Saturday, 28 May 2022

"ব"

ঘুরছে না 'ব' বনবনিয়ে
ঘুরছে, যেন অলস পায়ে
গতির সেই উচ্ছলতা  হঠাৎ যেন উধাও  হয়ে
আসছে থেমে বাঁকের গায়ে
আছে কি কেউ সরিয়ে বাধা,দেবে 'ব' কে পূর্ব গতি
স্রোতের বেগে ছুটবে যে রথ 
চড়বে সোপান পরমোন্নতির?
যাঁরাই  বসেন মসনদে আচার  তাদের  হয় যে বদল
প্রতিশ্রুতির  ফাঁকা বুলি জনগণের ফাঁকা ঝুলি।
দিন গণি সেই আশায় আশায়
 কবে আসেন হারকিউলিস
 হাতে নিয়ে বিশাল কোদাল 
করবেন সাফাই 'ব' আস্তাবল।।

Thursday, 19 May 2022

একজন লেখকের অপমৃত্যু

গজুদার সঙ্গে আমার  পরিচয়  একটা অনুষ্ঠানে। চেহারার সেরকম  জেল্লা না থাকলেও তাঁকে দেখে নিজের মনে হয়েছিল যে ভদ্রলোক  বেশ করিত কর্মাএবং খুব  সৎ লোক। আজকাল  তো ঝাঁ চকচকে চেহারার  লোকদের  দেখলেই কেমন বুকটা ছমছম করে। কেতাদুরস্ত চেহারার লোক  কথায় কথায় কাঁধ ঝাঁকানি দেয়, কথাবার্তা বা আচার ব্যবহারে যথেষ্ট  কৃত্রিমতা, নজরে  এলেই কেমন যেন  সিঁটিয়ে যাই। হয়তো নিজের একটু গ্রাম্য ভাব থাকার এরজন্য  খানিকটা দায়ি। কিন্তু এটা মনে মনে ঠিক  করেই  নিই যে এঁর সঙ্গে একটু দূরত্ব  রাখাই ভাল। কিন্তু গজুদার নিজেকে একটু গুটিয়ে রাখা কিন্তু কথা বলার সময় সোজাসাপটা  কথাবার্তা আর অমায়িক  ব্যবহার আমাকে তাঁর  প্রতি একটু বেশিই  আকৃষ্ট করেছিল। বুঝলাম  এই ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার পটবে।  অনুষ্ঠান  ছিল আমাদের  ক্লাবের এবং অন্য একজন  মেম্বারের  সঙ্গে তিনি এসেছেন। সত্য দা সমস্ত  মেম্বারের সঙ্গে গজুদার  পরিচয় করিয়ে দিলেন কারণ  আমাদের সকলের উপর মেম্বার বাড়ানোর  ভার ছিল। আমাদের  ক্লাবের  নিজস্ব  কোন ঘর ছিলনা এবং ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কোন  মেম্বারের বাড়িতে ক্লাবের  মিটিং হতো বা নিদেন পক্ষে কোন  রেস্তোরাঁয় বা ছোট খাটো হলে। আমি একটু গায়ে পড়েই গজুদার সঙ্গে গভীর  আলাপ  করতে চাইলাম।  কথায় কথায় জানলাম যে উনি একজন  কেন্দ্রীয় সরকারের  উচ্চপদস্থ  কর্মচারী এবং সম্প্রতি তিনি রিটায়ার করেছেন। ধীরে ধীরে সম্পর্কের  গভীরতা বাড়তে থাকল এবং ব্যক্তিগত  স্তরে সেটা প্রায় পৌঁছে গেল। পরস্পরের  বাড়ি যাওয়া আসাতে বন্ধুত্বের গভীরতা বেশ জমে উঠল। 

কয়েক বছরের মধ্যেই  তাঁর  ওপর একটা  কেজো লোকের  তকমা সেঁটে গেল এবং তারই  ফলশ্রুতি তিনি হলেন  সম্পাদক এবং পরের বছর সভাপতি। আমাদের  ক্লাব ছিল সভাপতি  ভিত্তিক মানে তাঁর  কথাই হতো শেষ কথা যদিও  তিনি অন্যান্য সদস্যদের  মতামত ও নিতেন কিন্তু তিনি কোন সিদ্ধান্ত নিলে তা সকলেই মেনে চলতো। কিন্তু একটা কথা ঠিক  যে তিনি  সভাপতি থাকাকালীন  ক্লাবের যেরকম  রমরমা সেটা আর কোন  সময়েই হয়নি। প্রাণের স্পন্দন সবার  মধ্যেই সংক্রামিত  হয়েছিল। একটা কথা আছে না যে কোন  কোন সময় একটা ঝাঁকানির  প্রয়োজন  হয় যেমন গাড়ি চালানোর সময় কোন  সেরকম  পরিপক্ক নয় ড্রাইভারের  গিয়ার চেঞ্জের সময় হয়। গজুদার কোন কোন  সিদ্ধান্ত  সেরকম স্থির মস্তিষ্ক  প্রসূত না হলেও  তাঁর ঐকান্তিক ইচ্ছা আর অক্লান্ত  পরিশ্রম তাঁকে সাফল্যের  শিখরে পৌঁছে  দিয়েছিল।

কথায় কথায় জেনেছিলাম তিনি তাঁর  কর্ম ক্ষেত্রে একজন সর্বভারতীয় সম্পাদক ছিলেন  এবং তাঁর  সেই  অভিজ্ঞতাই ক্লাবের  উন্নতির  শিখরে পৌঁছতে   সাহায্য  করেছিল।  একটা গাড়ি সে যতই  পুরোন  হোক না কেন যদি চালু থাকে তা বসে থাকা এক নতুন  গাড়ির  থেকেও  ভাল  সার্ভিস  দেয়। সভাপতির  টার্ম ছিল  একবছর এবং দ্বিতীয়বার সভাপতির আসন অলঙ্কৃত করার কোন  নিয়ম  না থাকায় চলন্ত গাড়িটা যেন ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে গেল। পরে টুকটাক  রিপেয়ারিং হলেও  সেই মাত্রায় আর পৌঁছাল না। ধীরে ধীরে ক্রমহ্রাসমান  সদস্য সংখ্যা ক্লাবকে একটা প্রায় সাইনবোর্ডে  পরিণত করল যদিও  গজুদার  কোন পরিশ্রমে ঘাটতি ছিলনা কিন্তু কথা আছে না যথা রাজা তথা প্রজা। যদি সভাপতি শুধু আসনে বসার  জন্য ই হয় তাহলে তাকে ধাক্কা দিয়ে আর কতদূর  নিয়ে যাওয়া যায়? 

কিন্তু প্রতিভা এমনই  একটা জিনিস  যা কোন না কোন ভাবে বিচ্ছুরিত  হবেই। শুরু হলো গজুদার  লেখা এবং কিছুদিনের  মধ্যেই  লেখাগুলোর  প্রাসঙ্গিকতা ভীষণ  বলিষ্ঠ ভাবে প্রতীয়মান  হতে লাগল।  যে কোন  লেখক, তিনি যাই লিখুন  না কেন, যদি পাঠকের  পৃষ্ঠপোষকতা না পান তাহলে তাঁর  উদ্যমে অবশ্য ই ভাটা  পড়তে বাধ্য। কিন্তু কেউ যদি তাঁকে উৎসাহ দেন তা ছোট্ট  চারাগাছে  জল দিয়ে মহীরুহে  পরিণত করতে পারে। গজুদার প্রচেষ্টায় আমার  কাজ  ছিল সেই চারাগাছে জল দেওয়ার মতন। প্রথম প্রথম সেই বলিষ্ঠতা না থাকলেও  ক্রমে ক্রমে তা যথেষ্ট  মজবুত  লেখা হতে থাকল। একের  পর এক লেখা আসতে লাগল  এবং আমিও  চাতক পাখির  মতো লেখার  আশায় থাকতাম।  তারপর হঠাৎই  দেখি যে লেখার  সংখ্যা কমে কমে  একেবারেই  শূন্যে এসে ঠেকে গেল। ভাবছি হয়তো গজুদা বাইরে গেছেন কিংবা অন্য কোন কাজে ব্যস্ত আছেন।  কয়েকবার  টেলিফোন  করেও সাড়াশব্দ না পাওয়ায় যথেষ্ট  উদ্বিগ্ন  হয়ে পড়লাম।  হঠাৎই  একদিন  টেলিফোনের  অন্য প্রান্ত থেকে সাড়া পেলাম।  লেখা না আসার  কারণ  জানতে চাওয়ায় যা উত্তর  পেলাম  তাতে স্তম্ভিত  হয়ে গেলাম।  শুনলাম  বৌদি মানে গজুদার  স্ত্রী মানসিক ভাবে অসুস্থ।  প্রচন্ড  ধাক্কা খেলাম উত্তর শুনে। তিনি এতটাই  শুচিবাইগ্রস্ত হয়ে গেছেন  যে কেবল স্নান  আর ঠাকুর  দেবতাদের  সেবা ছাড়া আর কিছুই  করেন না। দুর্ভাগ্যবশত তাঁদের  কোন সন্তানাদি না থাকায় সংসারের  সেই আঠাটাই কোনদিন  জমাট  বাঁধেনি। আর তার নীটফল মানসিক  অবসাদ। বৌদি কারো  হাতের  রান্না খাবেন  না, হোম ডেলিভারি তো দূর অস্ত। সুতরাং গজুদাকেই ঘর ঝাঁট দেওয়া, মোছা, রান্না বান্না সব কিছুই  করতে  হয়। তারপরও  লিখতে বসলেই  বৌদির  চেঁচামেচি  শুরু হয়ে যায়। শুনে মনটা  খুব খারাপ হয়ে গেল। এই ব্রহ্মান্ডে একা সূর্য ই তো নয়, বহু ছোট বড় নক্ষত্র, গ্রহ উপগ্রহ  আছে যদিও  সূর্য  তুলনামূলক ভাবে কাছে থাকার  জন্য  তার উপস্থিতি সব সময়ই মনে পড়িয়ে দেয় কিন্তু রাতের আকাশে যখন  তিনি থাকেন  না তখন  চাঁদের  স্নিগ্ধ মহিমা বা ঝিকমিক করতে থাকা বহুদূরের নক্ষত্রগুলো  কি দৃষ্টিনন্দন  নয়? গজুদার লেখা রবীন্দ্রনাথ  বা অন্যান্য  নামী সাহিত্যিকদের  মতো না হলেও  তার ও একটা আলাদা বৈচিত্র্য  রয়েছে। বিরিয়ানি খেলেও  শুক্তোর ও তো একটা আলাদা স্বাদ  আছে।


উদ্বৃত্ত

ফাটকওয়ালা বাড়িটার সামনে আজ অনেক লোকের ভিড়। অনুত্তম  বা ডাকনামে  অনু বলে যার পরিচিতি, এই পাড়ারই  ছেলে কিন্তু অনেকদিন  বাদে নিজের শহরে এসে দেখছে অনেক পরিবর্তন। বেশ ডাকাবুকোই তো ছিল  সে এবং সেই কারণেই  তার পরিচিতির  ব্যাপ্তি ছিল বিস্তৃত।  খেলাধূলো, পড়াশোনায় যথেষ্ট  নামী ছেলে থাকায় সকলেরই  খুব  প্রিয় ছিল। কিন্তু বহুদিন পরে ফিরে এসে এতটা পরিবর্তন  সে আশা করেনি। ফাটকওয়ালা বিশাল বাড়িটা তার যথেষ্টই  পরিচিত এবং ঐ বাড়িতেই  থাকা উদো দা তো একসময় অনুর আইডল ছিল। দীর্ঘদেহী উদো দার চেহারা ছিল পেটানো এবং উনিও  খেলাধূলোয় বিশেষ  পারদর্শী এবং যে কোন  লোকের  বিপদে আপদে ঝাঁপিয়ে পড়তেন  বলে উদো দা যে সকলের কাছের মানুষ  হবেন  সেটা বলাই বাহুল্য এবং অন্য অনেকের  মতোই  অনুও উদো দার ভীষণ  বড় ভক্ত ছিল।

উদো দার ভাল  নাম একটা নিশ্চয়ই  ছিল কিন্তু খুব  কম লোকই  তার ভালনামটা জানত। আর নাম জেনে কাজ কি? প্রয়োজনে রাত বিরেতে যাকে ডাকলেই  পাশে পাওয়া যায় তাতে নামের  কি দরকার, উদো দা উদো দা ই। ব্যাস সাফ কথা। কিন্তু ঐ নামের  পিছনে একটা রহস্য  বা সত্য লুকিয়ে আছে যেটা অনু ভাবলেও  ঠিক  বুঝে উঠতে পারেনি। উদো দা যে স্কুলে পড়তেন  সেই স্কুলের  মাস্টার মশাই ছিলেন  সদানন্দ বাবু।  পাড়ার পূজো উদো দাদের  বাড়িতেই  হতো। একদিন  সদানন্দ বাবু গল্প  করতে করতে বলে ফেললেন  উদো দার  ভাল নাম। সবাই  উদগ্রীব  হয়ে শুনছে স্যারের কথা। উদো দার আসল নাম  উদ্বৃত্ত নারায়ণ মিত্র। সবাই  হাঁ হয়ে গেল ঐ অদ্ভুত  নাম শুনে।  সদা দা, এইরকম  নামকরণের  কি অর্থ  থাকতে পারে, পানু বাবু জিজ্ঞেস করলেন।  সদানন্দ বাবু অনেক  পুরনো লোক, উদো  দার দাদুকে ভাল মতন চিনতেন।  তাহলে  শুনুন  ঐ নামের  পিছনে আসল কি কারণ। এই যে বিশাল  বাড়িটা দেখছেন  যেখানে  আমরা বছর বছর  পূজো করছি, এটা উদোর  দাদুর  বাড়ি। উদোর  বাবারা ছিল পাঁচ ভাই এবং উদোর বাবা  ছিল  সবচেয়ে বড় ভাই। বলদেব বাবু বা উদোর  বাবা, এই যে দেখছেন  উদোকে, তার এককাঠি বাড়া।বলদেব  বাবুও  ভীষণ  জনদরদী ছিলেন এবং তাঁর ই গুণ উদো পেয়েছে। তাঁর ছোট ভাইদের  সব বিয়ে থা হয়ে ছেলেপুলে হয়ে যাওয়ার  পর বলদেব বাবু  যখন  কুমড়োকাটা  ভাসুরের  দায়িত্ব  পালন  করছেন  তখন  মায়ের  একান্ত অনুরোধ  ফেলতে না পেরে বলদেব বাবু বিয়ে করেন  আর তার  বেশ  কয়েকবছর  পর উদোর  আগমন। বলু দা বা বলদেব বাবুর  সম্বন্ধে তাঁর ডাকসাইটে জাঁদরেল উকিল বাবা কোনদিন ই উচ্চাশা  পোষণ করতেন না এবং কথায় কথায় অপদার্থ  হারামজাদাটার কিস্যু হবেনা বলতেন  যদিও  বলুদাও ওকালতি  করতেন কিন্তু বাবার সঙ্গে কিছুতেই  বনতো না। বলদেব বাবু ছিলেন  জনতার  উকিল  আর উদো টাও পড়াশোনায় খারাপ  ছিলনা এবং বাবার মতোই সেও হয়েছিল  জনতার উকিল। ওর দাদু অবশ্য  উদোর  ওকালতি  দেখে যেতে পারেননি কিন্তু স্কুলে ভর্তির  সময় খানিকটা  তাচ্ছিল্য ভরেই  নাম দেন উদ্বৃত্ত নারায়ণ মিত্র।  সেই উদ্বৃত্ত  মুখে মুখে  হয়েছে উদো।

উদো দা ছিলেন  অকৃতদার।  জনগণের  সেবা, বিনা পয়সায় বা নামমাত্র  পয়সায় গরীবগুর্বোদের  হয়ে মামলা লড়া এই ছিল  তাঁর  নেশা। পয়সা বিশেষ  করতে পারেন নি উদো দা কিন্তু তাঁর  দরজা ছিল  সব সময়ের জন্য  খোলা। মামলা  জিতে টাকা না দিতে পেরে গরীব মানুষ টা হয়তো মদের  একটা বোতল দিয়েছে, তাই সই। হারামজাদা আমাকে এবার  না খাইয়েই  মারবে বলে বোতলটা  রেখে দিয়েছেন আর আরও  একটা তীক্ষ্ণ  গালাগাল  বর্ষণ করে ভাগিয়ে  দিয়েছেন। আজ শহরের  এখানে ওখানে ছড়িয়ে থাকা  মুসলমান পাড়া, বাগদী পাড়া, মেথর পাড়া, মুচি পাড়া, ডোম পাড়ার আবাল বৃদ্ধ বনিতা জড়ো  হয়েছে তাদের চলে যাওয়া বাপ মা উদো দাকে একবার চোখের  শেষ দেখাটা  দেখতে এসেছে ফাটকখোলা বাড়ির মাঠে। কাল থেকে ফাটকটা  বন্ধ  হয়ে যাবে চিরতরের  জন্য  এই সাধারণ  মানুষ গুলোর  কাছে, পাহারা দেবে উদো দার ডাকসাইটে জাঁদরেল উকিল দাদুর  ভূত। ঐ বড় মাঠটা  আজ কানায় কানায়  ভর্তি এই অতি সাধারণ  গরীবগুর্বোদের ভিড়ে। কান্নার  রোল  উঠেছে আমাদের  বাপ মা চলে গেল বলে। ভগবান,  আল্লা এ কি তোমার  বিচার? হঠাৎই আর্তনাদ ভরা চিৎকারের  রেশ  বেড়ে গেল উদো দার  ভাইপোকে দেখে। ওই মুখাগ্নি  করবে বলে এসেছে , বড্ড ভালবাসত  যে ওকে। ওর জলভরা  চোখ অনুকে  দেখেও  চিনতে পারল না যদিও  অনু তাকে চিনতে পেরেছে। অনুর মনটা ও খুবই  ভারাক্রান্ত।  এতদিন  বাদে চেনা শহরটায়  এসে অনেকের কাছে অচেনা কিন্তু যে লোকটা  চিনতে পারতো সেই লোকটাও  আজ বহু দূরে  চলে গেছে। 

সংসারে যতদিন  প্রয়োজন ততদিন ই সবাই  মনে রাখে আর প্রয়োজন ফুরোলেই  হয়ে যায় উদ্বৃত্ত। তখন  উদো দা বা উদ্বৃত্ত নারায়ণ মিত্র জানতে পারে যে এই জনমের  মতো তার প্রয়োজন শেষ। অতএব,  চলো ফিরে যাই তাঁর  কোলে।