঐ যে ভদ্রলোক  রসগোল্লা খাচ্ছেন,  উনি বেগুন ভাজা খেতে খুবই  ভালবাসেন  কিন্তু এখন যখন  মিষ্টি দেওয়া হচ্ছে,ও লজ্জ্বার খাতিরে চাইতে  পারছে না। ওকে গোটা কয়েক  বেগুন ভাজা এনে দেবেন? হ্যাঁ, হ্যাঁ, এটা একটা কথা হলো? উনি সঙ্গে সঙ্গে একটা ট্রেতে গোটা আটেক  বড় বেগুন ভাজা এনে দিল  তার পাতে। আরে এ কি করছেন,  এ কি করছেন? না, না, একদম লজ্জ্বা পাবেন না। আমি মিষ্টির  বালতি নিয়ে আসছি। তার রস চেপে রসগোল্লা
খাওয়া মাথায় উঠল। ও তো বুঝতেই পেরেছে  যে এটা কার কম্মো। কিন্তু  এভাবে ওকে নিরস্ত করা ছাড়া আর কোন  রাস্তা ছিলনা।

এবার  আসা যাক  আরও  একটা মজাদার ঘটনায়। এটা ছিল  একটা মোটামুটি ঘ্যামা বিয়ে। বিরাট ব্যবসা ওদের। জুট মিল, কাপড়ের  দোকান ( হোলসেল ও রিটেল),সোনার  দোকান ও পেট্রোল পাম্প।  এছাড়াও  পুকুর,  জমি জমা, এককথায় বিশাল  ব্যাপার।  ওরা অনেক ভাই। সুতরাং বিশাল  ব্যবসা সামলানো কোন বড় ব্যাপার ই নয়। ওদের যিনি বড় ভাই মানে তিনি শুধু বয়সেই বড় নন ওদের  ব্যবসা সাম্রাজ্যের ও মুখ্য মাথা। বিশাল  বাড়ি ওদের, একটা নয়, দু দুটো তিনতলা বাড়ি। মাঝখানে  বিশাল  উঠোন । দুটো বাড়ির ছাদে ম্যারাপ বাঁধা । একটা বাড়ির  ছাদে যখন  খাওয়া দাওয়া হয় তখন  অন্য  বাড়ির  ছাদ পরিষ্কার  করা হয়। এখন আমরা দু কামরা বা তিন কামরার ফ্ল্যাটে থাকা লোক। সুতরাং, বিয়ে বা অন্য  কোন অনুষ্ঠান  করতে গেলে হল বা রিসর্ট ভাড়া করতে হয়। কিন্তু তখন তো ফ্ল্যাট  কালচার  আসেনি, স্টেশনে নেমে রায় ভিলা বা চৌধুরী  ম্যানসন যাব বললে রিক্সাওয়ালারা বসিয়ে নিয়ে মহাসমাদরে নিয়ে এসে বাড়ি পৌঁছে দিত। অনেক সময়ই তারা ভাড়া চাইতেও  লজ্জা পেত। ভাড়া জিজ্ঞেস  করলে তারা বলত যা হয় দেবেন কারণ ভাড়া চাইলে যদি বাবুদের সম্মান  নষ্ট হয়ে যায়। বাবুদের বাড়ির  অতিথি মানে তাদের ও যেন অতিথি। আর্থিক  ও সামাজিক  বৈষম্য  থাকলেও কেমন যেন  একটা সৌহার্দ্য  ও প্রীতির সম্পর্ক  ছিল যা কালক্রমে আজ নিশ্চিহ্ন। যাই হোক,  ফিরে আসা যাক  সেই বিয়েবাড়ির কথায়। এখানে সব কিছুই  ঢালাও। এই বিয়ে বাড়িতে খাওয়ার  প্রতিযোগিতা হতো ।শহরের  বিভিন্ন  ক্লাবকে তাঁরা নিমন্ত্রণ  করতেন এবং সেরা পেটুক মশাইকে তাঁরা পুরস্কার  দিতেন। বিভিন্ন  ক্লাবের  বিশাল দেহী  পালোয়ান তো আসতেনই,  সঙ্গে কিছু কুকুর পেটওয়ালা ডিগডিগে মার্কা লোক ও আসত এবং প্রায়শই  দেখা যেত এই লোকগুলোই  সিংহভাগ  পুরস্কার  নিয়ে যেত। আরও  একটা জিনিস  ছিল যেটা  হচ্ছে অতিথিপরায়ণাতা। খাওয়ার  সময় তদারকি ছাড়াও  খাবার  শেষে বেরোনোর  সময় জিজ্ঞেস করতেন  পেট ভরে ঠিকঠাক  করে খেয়েছে তো? কোন  ত্রুটি হয়নি তো? ট্যাডপোল দা বড় সাইজের  চল্লিশটা লুচির  সঙ্গে প্রয়োজনীয় তরকারি বা মাছ, মাংসের সঙ্গে বালতিখানেক পোলাও  ও বড় এক হাঁড়ি দইয়ের সঙ্গে পরিমাণ  মতো রসস্থ বোঁদে ও বড় সাইজের  রসগোল্লা ও সন্দেশ  মিলিয়ে খান পঞ্চাশেক  মিষ্টি খেয়ে বড় একটা ঢেকুর  তুলে ট্যাডপোল দা খাওয়া সমাপ্ত করতেন।  এ হেন  বৃকোদরের প্রথম পুরস্কার  বাঁধা। দ্বিতীয় বা তৃতীয় বা সান্ত্বনা পুরস্কারগুলো কুকুরপেটওয়ালা হরি বা ভজাদের  কপালে জুটতো। 
এবার  আসা যাক, আরও  একটা আধুনিক বনেদী বাড়ির  বিয়েতে যেখানে বনেদীয়ানা এবং অতিথিপরায়ণতার সংমিশ্রণ সুন্দর ভাবে প্রতীয়মান।  কলকাতা থেকে জনা তিরিশেক এবং বম্বে থেকেও সম সংখ্যক বরযাত্রীদের দিল্লী যাবার  ব্যবস্থা হয়েছে প্লেনে এবং সেখান থেকে একটু দূরে ফরিদাবাদের  সূরযকুণ্ডে  তাজ হোটেলে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। কলকাতা থেকে দিল্লির যাত্রায় সাতজনের  জন্য  হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা হয়েছে।এরমধ্যে চারজনের  অপারেশন  বা অসুস্থতা এবং বাকি তিনজন অশীতিপর  বৃদ্ধা। কিন্তু এমনই ব্যাপার  যে এই বিয়েতে যেতেই  হবে। কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যের  কথা এঁদের  মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশী বয়স্কা তিনিই সবচেয়ে বেশী ফিট। তাঁর সম্বন্ধে পরে কিছু বলতেই  হবে কারণ তিনি অনন্যা এবং  তাঁর  বয়স তিরানব্বই। তিনি পাত্রের  ঠাকুমা। যাই  হোক শীতের  শুরুতেও  দিল্লী যথেষ্টই  ঠাণ্ডা এবং শীতকাতুরে  বাঙালির তার জন্য  প্রস্তুতি সহজেই অনুমেয়। যাই হোক, সন্ধ্যে নাগাদ  দিল্লী বিমানবন্দরে পৌঁছে, মালপত্র  নিয়ে অনেকগুলো গাড়ি এবং একখানা বাসে সবাই  তাজ হোটেলে এসে পৌঁছাল। গোলাপ দিয়ে সম্বর্ধনার  পর মাটির  ভাঁড়ে গরম চায়ের  অভ্যর্থনা এক অসাধারণ অনুভূতি। খানিকটা গলা গরম করে যাওয়া হ'ল নিজের নিজের ঘরে এবং কিছুটা আনপ্যাক করতে না করতেই  সমন এসে গেছে ডিনারের। আক্রমণ  শুরু হ'ল থরে থরে সাজানো বিভিন্ন  সামগ্রীর।  ব্যূফে সিস্টেমে যার যা প্রাণে চায়  বাধানিষেধহীন হয়ে তাই দিয়ে পেট ভরাও।  কেউ  দেখতেও যাচ্ছেনা, বাধাও দিচ্ছেনা। হঠাৎই  মনে হ'ল ট্যাডপোল দা বেঁচে থাকলে কি যৎপরোনাস্তি আনন্দিতই  না হতেন। টানা ঘুমের  পরে সকালে উঠে নিজেই নিজের  চা বানিয়ে খেয়ে নেওয়া, সঙ্গে থাকা বিভিন্ন  ধরণের  স্ন্যাকসের সহযোগে।  সকাল বেলায় ব্রেকফাস্ট  ঐ হোটেলের ই একটা রেস্তোরাঁয়।  এরই মধ্যে একজনের জুতোর  সোল গেছে খুলে। সে বেচারা খোঁড়াতে খোঁড়াতে এসেছে রিসেপশনে  জিজ্ঞেস  করতে কাছাকাছি কোন জুতোর দোকান  বা রিপেয়ার করার কোন জায়গা আছে কিনা । এদিকে পাত্রীর দাদার  নজরে সেটা পড়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে বলে দিল এক অডি গাড়ির  ড্রাইভারকে। কি আর করে বেচারা। আরও  একজনকে সঙ্গে  নিয়ে চলল মুচির খোঁজে অডি গাড়িতে চড়ে।  মুচি যেখানে বসে তার থেকে অনেক  দূরে গাড়ি রেখে খোঁড়াতে খোঁড়াতে পকেট  থেকে খুলে যাওয়া সোলটা বের করে বলল ইসকো বানানা পড়েগা। ঠিক হায় সাব অভি পেস্টিং কর দেতে । নহী নহী ভাই আপ পেস্টিং করকে সিলাই ভি কর দিজিয়ে। তো সাব, উসমে তো বহুত  টাইম লগেগা। কুছ পরোয়া নেহী।   এর পর সঙ্গীতের  জন্য রিহার্সাল  শুরু। নাচগানের মাধ্যমে দুই পরিবারের  আরও  কাছাকাছি  আসা এই সঙ্গীতের উদ্দেশ্য। ঐদিন  সকাল  বেলায় বম্বে থেকে একটা টিম এবং কলকাতা থেকে আরও একটা টিম চলে এল সঙ্গীত সন্ধ্যাকে  আরও  মধুময় করতে। শুরু হ'ল অমিতাভ  বচ্চনের  গলায় গণেশ বন্দনা দিয়ে আর তারপরেই শুরু হ'ল নৃত্য গীতের সুষমামণ্ডিত পরিবেশন। ঐ অল্প সময়ের মধ্যেই  কি দারুণ  রিহার্সাল, দেখার মতন। যাই  হোক, রাতের  ডিনারের  পর গল্প, গল্প আর গল্প।
পরদিন  ঘুম ভাঙতে একটু দেরী হ'ল। সকাল  বেলায় নান্দীমুখ  ও গায়ে হলুদ। দুটো পাশাপাশি স্যুইটে পাত্রপক্ষ ও পাত্রীপক্ষের  অবস্থান।  সুতরাং গায়ে হলুদের  তত্ত্ব নিয়ে যাওয়া আসাতে  কোনসময় ব্যয় হ'লনা। সন্ধ্যে বেলায় বিয়ে, পাত্র এল করতে বিয়ে রোলস রয়েস  নিয়ে।  বিয়ের  মণ্ডপ খোলা জায়গায়। ঠাণ্ডা হাওয়ার  কামড়ে বসে থাকা যায়না কিন্তু চারদিকে হিটার  জ্বালিয়ে দেওয়ায় খুবই  মনোরম পরিবেশ তৈরী হয়েছিল আর কবিগুরুর  গান আগুনের  পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে মনে পড়ে যাচ্ছিল। এদিকে প্রশস্ত  হলে খাওয়া দাওয়া চলছে। বিভিন্ন  অতিথিরা আসছেন,  যাচ্ছেন  ও তাঁদের পছন্দ মতন খাওয়া দাওয়া করছেন  আর ঐদিকে অনুরাগ রাস্তোগীর ব্যাণ্ডের অপূর্ব  সুর একের পর এক মূর্ছনা সৃষ্টি করে চলেছে। এক অপূর্ব  মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। লাঠি হাতে এক স্যুট পরিহিত ভদ্রলোক রাস্তোগীর গানের ভিডিও  করছিলেন এবং আলাপ করলেন।  বাঁশি, স্যাক্সোফোন, বেহালা ও কীবোর্ডের সন্তুলন মিশ্রণে  একের পর এক পুরনো  দিনের গান বেজে উঠছে আর ছেলে, বুড়ো, মেয়ে, বুড়িদের শরীর  হিন্দোলিত হচ্ছে। উপস্থিত  জনগণের  মধ্যে সবচেয়ে বর্ষীয়ান  ভদ্রমহিলার  শরীরের আন্দোলন  দেখে লাঠি হাতে হাঁটা ভদ্রলোক ঐ ভদ্রমহিলার  হাত ধরে নাচার  জন্য  অনুরোধ  করলেন।  ঐ বর্ষীয়সী  ভদ্রমহিলা তাঁর অনুরোধ  উপেক্ষা  করতে পারলেন  না। তিনিও পুরোদস্তুর নাচে অংশগ্রহণ করলেন  এবং রাস্তোগীরাও  অত্যন্ত  উদ্বুদ্ধ  হয়ে উঠলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে আরও  অনেক  বর্ষীয়ান  ভদ্রলোক ও তাঁর সঙ্গে সঙ্গে তাল মেলালেন। কি অসাধারণ  প্রাপ্তি বর্ণনা করা যায়না। যাই হোক,  পরদিন  সকালে ব্রেকফাস্ট  করে ফিরে আসার  পালা। চারদিনের লোকজনের  ব্যবহার এতটাই  মধুর  ছিল  যে এটাকে একটা তেল খাওয়া  মেশিনের  সঙ্গে তুলনা করা যায়। পার্থক্য  এইটাই  যে মেশিনের  চলন প্রাণহীন  কিন্তু এখানে প্রত্যেকটি লোকের ব্যবহার  হৃদয়মিশ্রিত।

No comments:

Post a Comment