Monday, 17 June 2024

সাম্রাজ্য

ছোটবেলায় ইতিহাসে প্রশ্ন আসতো সম্রাট  হিসাবে আকবর ও আওরঙ্গজেবের তুলনা।দুজনেই ছিলেন প্রবল প্রতিপত্তি মুঘল সম্রাট এবং সাম্রাজ্যের পরিধিও  তাঁদের বিশাল ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু সম্রাট  হিসাবে আকবর ছিলেন উদার এবং অন্য ধর্মের গুণীজনেরাও তাঁর সভাসদ আলোকিত করেছেন যেখানে সম্রাট আওরঙ্গজেব একজন গোঁড়া মুসলমান এবং অন্য ধর্মের প্রতি অনীহা। বিভিন্ন লোকের  বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া তাঁদের  সম্বন্ধে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে পড়তে হয়েছে বিভিন্ন দেশের  রাষ্ট্র নায়কদের কথা, তাঁদের  উত্থান ও পতনের কথা এবং মনে মনে কারও কারও কথা রেখাপাত করেছে হৃদয়ে। কেউ কেউ আদর্শ নায়কের ও স্থান নিয়েছেন ।

কখনও কখনও নিজেদেরকেও  তাঁদের ই আদর্শে গড়ে তুলতে চেয়েছি কিন্তু সাম্রাজ্য স্থাপন সেটা কি করে সম্ভব। আকবরের বিরাট  সাম্রাজ্য না হয় নাই বা হলো কিন্তু ছোটখাট  ফ্ল্যাটের  মালিক তো আমরা হতেই  পারি এবং সেটাকে সাম্রাজ্য হিসেবে মনে করতে তো কোন বাধা নেই।  হোস্টেলের সিট থেকে মেসে অনেকের সঙ্গে একটা রুমে থাকা সেটাও একটা বিরাট  অভিজ্ঞতা। একটা ছোট্ট খাট এবং খাটের তলায় একটা ট্রাঙ্ক,  একটা স্যুটকেস এবং ব্যাগ এবং তারই পাশে জুতো, চটি সব গাদাগাদি করে রাখা,  মাথার কাছে বা পায়ের কাছে রাখা একটা টেবিলে রাখা কিছু বই খাতা এবং একটা টেবিল ল্যাম্প যাতে অসুবিধা না হয় গভীর রাতে পড়াশোনার জন্য । দেওয়াল ধরে দুটো পেরেকে বাঁধা দড়িতে ঝুলছে জামা কাপড়--- এই নিয়েই সাম্রাজ্য।  ঐ খাট বা খাটের তলা বা টেবিল এইখানে আমারই আধিপত্য,  এখানে অন্য  কেউ কিছু রাখতে গেলেই সম্রাটের অনুমতি নিতে হয়। এটাই বা  কম কিসে? নিজের গ্রামের কোন  চেনা পরিচিত  ছেলে শহরে কোন কাজে এসেছে, রাতটা কাটাতে হবে কিন্তু পকেটের  রেস্ত সেরকম  নেই, তখন অগত্যা মধুসূদন আমার  খাটের  অর্ধেক।  দুজনে ঐ ছোট্ট খাটে কত আরামে থেকেছি। তার কাজ একদিনে না হলে তিন চারদিন ও আমার  গেস্ট হিসেবেই থেকেছে। আমার  সাম্রাজ্য  ছোট হলেও  একজনকে তো আশ্রয় দিতে পেরেছি এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন  জন আমার  সাম্রাজ্যে অতিথি হিসেবে থেকেছে , এর থেকে বড় আনন্দ  আর কিসে আছে? 

প্রত্যেক ছেলে বা মেয়েরই  কিছুদিন হোস্টেলে বা মেসে থাকা উচিত।  এতে অন্যদের সঙ্গে সুখ দুঃখের  ভাগীদার হওয়া যায়। যেসব ছেলেমেয়েরা বাড়িতে থেকেই  পড়াশোনা করেছে বরাবর, যারা কোনদিন  হোস্টেল বা মেসে থাকেনি তাদের খুব কম জনেই নিঃস্বার্থপর হয়েছে। ব্যতিক্রম  অবশ্যই আছে কিন্তু সংখ্যায় নিতান্তই কম। মেসে থাকাকালীন বহু ভিন্ন চরিত্রের  লোকের  সংস্পর্শে আসা যায় এবং তাদের কাছ থেকে অনেক কিছুই শেখা যায়। রমেন দা ছিলেন এক আদর্শ লোক। যেমন সুন্দর হাতের  লেখা, আঁকা এবং ঝকঝকে চেহারা, দারুণ স্মার্ট , এককথায় বলা যায় ওঁকে অনুকরণ করলে লাভ বই ক্ষতি নেই। কিছু পড়তে পড়তে গান ধরতেন  নিজের  মনে আর মাঝেমধ্যেই একটা লেখা নিয়ে এসে পড়তে বলতেন আর পরে জিজ্ঞেস করতেন  কেমন লাগল। যাদবপুর  ইউনিভার্সিটির আর্কিটেকচার বিভাগের  গোল্ড মেডালিস্ট হঠাৎই  বিদেশে একটা লোভনীয় চাকরি পেয়ে যাওয়ায় মেস এবং দেশ ত্যাগ। মফস্বলের ছেলেরা বড় শহরে এসে কেমন যেন হকচকিয়ে যায়। যাবার  আগে একটা দামী কথা বলে গেলেন, " ভীড়ের মধ্যে হাঁটবে  কিন্তু নিজেকে কখনোই ভীড়ে হারিয়ে ফেলো না।" কি দারুণ সুন্দর কথা, আজও  মনে পড়ে তাঁর কথা যদিও  দ্বিতীয়বার তাঁর সঙ্গে আর দেখা হয়নি। প্রফেসর সেন রুমমেট  ছিলেন, এক আশ্চর্য মানুষ।  আমরা সবাই যদিও  দুটো চোখ, দুটো কান, একটা নাকের মালিক কিন্তু সবার দৃষ্টিভঙ্গী এক হয়না বা সবাই একই  জিনিস  একই ভাবে শোনেন না। প্রফেসর সেন নিজেকে প্রফেসর  বলতেন কিন্তু তিনি ছিলেন  আদতে টিউটোরিয়াল হোমের  মাস্টার মশাই। প্রায়ই ঠিক সময়ে টাকা দিতে পারতেন না বলে মেসের মালিকের গঞ্জনা শুনতেন আর সবার জিনিস ই তিনি নিজের  মনে করে ব্যবহার করতেন,  সেটা টুথপেস্ট ই হোক বা  সাবান বা শার্ট ই হোক না কেন। জামাটা দেখতে না পেলেই জানতাম  যে ওটা প্রফেসর সেনই পড়ে গেছেন। কিছু বলাও যেতনা, একটা ম্লান  হাসিতে সবাই মাত  হয়ে যেত। শিবুদা ছিলেন  শিবপুর থেকে পাশ করা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার।  অদ্ভূত  দর্শন তাঁর। একঝাঁক  তরুণীর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ দেখতে যে মেয়েটি ,তাকেই উনি পছন্দ করতেন  বান্ধবী হিসেবে পেতে। একদিন  কৌতূহল চেপে থাকতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম তাঁর এই অদ্ভূত  সিলেকশনের কথা। একটা দারুণ  বুদ্ধিমানের হাসি হেসে বললেন,
"ভাই , আমি কম্পিটিশনে যেতে চাইনা। সবাই সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটির  সঙ্গেই আলাপ করতে চাইবে আর আমি সেখানে পাত্তাই পাব না। দরকার কি এত ঝামেলাতে ? আমি তাকেই বন্ধু হিসেবে পেতে চাই যার সঙ্গে আমি নিশ্চিন্ত মনে নির্ভয়ে কথা বলত  পারব এবং যে আমার উপর ভরসা করে ফুরুৎ করে পালাবে না।" সত্যিই তো, শিবুদার যুক্তি তো  একদমই  ফেলনার  নয়। গজুদার মেসে আসা বাড়িতে রাগারাগি করে। কিছুদিনের জন্য  থাকলেও মেসের সবাইকে মাতিয়ে রাখতেন।  রাগ পড়ে গেলে ফিরে গেলেন  বাড়িতে কিন্তু সেই ছোট্ট স্মৃতির কথা তিনি ভোলেন নি, বিয়ের সময় আমাদের সবাইকে নিমন্ত্রণ  করেছিলেন। দীপক, শক্তি, সুভাষ  প্রায় সমবয়সী থাকায় চুটিয়ে আড্ডা চলত। দীপকের ঘুমের কথা না বললেই নয়। পরেরদিন সকালে ইন্টারভিউ আছে চাকরির। আমার উপর ভার  পড়ল ঘুম থেকে ওঠানোর।  ঠিক সময়ে ডেকে দেওয়ায় , ধন্যবাদ বলল আর তাতে ধারনা হলো যে উঠে পড়েছে কিন্তু আমার  চলে যাওয়ার পর আবার ঘুমিয়ে পড়ল এবং বেলা দুটোয় যখন  ঘুম  ভাঙল ততক্ষণে ইন্টারভিউ শেষ। কিন্তু ও ছিল  এক অসাধারণ  ব্রিলিয়ান্ট ছেলে। ঐ কোম্পানির বড় সাহেবের  দীপকের উপর নজর ছিল।  উনি বললেন  যে ঠিক  আছে পরের শুক্রবার তোমার  ইন্টারভিউ  হবে। বৃহস্পতিবার  দীপক আমাকে বলল," আমি উঠে গেছি বললেও তুমি ছাড়বে না, আমাকে ধরে দাঁড় করিয়ে আচ্ছা করে ঝাঁকিয়ে  দেবে, দরকার  হলে চোখে জলের  ঝাপটাও  মারবে।" পরদিন  সকালে ওকে উঠিয়ে শুধু ঝাঁকানিই নয় , সোজা তৈরী করে ট্যাক্সি করে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিয়ে অফিস  যাওয়া। শক্তি সবসময়ই  ফিটফাট,  ড্রেস সম্বন্ধে ভীষণই  পার্টিকুলার। সুভাষ ছিল সদাই হাসিখুশি।হুগলির  খন্নানের সুজিত  ছিল পাশের ঘরে। বেদম জ্বরে যখন  বেহুঁশ,  তখন  সারারাত জেগে জলপটি দিয়ে হাওয়া করে একই খাটে ঘুমিয়ে পড়েছিল পাশের ঘরে নিজের  খাটে না গিয়ে। অমলদা, ধীরেন দা আমাকে প্রায় একরকম  জোর করে বুঝিয়ে নতুন মেসে নিয়ে গেল।
ধীরে ধীরে মেস জীবনের সমাপ্তি।  গানবাজনা  করতে চাইলে  মেসে থেকে সম্ভব নয় বলে আলাদা ঘর নিতে হলো। তখন  ব্যাচেলর  ছেলের বাড়ি ভাড়া পাওয়া সোজা ছিলনা কিন্তু কেন জানিনা ভদ্রমহিলার  পছন্দ  হলো আমার কথা বার্তা শুনে। তখন  আমার  সাম্রাজ্য হলো মেজানাইন  ফ্লোরের  একটা ঘর। মাথায় বিশেষ  উঁচু  নয় কিন্তু এই সাম্রাজ্যেই আমি মহীয়ান।  বাড়ি থেকে বিয়ের কথাবার্তা ওঠায় সাম্রাজ্য বিস্তার করার  প্রয়োজন  হলো এবং হাউসিং বোর্ডের ছোট্ট  একটা দুই কামরার ফ্ল্যাট নেওয়া হলো। কর্মসূত্রে বিভিন্ন জায়গায় থাকতে  হয়েছে এবং অফিসের  দাক্ষিণ্যে অনেক বৃহৎ  পরিসরে আশ্রয় হলেও নিজের  সাম্রাজ্য বলতে সেই দুই কামরার  ফ্ল্যাট যা সরকারের অনুমতির পর তিন কামরার হয়েছে। যখন  ভাবি যে একটা খাট থেকে তিন কামরার  ফ্ল্যাটে উত্তরণ, তখন নিজেকেও  একটু কেমন রাজা রাজা ভাবতে ইচ্ছে করে। ছোট হলেও  এখানে তো আমিই রাজা এবং এটাই আমার  সাম্রাজ্য। 

Wednesday, 12 June 2024

জামাইষষ্ঠী

কথায় আছে জন,  জামাই, ভাগনা তিন নয় আপনার। কথাটার দম কতটা আছে একটু যাচাই করা যাক। আজ জামাইষষ্ঠীর দিনে প্রথমে মধ্যম জন অর্থাৎ জামাইকে নিয়েই আলোচনা হোক, পরে সময় পাওয়া গেলে জন এবং ভাগনাকেও আলোচনায় আনা যাবে।
আগে বেশিরভাগ সময়েই জামাইষষ্ঠীর দিন ছুটি পড়ত না। ক্কচিৎ কদাচিৎ রবিবার পড়ত এই বিশেষ  জামাইবরণের দিনটি। এসব সত্ত্বেও সরকারি অফিসগুলো খাঁ খাঁ করত কর্মীদের  অনুপস্থিতিতে। কেউ বা অনেক আগে থেকেই  ছুটির দরখাস্ত  দিয়ে নিশ্চিন্তে ছেলেমেয়ে বৌকে নিয়ে ট্রেনে বা বাসে পাড়ি দিত ( দূরবর্তী জায়গা হলে) আর শহরের  মধ্যে হলে সাতসকালে স্নান টান করে সেজেগুজে বেড়িয়ে পড়ত শ্বশুর বাড়ির দিকে যাতে ভিড়ে জামাকাপড়ের ভাঁজ নষ্ট না হয়ে যায়। সবার তো একই রকম চিন্তা, সুতরাং বাস বা লোকাল ট্রেনে সাতসকালেই গাদাগাদি ভিড়। কেউ বা আবার  ভিড় এড়াতে আগের রাত থেকেই শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান।  এই মাগ্গিগণ্ডার বাজারে শ্বশুর মশাইদের তো  নাভিশ্বাস  ওঠার  যোগাড়। কিন্তু শ্বশুর মশাই রা অতি কষ্টে মনের  দুঃখ মনেই চেপে রেখে যতটা স্বাভাবিক হওয়া যায় ততটাই করতেন কিন্তু যাঁরা অত্যন্ত  শাঁসালো শ্বশুর এবং পয়সার  কোন অধিবধি নেই তাঁরা একদম হৈচৈ বাধিয়ে মেয়ে,জামাই,  নাতিনাতনিদের নিয়ে উৎসবে মেতে উঠতেন। একান্নবর্তী পরিবারে ভাইদের মেয়ে জামাই ও তাদের  পরিবারের   সবাই মিলে এক বিরাট  উৎসবের  আয়োজন  হতো। 
এইরকম ই  এক পরিবার সিংজীমশাই। পদবী ছিল  সিংহ কিন্তু পাড়ায় বুড়ো, বুড়ি, ছোঁড়া,  ছুঁড়ি সবার  কাছেই  এই পরিবার ছিল সিংজীমশায়ের বাড়ি এবং ঐ বাড়ির  ছেলেমেয়েরাও  সিংজীমশায়ের ছেলে বা ভাইপো বা নাতি বা নাতনি নামেই পরিচিত  ছিল। হয়তো  বা একটু বাড়াবাড়িই  ছিল কিন্তু কাকে দোষ  দেওয়া যায়, লোকজন তাদের  ঐভাবে ডাকলে সিংজীমশায়ের কি দোষ?  যাই হোক, জামাইষষ্ঠীর কয়েকদিন আগে থেকেই বাড়িতে কেমন যেন  এক উৎসবের আবহ তৈরী হতো। আগের দিন  সন্ধের ট্রেনে গ্রাম থেকে বিশু বাইন পুকুরের সদ্য ধরা মাছ এনেছে। শুধু মাছই নয়, এনেছে জমির কামিনীভোগ ও গোবিন্দভোগ চাল, তেল, ঘি ও গুড়। গুড়ের  রঙ দেখলে মনে হবেনা ছুঁয়ে দেখার কিন্তু একটু আঙুলে লাগিয়ে মুখে দিলেই বোঝা যায় কি স্বাদ। কামিনীভোগ চালের পোলাও এবং গোবিন্দভোগ চালের  পায়েসের গন্ধে ম ম করে ভরে উঠত সারা বাড়ি এবং ছড়িয়ে পড়ত সারা মহল্লায়। আম এসেছে সাদুল্লা ( আজকের  দিনের  হিমসাগর), মোলায়েমজাম, রানী,  বিমলী এবং কালাপাহাড় কিন্তু সেরার সেরা কোহিতুর পাওয়া না যাওয়ায় সিংজীমশায়ের আক্ষেপ জামাইবরণ ঠিকঠাক  হলো না।
গিলে করা পাঞ্জাবি আর সুপারফাইন ধুতিতে সজ্জিত  জামাই বসে আছেন সোফায়। ভাইয়ের জামাই তখনও  এসে পৌঁছায়নি। সিংজীমশায় ঘরবার করছেন  আর ভাইকে বলছেন একবার ফোন করে জিজ্ঞেস করতে কোথায় আছে। তা করতে করতেই এসে পড়েছে ভাইয়ের জামাই। সাজের ঘনঘটায়  তিনিও কম যাননা। আজ জামাইদের আবাহন প্রথম তারপর সব কিছু। মার্বেল পাথরের  মেঝেতে গালিচা আসন পাতা হয়েছে। বিরাট প্লেটে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে নানান ফল ও বিভিন্ন ধরণের  মিষ্টি এবং কাঁসার বাটিতে দেওয়া হয়েছে গোবিন্দভোগ চালের  পায়েস। পিলসুচের উপর জ্বলছে প্রদীপ,  মূহূর্মূহু শঙ্খনাদে বরণ  হচ্ছে জামাইদের।  শ্বাশুড়ি , খুড়শ্বাশুড়ি ও পিসশ্বাশুড়িদের একে একে ফোঁটা দেওয়া শুরু হলো এবং প্রণাম ও আশীর্বাদের ঘনঘটায় সারা বাড়িতে ঘোষিত হতে থাকল  সিংজীমশায়ের বাড়ির জামাইষষ্ঠী। আশীর্বাদ করার পর কানে হলুদ মাখানো সলতে  দেওয়া হতো প্রত্যেকের  তরফে। ঐ একটাই  যা অত্যন্ত  বিরক্তিকর। জামাই ফলমূল খেয়ে লুচি দিকে হাত বাড়াতেই কান থেকে ঝুলে পড়ল একটা সলতে যাতে ধুতি এবং পাঞ্জাবি দুটোই  গেল একটু পাঁশুটে হয়ে। অবশ্য  প্রাপ্তির  পরিমাণ  এতটাই যে এতে জামাইরা সামান্যতম বিচলিত  হলোনা। ফোঁটা পর্ব সমাধার পর বিরাট  ঢেকুর তুলে সোফায় গা এলিয়ে  দেওয়া। এরপর এসে গেল দার্জিলিঙের সুন্দর চা। আর পায় কে জামাইদের, আজ তাদেরই  দিন। এরপর বাকিদের  জলখাবারের আয়োজন।  একটু আধটু ধূমপানের  ইচ্ছে থাকলেও  সিংজীমশায়ের চোখের  আড়াল  হওয়া এক দুঃসাধ্য ব্যাপার।  বড় আরাম কেদারায়  বসে থাকা সিংজীমশায়ের  হাতলে রাখা হাভানার জ্বলন্ত চুরুট  ও অ্যাশট্রে এবং তাতে মাঝেমধ্যেই সুখটান ও ধোঁয়া ছাড়া এবং সেই ধোঁয়ায় অন্যদের  কাশির উদ্রেক করা। মাঝেমধ্যেই  জামাইদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন তাদের  পরবর্তী কর্মসূচী।
একে একে জলখাবার পর্ব সমাপ্ত হতে হতেই মধ্যাহ্নভোজনের পর্ব। এখন না একটু পরে বলে খানিকটা সময় না কাটাতে পারলে খাবে কি করে? পেটে তো একটু জায়গা থাকা দরকার।  একটু ঘুরে বেরিয়ে আসতে না পারলে টাঁসানো তো আর যাবেনা। অথচ এক একটা পদ যেন  এক এক ধরণের  অমৃত। শ্বাশুড়ি ছোট  মেয়েকে দিয়ে সিংজীমশাই কে ডেকে পাঠিয়ে একপ্রস্থ  ক্লাস নিলেন,  ঐরকম  হাঁ করে জামাইদের  সামনে বসে থাকলে ওরা নিজেদের  মধ্যে কি করে কথাবার্তা বলবে? একদম বেআক্কেলে লোক বলায় সিংজীমশায়ের  একটু অভিমান  হলো এবং মেয়েকে দিয়ে চুরুটও অ্যাশট্রে আনিয়ে নিয়ে নিজের  ঘরের দিকে চলে গেলেন  এবং জামাইরাও  একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। সিগারেটের ধোঁয়া ধীরে ধীরে চুরুটের ধোঁয়াকে বাইরে বের করতে লাগল। 
মধ্যাহ্নভোজনের বিরাট পর্ব। কামিনীভোগ আতপ চালের  পোলাও,  বাদাম দিয়ে লাল শাক, নারকেল কোঁড়া দিয়ে মুগের ডাল,পাঁচ রকম ভাজা, পটলের  দোরমা,  মাছ,মাংস, চাটনি, পাঁপড়ভাজা,অমৃতর দই ও মিষ্টি। মিষ্টির  বর্ণনা না দিলে সিংজীমশায়ের অপমান  হয়। কৃষ্ণনগরের সরভাজা ও সরপুরিয়া,  বহরমপুরের ছানাবড়া, গিরীশের সন্দেশ,  কান্দীর কৃষ্ণপ্রসন্ন ও জনাইয়ের  মনোহরা, চন্দননগরের মালাই চমচম আর হাবড়ার কাঁচাগোল্লা। এত রকমের আয়োজন অথচ এই পরিমাণ  খাওয়া একমাত্র  দারা সিংরাই পারেন।  এতসব বিভিন্ন  ধরণের  খাবারের  স্বাদ  নিতে গেলে অন্তত এক সপ্তাহ  ছুটি না নিলেই নয়। বিয়ের পর প্রথম জামাইষষ্ঠীর  সময় সিংজীমশায়ের জামাই  দুদিনের  বেশী ছুটি পাননি। তাঁর উপরওয়ালা  সাহেব যাতে জামাইএর উপর অসন্তুষ্ট  না হন সেইকারণে সাতদিন  ছুটি কাটিয়ে বড় সাহেবের জন্য একবাক্স বিভিন্ন  ধরণের  মিষ্টি ও একঝুড়ি মুর্শিদাবাদের আম পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। হাজার  হলেও  প্রথম জামাই ষষ্ঠী  তো।
এই জমজমাট  জামাই ষষ্ঠীর পর নিশ্চয়ই জন বা ভাগনার  গল্প বললে আসরটাই নষ্ট  হয়ে যাবে বলে ওটা মুলতুবি থাকল।

Friday, 7 June 2024

মর্যাদার প্রতীক -- সেকাল ও একাল

মর্যাদার প্রতীক বলতে কি বোঝায়? কত সুন্দর প্রশস্ত জায়গা জুড়ে ঝাঁ চকচকে বাড়ি, দেশীর তুলনায় বহু বিদেশী মহা মূল্যবান গাড়ি, বাড়ির  বাইরে কড়া প্রহরা,  ঢুকতে বা বেরোতে গেলে যেখানে আদ্যোপান্ত বিবরণ জানিয়ে যেতে হয় এবং বোর্ডে লেখা দেখা যায় ," আপনি সি সি টিভির নজরবন্দী।" এইরকম বাড়ির  কোন ছেলে বা মেয়ে যদি বন্ধু হয় এবং নিজেরাও যদি সমগোত্রীয়  না হয় তাহলে বন্ধুত্ব তো কোন দূরস্থান,  স্বপ্নেও ভুলে ভাবতে পারা যায়না যে সেখানে কোন বন্ধু থাকে। যদিও  বা ছোটবেলায় কোন এক স্কুলে একই বিভাগে পড়ে থাকে এবং ঐ মর্যাদাশালী পরিবারের ছেলেটি যতই পিছনের  সারির হোক না কেন, অর্থের জোরে সে বিদেশে কোন এক কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি হাসিল করে তুরীয়ানন্দে কোন  নামী কোম্পানির প্রায় সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত  হবে যেখানে তারই সঙ্গে পড়া প্রথম হওয়া ছাত্র অনেক নীচে কাজ করে। এ নিয়ে অনেক সিনেমা হয়েছে এবং ব্যাপারটা ক্লিশে হয়ে গেছে। সুতরাং ঐ বিষয়ে আলোচনা করে লোকের  বিরক্তি উৎপাদন না করাই ভাল। 
এইরকম  তথাকথিত একটা সমাজ গড়ে উঠেছে যারা মেঘনাদের মতো আকাশেই ওড়েন এবং মাঝে মাঝে যখন প্রয়োজন  পড়ে তখন মেঘের  ফাঁক থেকে এক চিলতে ঝলক দেখিয়ে সাধারণদের বলেন, " আমি আছি, আমি তোমাদের ই একজন।" কোন কাজে  আসেনা এরা সমাজের  কিন্তু সমস্ত রকম সুযোগ সুবিধা এঁরাই ভোগ করেন আর আপামর জনতা বিস্ফারিত  নেত্রে অবলোকন করেন  আর মনে মনে অস্ফূট স্বরে বলেন  আহারে কি কষ্টটাই না হচ্ছে বাছাদের আমাদের  কথা ভেবে। নিজেদের  হাজারো কষ্ট থাকলেও  দেঁতো হাসি হেসে বলেন আপনারা এত কষ্ট করে আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে আমাদের কষ্ট লাঘব করার জন্য  এসেছেন,  এতেই আমরা ধন্য। সবসময়ই  এক  প্রজাসুলভ মনোভাব  নিয়ে জোড় হাত করে আপামর জনতা তাদের আশীর্বাদ জানায় সেই রাজপুত্রকে,  তা তিনি যতই ভণ্ড  হোন বা অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত হোন না কেন। এটা একদিনে হয়নি, দীর্ঘদিন দাসত্ব করার  ফল এটা। বহুদিন নবাবী আমলে এবং পরবর্তীকালে ব্রিটিশদের অধীনে কাজ করার  সুবাদে আমাদের শিরায় ও ধমনীতে প্রবাহিত রক্তে চালিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত  দাসত্বের বীজ। এর একমাত্র  সমাধান  এই দূষিত রক্ত শরীর থেকে নিষ্কাশিত করে স্বাধীনতার  বীজ বপন করা। এটা কি করে সম্ভব? হ্যাঁ রাস্তা আছে, সেই রাস্তার নাম শিক্ষা। প্রকৃত শিক্ষাকে যদি সার্বজনীন করা যায় তাহলে ঠিক  ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য  খুঁজে বের করতে পারবে এবং এই ব্যক্তিপূজার অবসান  হবে।
মনে হচ্ছে আলোচনার বিষয়বস্তু থেকে একটু  লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ তো গেল এখনকার মর্যাদার  প্রতীক।  কিন্তু পঞ্চাশ ষাট বছর বা তার ও আগে মর্যাদার  প্রতীক  ছিল  অন্য রকম। একটু খোলসা করা যাক। অনেকদিন আগে তুলসীমঞ্চে প্রদীপ ( দিদিমা, ঠাকুমারা বলতেন পিদিম) জ্বালিয়ে  সন্ধ্যারতি শাঁখের আওয়াজের সঙ্গে এবং ঘরে ঘরে জ্বলে ওঠা লন্ঠনে বোঝা যেত  তাঁরা কত বড় বাবু। লণ্ঠনের আলোয় পড়তে বসা সব ছেলেমেয়েদের আওয়াজের মাধ্যমে বোঝা যেত কি ধরণের  বাড়ি। যদি সেই বাড়িতে লণ্ঠনের জায়গায় ইলেকট্রিক  লাইট জ্বলত,  তাহলে শুরু হতো ফিসফিসানি। নিশ্চয়ই বাড়িতে কিছু বাড়তি অর্থাগম  হয়েছে সেটা ভাল ফসল হওয়ার জন্য ই হোক বা জমিজমা  বিক্রিপাট্টা করার জন্যই হোক। সিধুদের বাড়িতে সেদিন  একটা বেশ দরজাওয়ালা  ছোটখাট ঘর এল।  পরে জানা গেল যে ঐ ঘরথেকে জিনিসপত্র বের করলে খুব  ঠাণ্ডা লাগে হাত দিলে , যার নাম রেফ্রিজারেটর। বেশিরভাগ  লোকই  তো রোজ বাজার  যান, রোজ মাছ আনেন এবং রাতে শেষ হয়ে গেলে আবার  পরের দিন বাজার  যাওয়া। কোন কোন  সময় একটু বেশি আনা হয়ে গেলে ভেজে রাখা পরেরদিনের জন্য। মাছকে যে ফ্রিজে রেখে অনেকদিন ধরে খাওয়া যায় এই ধারণাই কারও ছিল না। আমরা খেলাধূলো করে সিধুদের বাড়ি যেতাম ঐ ঘর প্রমাণ ফ্রিজ  থেকে ঠাণ্ডা জল খাওয়ার জন্য আর সেই কারণেই সিধুর একটু রোয়াব সহ্য করতেই হতো। এর পরেই আবার  একটা আশ্চর্য হবার মতো ঘটনা। সিধুদের  বাড়িতে ফোন এল। পাড়ার মধ্যে এই একটাই ফোন।  বোঝাই যায় যে সিধু কোথা দিয়ে হাঁটছে। আর পাড়ার  লোকের ও হ্যাংলামি যেন দিন দিন বাড়তে লাগল। যে লোক জীবনেও  ভুল করে কারও  প্রয়োজনে  এগিয়ে আসেননি তিনিও সিধুদের  বাড়ির  ফোন নম্বর অন্যদের  দিয়ে দিলেন।  কিন্তু প্রত্যেক জিনিসের  একটা মাত্রা থাকা উচিত। তাঁরা বিপদে আপদে সবাইকে সাহায্য করেন বলেই  সবাই তার মজাটা লুটবে এটা হওয়া ঠিক নয়। একদিন  ফোনটা বেজে উঠল। বাড়িতে কেউ নেই, সুতরাং একরকম  বাধ্য হয়েই  সিধুর মা ধরলেন  ফোন। অপরপ্রান্তে একটি অল্পবয়সী মেয়ের গলা।" মাসিমা, একটু প্রণবকে ফোন টা দেবেন?"
" প্রণব, সে কে? আমিতো তাকে চিনিনা মা।"
সিধুর মা সাধারণত বাড়ির বাইরেই বেরোন না। পাড়ার কিছু ছেলেদের নাম তাঁর ছেলেদের  কাছে শোনেন বলে তবু কয়েক জন কে চেনেন । কিন্তু সে তো ডাক নাম। কিন্তু মেয়েটি সেই সময়ের তুলনায় বহু যোজন  এগিয়ে। বলল," মাসিমা প্রণব মানে পিনু।  ওর ডাকনাম পিনু। "
" ও পিনু! কিন্তু মা, ও তো থাকে আমাদের  বাড়ি থেকে পাঁচটা বাড়ি পরে। বাড়িতে এই মূহুর্তে কেউ তো নেই যে খবর দেব। তোমার  কিছু বলার  থাকলে বলো, আমি পরে খবর পাঠিয়ে দেব।"
" ঠিক আছে মাসিমা, ওকে বলে দেবেন  আমি সন্ধে বেলায় ওকে ফোন করব, ও যেন  থাকে।"
কি স্পর্ধা ! এতো সাঙ্ঘাতিক বেহায়া  মেয়ে। ফোনটাতো রেখে দিলেন।  কিন্তু পাড়ায় প্রণবের  নামে পড়ে গেল ঢিঢি। মুখচোরা প্রণব যেন আরও  গুটিয়ে গেল এই ফোনের  পরে। সিধুর বাবা নিতান্তই ভদ্রলোক।  কিন্তু সেই ভদ্রতার ও তো একটা সীমা আছে। পরিবারের সবাইকে বলে দিলেন মেসেজ টা নিয়ে রাখতে এবং সময় সুযোগ মতো খবরটা দিয়ে দেবার জন্য। সিধুদের  আমাদের  পাড়ার  সবচেয়ে সচ্ছল পরিবার। কোন কিছু নতুন  জিনিস ওদের বাড়িতেই প্রথম আসে। মহালয়ার আগে বাড়িতে এসে গেল এক পেল্লাই ফিলিপসের রেডিও।  সিধুর মা আমার  মাকে এসে বলে গেলেন,  " দিদি, বাড়িতে নতুন রেডিও  এসেছে। কাল ভোরবেলায় চলে আসবেন,  একসঙ্গে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুর মর্দিনী শুনব। আমার  মনে একটু লাগল।  আমাদের  বাড়িতে রেডিও নেই বলে আমাদের  পাশের  বাড়িতে গিয়ে শুনতে হবে?  না কখনোই নয়। কিন্তু যারা বড়লোক,  তারা নিজেদের অন্যদের কাছে একটু জাহির  করতে না পারলে ঠিক  যেন  সন্তুষ্ট হতে পারেনা। ভোরবেলায় রেডিও তে কুঁ উ, কুঁকুঁকুঁ উ, কুঁকুঁকুঁউ, কুঁকুঁকুঁউ শুরু হতেই পাড়ার সমস্ত লোক হামলে পড়ল। প্রথমে ওদের  বাড়ির  বারান্দা , তারপর আমাদের  বাড়ির  বারান্দা ভরে উঠল। ওদের  বাড়িতে না গিয়ে ও ঘুমের  বারোটা গেল বেজে। মহিষাসুর মর্দিনী তো তখনকার  মতো শেষ  হলো কিন্তু এরপরেও বহুদিন  মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচ অজয় বসু, কমল ভট্টাচার্য ও পুষ্পেন সরকারের ধারাবিবরণীতে পাড়ার  সমস্ত  লোকজনদের অনেক আনন্দ  দিয়েছে। কিন্তু আমার  নজর ছিল সিধুর দাদা বিনোদ দার সাইকেলের উপর।ঝকঝকে বটল গ্রীন রঙের সাইকেল,  পুরো চেনকভার,  পিছনের  টায়ারে লেগে থাকা এক ব্যাটারি,  সাইকেল চললেই  টায়ারের ঘর্ষণে সাইকেলের হেডলাইট, পিছনের  লাইট জ্বলত  এবং গাড়ির  হর্ণের  মতো পিঁপ পিঁপ করে আওয়াজ করত। স্ট্যাণ্ডের উপর দাঁড়ানো সাইকেলের  উপর সূর্যর আলো যখন  তেরচা ভাবে পড়ত তখন  আমার  মনে হতো যেন  পক্ষীরাজের ঘোড়া -- মর্যাদার  এক মূর্ত প্রতীক।  শুধু আমাদের  পাড়া কেন সমস্ত শহরে ঐরকম  সাইকেল  আর দুটি দেখিনি।
এখন তো অনেক বড়লোকের ছেলেমেয়েরা বাবার পয়সায় মার্সিডিজ বেঞ্জ বা অডি বা পর্শ চালিয়ে তাদের মর্যাদা জাহির করছে কিন্তু আগের দিনে একটা ঝকঝকে সাইকেল ই ছিল মর্যাদা রক্ষার পক্ষে যথেষ্ট। এখন তো সমস্ত লোকের পায়ে নানাধরণের জুতো বা চটি কিন্তু এ বেশিরভাগ লোকই খালি পায়ে যাতায়াত করত।  হাওয়াই চটির চল অনেক পরে।
ঠা ঠা রোদে খালি পায়ে পথ চলা ছিল এক দুঃসাধ্য ব্যাপার। অনেক সময় রোদে তেতে ওঠা বালির  চরে হাঁটতে বাচ্চাদের পায়ে গাছের পাতা বেঁধে দিত তার বাবামায়েরা।   রিস্ট ওয়াচ হাতে গোনা লোকের হাতে দেখা যেত। এখন লোকের  হাতে পয়সা এসেছে, না খেয়ে লোকের মৃত্যু এখন প্রায় শোনাই যায়না। আটানব্বই নিরানব্বই সালে বিশাল সাইজের মোবাইল খুব কম সংখ্যক লোকের কাছে ছিল  যেটা এখন এক বিপ্লবের  আকার  ধারণ করেছে।  এখন জনমজুর,  কাজের দিদিদের  হাতেও দামী  মোবাইল বলতে থাকে এ দেশের  জিডিপি বেড়েছে। আকাশ  কি উপর থেকে নীচে নেমে এল না আমাদের গতি ঊর্ধগামী?