Tuesday, 30 April 2024

ফিরে দেখা

সময়টা আটাত্তর সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষাশেষি, সম্ভবত আটাশ তারিখ। থাকি লেক গার্ডেন্স স্টেশন প্ল্যাটফর্মের শেষ যেখানে হয়েছে সেই ঢাল দিয়ে নেমেই ডান দিকে দ্বিতীয় বাড়ির  গ্যারাজের উপরের ঘরে। দুই দিকে তিন/ চার ফুট জমি ছেড়ে তৈরী বাড়িটা লম্বাটে ধরণের,  সামনে গ্যারাজ রাস্তামুখো আর বাড়িটা ট্রেনের  লাইনকে লম্বালম্বিভাবে ধরে ফেলত যদি না রেলের জমির সীমানা বরাবর লোহার পোলগুলো না থাকত। লাইনটা বালিগঞ্জ থেকে লেক গার্ডেন্স  হয়ে টালিগঞ্জ ধরে বজবজের  দিকে চলে গেছে। তিনদিকে জানলা( রাস্তার দিকটা বন্ধ) ,আর গ্যারাজের উপর হওয়ার  জন্য  দাঁড়িয়ে  আড়মোড়া ভাঙার কোন উপায়  ছিলনা। ঘরের আসবাবপত্র বলতে একটা চৌকি, একটা বই ভর্তি  ট্রাঙ্ক, একটা স্যুটকেস এবং একটা হারমোনিয়াম , তানপুরা আর একটা টেবিল ফ্যান যেটা আমার  বাড়িওয়ালি মাসিমা দিয়েছিলেন। দিনের খাওয়া বাইরে হোটেলে আর রাতে মাসিমার কাছে।

ঐ বাড়িতে  যাওয়ার পিছনেও একটা ছোট্ট গল্প আছে। ঐ সময় কোন ব্যাচেলর ছেলের ঘর ভাড়া  পাওয়া একটা ভয়ানক কঠিন ব্যাপার ছিল। ব্যাচেলর মানেই ঘরে বসে  মদ খাবে, মাঝে মধ্যে মেয়েবন্ধুরা এসে হৈ চৈ করবে আর এইসব কারণেই কোন বাড়ির মালিক এদের ভাড়া দিতে চাইত না। সত্যিই তো, বাড়ির  মধ্যে বেলেল্লাপনা  কার সহ্য হবে?  ঐ বাড়ি টা একটা ছোট পরিবারকে দেওয়া  হবে বলে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল এবং  সেই কারণেই এক স্বামী স্ত্রী ও ছিল দাবিদার কিন্তু কেন জানিনা  মাসিমার পছন্দ আমাকেই হলো। এই বাড়িতে থাকা চার বছর হয়ে গেল  কিন্তু বাড়ির  ঠিকানা জানিনা। হঠাৎই  বাবা একদিন জিজ্ঞেস  করায়  আমি কোন  উত্তর দিতে পারলাম না আর বাড়ির সবাই  আশ্চর্য  হয়ে গেল । চারবছর থাকার পরেও যদি কেউ  ঠিকানা না জানে তাহলে  তাকে উদোমাদা ছাড়া আর কি বলে?  লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেল । ফিরে এসেই মাসিমাকে ঠিকানা জিজ্ঞেস  কথায় সবাই হেসেই খুন। যাই হোক  জানা গেল  পঁয়ত্রিশ এ, চারুচন্দ্র প্লেস ইস্ট । জানিয়ে দিলাম বাড়িতে । এতদিন  ছিলাম ঠিকানাবিহীন, আজ আমার ঘর হলো।

একটা কঠিন নিয়মের  মধ্যে  দিন কাটছিল। ভোরবেলায়  উঠে রেওয়াজ,  তারপর স্নান করে ব্রেকফাস্ট করে আনোয়ার শা রোডে যোগেশ চন্দ্র চৌধুরী 'ল' কলেজে, তারপর অফিস, গানের ক্লাস, বাড়ি ফিরে খাওয়াদাওয়া সেরে একটু পড়াশোনা আর দশটার সময়  ঘুমিয়ে  পড়া।  বেশ চলছিল রুটিন, হঠাৎই  এল বৃষ্টি। প্রথমদিকে এত তেজ ছিলনা , কলেজ অফিস তবু ম্যানেজ  করা যাচ্ছিল,  কিন্তু আটাশ তারিখ সকালে  কলেজের পাশে থাকা  চায়ের দোকানে যেখানে  প্রত্যেক দিন আমরা চা খেতাম , তার মালিক ঝন্টু দা বলল , " দাদা, আকাশের অবস্থা ভাল নয়,  আপনি এই দু পাউণ্ড রুটি আর কিছু  বিস্কুট  নিয়ে যান। আপনি তো একাই থাকেন,  কিছু না হলেও পেটে কিছু পড়বে।"  নিয়ে নিলাম রুটি ও বিস্কুট কিন্তু মাঝে জন ( ওর আসল নাম ছিল  অমিয় ব্যানার্জি, কিন্তু ক্লাসের সবাই  ওকে জঙ্গলি বা জঙ  যার ভদ্রস্থ নাম জন)  আমাকে একটা রিকোয়েস্ট  করে বলল," আমার  বাড়ি থেকে  টাকা আসেনি, পয়সাও কিছু নেই,  আমাকে তোর কাছে দুদিন  থাকতে দিবি?" এর পরে তো আর কিছু বলা যায়না। চলে আয় বলে ফেললাম কিন্তু  পরে যে কি  ঘটল সেটা না বললেই  নয়। মাসিমা তো আমার  মতনই  খাবার  করেছিলেন,  সেটাই দুজনে মিলে ভাগ করে খেলাম। পরদিন সকাল  বেলায় জল থৈ থৈ করছে, দোকান পাট সব বন্ধ। কোন  গাড়ি, বাস বা ট্যাক্সি রাস্তায় দেখা যাচ্ছেনা, শুধু জল আর জল। লেক গার্ডেন্স থেকে হাঁটতে হাঁটতে দেশপ্রিয় পার্কের  অফিসে। যাদের না বেরোলে একদমই  চলবে না তারা এসেছে টাকা তুলতে কারণ তখন  কোন এটিএম ছিলনা। জন আমার  সঙ্গেই  এসেছে। তারামহল, কেরালা কাফে সব বন্ধ। ল্যান্সডাউন রোড জলে জলময়, কোথাও হাঁটুজল  তো কোথাও কোমর পর্যন্ত । ল্যান্সডাউন  মার্কেটের কাছে কয়েকটা হোটেল ছিল, জল ভেঙে সেখানে ও যাওয়া হলো কিন্তু সব বন্ধ। হঠাত মনে পড়ল শিশুমঙ্গল হাসপাতালের  কাছে আমাদের  ক্লাসের একটা মেয়ে থাকে। সেখানেও গিয়ে চা, বিস্কুট আর চানাচুর ছাড়া আর কিছুই মিলল না। লজ্জায়  মুখ ফুটে বলতেও পারলাম না যে একটু ভাত ডাল  খাওয়ালে ভাল হয়। খিদে তো লেগেছে, পকেটে টাকাও আছে কিন্তু নেই  কোন  খাবার।দুজনে মিলে প্রিয়া সিনেমায়  ঢুকে পড়লাম কিন্তু  পেট করছে চোঁ চোঁ, সিনেমা দেখতে  ভাল লাগে নাকি?  ইন্টারভ্যালে বাইরে এসে কিছু বাদাম ভাজা খেয়ে সিনেমা না দেখেই আবার জল ভেঙে  লেক গার্ডেন্সের বাড়িতে ফেরা । রাতে ঐ পাঁউরুটি খানিকটা খেয়ে আর কলসির জল কিছুটা গলায়  ঢেলে দুই বন্ধুতে ঐ চৌকিতে কোনরকমে রাতটা কাবার করলাম। এদিকে খাবার  জল ও শেষ  হয়ে আসছে। সমস্ত কলগুলো জলের তলায় এবং তখন বোতলের জল ও ছিল না। সেই যুদ্ধকালীন  পরিস্থিতিতে  ভগবানকে ডাকা ছাড়া আর কোনও  রাস্তাই ছিলনা। তিনদিন পর বৃষ্টির যেন  একটু ঢুলুনি এল। জলটাও বেশ নেমে এল। একটা দুটো করে বাস চালু হল। শুনলাম  ট্রেন ও চলতে শুরু করেছে।জনের কাছে কোন  টাকা না থাকায়  ওকে গোটা  তিরিশেক টাকা দিলাম  এবং  জল নামতে থাকায়  বন্ধ হোটেলগুলোও খুলতে থাকল। তিনদিন পর লেক গার্ডেন্সের  বেনারসী হোটেলে যখন  দুজনে মিলে  ভাত খাচ্ছি তখন মনে হচ্ছিল  যেন কতকাল এই হাভাতেগুলো খায়নি। যাই হোক,  জন কে শেষ পর্যন্ত যে পেট ভরে খাইয়ে বাড়ি পাঠাতে পেরেছিলাম এটা ভেবেও খানিকটা স্বস্তি পেয়েছিলাম । জন ও ফিরে গেল আর আমার ও মাসিমার কাছে খাওয়া শুরু হলো কিন্তু এরপর জনের সঙ্গে আমার আর দেখা হয়নি।

Friday, 26 April 2024

এক বিরল অভিজ্ঞতা

এক বন্ধুর  মুখে শোনা তার নিজস্ব অভিজ্ঞতার  কথা। চেষ্টা করছি তার হুবহু বর্ণনার কিন্তু স্মৃতি যদি বিরোধীতা করে তাহলে নিজগুণে মাফ করার প্রার্থনা রইল।
বন্ধু আমার তার নিজের এক বন্ধুর সঙ্গে একটা প্রকল্পে জুড়ে গেছিল যে বিশেষ  এক আদিবাসীদের মধ্যে বিয়ে কিভাবে সম্পন্ন হয়। শুনতে যতটা সহজ সরল নির্বিষ মনে হচ্ছিল,  বাস্তবে কিন্তু যথেষ্ট  কঠিন  ছিল।  প্রথমত, ঐ আদিবাসীদের গ্রামে যাওয়া এবং তাও তাদের  বিয়ের মরশুমে এবং সর্বোপরি একজন নিমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যাওয়া। কিন্তু আমার  বন্ধুর  বন্ধু ছিলেন  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের  এক কৃতী ছাত্র এবং গবেষণা রত এবং অমায়িক  হবার  জন্য  তার বন্ধুত্বের পরিধিও  ছিল বিরাট। তারই  সঙ্গে কলেজে পাঠরত এক বন্ধুর  কথা মনে পড়ল যে ছিল আদিবাসী  সম্প্রদায়ের এবং তারই  এক আত্মীয়ার বিয়ের কথা চলছিল। কিছুদিনের  মধ্যেই  সেই সম্পর্ক বিয়েতে পূর্ণতা পেতেই সুযোগটা এসে গেল।

ঝাড়গ্রামের অনতিদূরে এক আদিবাসী গ্রাম।  তারা দুজনেই  ঝাড়গ্রামের ট্যুরিস্ট লজে উঠল এবং বন্ধুর  গ্রামে যেখানে বিয়ে হবে সেখানে পৌঁছে গেল। শহরের ঝাঁ চকচকে বিয়ের  থেকে এটা সম্পূর্ণ  আলাদা। ছোট ছোট চালার  মাঝে একটা প্রশস্ত  জায়গা যেটা পরিষ্কার  করা হয়েছে এবং গোবর দিয়ে নিকানোর  ফলে একটা আলাদা মাত্রা পেয়েছে। ছাদনাতলার চারপাশে চারটে কলাগাছ  পোঁতা হয়েছে  এবং  আমপাতা  সূতলির দড়িতে বেঁধে চারটে কলাগাছকে চারকোণে বেঁধে একটা বর্গক্ষেত্রাকার জায়গা করা হয়েছে। পাত্র পক্ষের ধামসা মাদলে চারিদিক  দিরি  দিরি দিম  দিরি দিরি দিম শব্দে মুখরিত  হয়ে উঠেছে এবং কন্যাপক্ষের  কয়েকজন  মেয়ে সেই তালে তালে নৃত্যের  ছন্দে জায়গাটা মাতিয়ে তুলেছে । যতক্ষণ  এই বিয়ের অনুষ্ঠান  চলতে থাকল ততক্ষণ এই ধামসা মাদল ও নৃত্য  পালাক্রমে চলত  থাকল আর এক দারুণ  মাদকতা সৃষ্টি হল আকাশে বাতাসে।  কন্যার মামা পাত্রীকে একটা বড় ঝুড়িতে বসিয়ে মাথায় নিয়ে সমস্ত অতিথি অভ্যাগতদের কাছে নিয়ে যাচ্ছিল  এবং পাত্রী তার কোলে রাখা  এক মাটির হাঁড়িতে থাকা হাড়িয়ায় ( ভাত পচিয়ে  একরকম তৈরী মদ) বড় ডালসমেত একটা আমের শাখা সেই  হাড়িয়ায় ডুবিয়ে অনেকটা যেমন পূজোর  পরে শান্তিজল দেওয়া হয় সেইরকম ভাবে ছিটাচ্ছিল।  এরপর পালা পাত্রের, সেই হাড়িয়ায়  সিক্ত আম্রপল্লব দিয়ে পাত্রের  মাথায় সপাং সপাং করে মার। পাতায় লেগে থাকা হাড়িয়া যখন চুঁয়ে চুঁয়ে গাল দিয়ে গড়িয়ে মুখের  কাছে আসছে তখন জিভ দিয়ে একবার  এদিক একবার  ওদিক করে তার আস্বাদ  গ্রহণ করা।
এরপর চলল পাত্রপক্ষ ও কন্যাপক্ষের  আত্মীয়স্বজনের আলাপ করানোর  পালা। গানের মধ্য দিয়েই  সেই আলাপ পরিচয়ের সমাপ্তি। কোনরকম আগে থেকে কোন প্রস্তুতি না নিয়ে এই পরিচয় পর্ব একটা দারুণ  অনুভূতি। এরপর পালা উদরপূর্তির।  প্রত্যেক অতিথিকে একটা গ্লাসে সেই হাড়িয়া দেওয়া হয়েছে এবং শালপাতার চোঙায়  দেওয়া মুড়িতে ঝোলা গুড় দেওয়া হচ্ছে আর অতিথিরাও সেই গুড় মুড়ি খাচ্ছে আর হাড়িয়ার গ্লাসে চুমুক  দিচ্ছে। আমার বন্ধু তো কোনদিন  হাড়িয়া খায়নি আর ওটা না খেলেও দুইপক্ষকেই  অপমান  করার সামিল। যাই হোক , কপালে যা থাকে বলে ছোট্ট  একটা চুমুক যেই না দিয়েছে অমনি জ্বলন শুরু হলো সেই গলা থেকে নামতে নাভির  শেষ  অবধি  এক অসহ্য জ্বালা। গুড় মুড়ি তো শেষ  হলো  কিন্তু গ্লাসের  হাড়িয়ায় চুমুক  দেওয়ার সাহস আর হলো না। এরপর  এল ভাত এবং অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী।  যে পরিমাণ  ভাত  দেওয়া হল পাতে  আমাদের  পরিভাষায়  তা বিড়াল  না ডিঙানো ভাতের  পরিমাণ। আমাদের  চারপাঁচজন লোক তা খেতে পারে। যাই হোক, খাওয়া দাওয়া সেরে  এক অসাধারণ  অভিজ্ঞতা ঝুলিতে ভরে ফিরে আসা।

সম্পূর্ণ  শোনার ভিত্তিতে এই ঘটনার  অবতারণা। কিছু ভূলভ্রান্তি থাকলে অবশ্যই  ক্ষমা প্রার্থী।

Thursday, 18 April 2024

গরমের ছুটি

ছোটবেলায় গরমের ছুটির কথা মনে পড়লেই একটা আলাদা উন্মাদনা জেগে ওঠে। তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি, সকাল বেলায় স্কুল। প্রাইমারি স্কুলের ক্লাস শেষ হলেই একটু বাদেই সেকেন্ডারি স্কুল সাড়ে দশটা থেকে শুরু হবে। সুতরাং দশটার মধ্যেই  ক্লাস শেষ, আর মজাই মজা। একটু খেয়েদেয়েই বাড়ির  মাঠে বা হুইলার হোস্টেলের মাঠে বল নিয়ে খেলা। রোদের  তাপ বাড়লেও কোন তোয়াক্কাই নেই। বাড়ি ফিরে অবশ্যই  বকুনি খাওয়া কিন্তু যেন গা সয়ে গেছে, ভ্রূক্ষেপ নেই। কয়েকদিন  বাদেই গরমের  ছুটি পড়বে। শহরে আমবাগানের ছড়াছড়ি।  কালবৈশাখীর ঝড় হলে তো বটেই, এমনিতেও মোটামুটি একটু দমকা হাওয়া দিলেই আমের ভারে নুয়ে পড়া গাছগুলো যেন একটু  স্বস্তির  নিঃশ্বাস ফেলে বলে ওঠে," বাব্বা,  আর পারিনা তোদের ভার বইতে , এবার  দে একটু মুক্তি।"  কাশীশ্বরী স্কুলের পাশেই কেবু সিংহদের বিরাট আমবাগান, পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। শুধু আম ই নয়, লিচু, জাম, বেল, নারকেল গাছের সারিতে ভর্তি সেই বাগান আর রয়েছে তাদের  পাহারাদার। কিন্তু কাশীশ্বরী স্কুলের  পাঁচিলের  দিকে একটা গর্ত রোজ ই একটু একটু করে বাড়ছে যাতে ঐ গর্ত দিয়ে বাগানে ঢোকা যায়। ঐ পাঁচিলটা হচ্ছে স্কুল ও বাগানের মাঝে, সুতরাং সারাবার দায় কার সেটা নিয়ে একটু ঠেলাঠেলি তো আছেই কিন্তু বাগানের  ফল সামলাতে গেলে সিংহদের ই উদ্যোগ  নিতে হয় । নেয় ও তারা কিন্তু যারা ফল চুরি করে তাদের  দৌরাত্ম্যে রোজ ই গর্ত টা একটু একটু করে বাড়ে আর সেই  ফাঁক দিয়েই রোজকার  চোর, সঙ্গে আমাদের  মতন ছিঁচকেরাও ঢোকে। একদিন  সবাই বাগানে  ঢুকেছি,  আম কুড়াচ্ছি আর মাঝে মাঝেই দু চারটে ঢিল ও ছুঁড়ছি আর পটাপট আম ও পড়ছে। বিশুর উপর ভার ছিল আম কুড়ানোর। যতক্ষণ  আম কুড়ানো হচ্ছিল   ততক্ষণ  কোনও  সাড়াশব্দ  নেই আর মালিরাও টের পায়নি কিন্তু ঢিল  ছুঁড়তেই  রে রে করে তেড়ে এল মালিরা ,আমরা তো সব ভাগলবা, পড়ল ধরা ক্যাবলা  বিশু। মালিরা তাকে ধরে নিয়ে গেল মালকিন সিংয়ের কাছে যারা আবার  বিশুদের ই আত্মীয়। উনি তো এক লহমায়  চিনতে পেরেছেন  বিশুকে, বললেন, " আমি তোমাকে বিলক্ষণ চিনি, দাঁড়াও তোমার  বাবাকে খবর দিচ্ছি।" তিনি মালিকে বললেন  বিশুর জামাটা খুলে নিতে। হাড় জিরজিরে বিশুর খালি গায়ে বাড়ি ফিরে আসা। মায়ের চোখ এড়িয়ে বাড়ি ফিরেই অন্য একটা জামা চড়িয়ে তখনকার মতো রেহাই। কিন্তু বিপদ বাড়ল তখনই  যখন  সিংহদের  বাড়ি থেকে সেই মালি জামা সমেত  এক ঝুড়ি আম নিয়ে বিশুদের  বাড়ি দিয়ে গেল। বিশুদের  বাড়িতে প্রত্যেক বার ই আম আসে সিংহদের  বাড়ি থেকে কিন্তু সঙ্গে বিশুর  জামা দেখে বিশুর মা একটু আশ্চর্য  হয়ে গেলেন।  কি ব্যাপার,  এই জামা কোথা থেকে পেলে তুমি জিজ্ঞেস  করতেই সব কুকীর্তি ফাঁস। বিশু তো ঐ মালিকে আসতে দেখেই বাড়ির  ত্রিসীমানায় নেই,  কিন্তু বাড়ি তো ফিরতেই  হবে, ভেবেই পাচ্ছেনা কি উত্তর  দেবে ও। যা হবার  হবে, সত্যি কথাই  বলবে বিশু। জানে ভাল  করে যে মায়ের ডাঁটিসার রান্নাঘরের  পাখাটার ঘা কতক পড়বে পিঠে, তবুও  সত্যি ই বলবে। মা তো জিজ্ঞেস করলো,আর বিশুও সবিস্তারে সব ঘটনাই বলল। ভাবছে এই বোধহয় পড়ল পিঠে কিন্তু না, সেটা হলনা, উনি খুব শান্ত ভাবে বললেন যে দেখ, ওরা আমাদের  আত্মীয়, প্রত্যেক বার আমাদের  বাড়িতে ওরা আম পাঠায়,সেক্ষেত্রে ওদের  বাড়ির  বাগানে যাওয়া একদম উচিত  হয় নি। মায়ের  পা ধরে কেঁদে ফেলল  বিশু এবং প্রতিজ্ঞা করল বন্ধুরা হাজার  বার বললেও ও আর যাবেনা। মা কিছু না বললেও  বিশু মনে মনে খুবই  লজ্জিত এবং তার জন্য বাবামায়েদের সম্মান নষ্ট হয়েছে এই ভেবে নিজেই কাঁদতে লাগল।
 কদিন বাদেই গরমের ছুটি পড়ছে এবং স্কুলেও  ছিল এক দারুণ  ট্র্যাডিশন।  সমস্ত মাস্টার মশাইদের মিষ্টি খাওয়াতো  ছাত্ররা। যে সমস্ত মাস্টার মশাই রা ঐ বিভাগের  ক্লাস  নিতেন তাঁদের  সকলকেই  খাওয়ানো হতো এবং প্রত্যেক  মাস্টার মশাইরাই আমন্ত্রিত হতেন। ছাত্ররা নিজেদের  মধ্যে চাঁদা তুলে এই খরচটাই সামলাতো।  শুধু প্রাইমারি সেকশনেই  নয় সেকেন্ডারি সেকশনেও এই ব্যবস্থাটা  দীর্ঘদিন চালু ছিল।  মাস্টার মশাইরাও গরমের  ছুটিতে টাস্ক দিতেন আর বলতেন যে একদম ফাঁকি মারবে না, ভাল করে পড়াশোনা করবে।  প্রাইভেট  পড়ানো থাকলেও  মাস্টার মশাইরা ছাত্রদের পড়াশোনার বিষয়ে যথেষ্ট সাহায্য  করতেন। এক অদ্ভুত সুন্দর  ছাত্র মাস্টার মশাইদের  সম্পর্ক।  শুধু ছাত্ররাই  নয় তাদের  বাবামায়েদের  সঙ্গেও  এক সুন্দর  সম্পর্ক  থাকত।  সমাজের  পরিবর্তনের  সঙ্গে মাস্টার মশাইদের সঙ্গে সম্পর্ক ও অনেক বদলেছে, এখন অনেকটাই  যেন আর্থিক  লেনদেনের সম্পর্ক।  মাস্টার মশাই রাও ছাত্রদের  ভালবাসতে ভুলে গেছেন,  ছাত্ররাও  মাস্টার মশাইদের সম্মান জানাতে ভুলে গেছে, অনেকসময় ই মাস্টার মশাইদের নিগৃহীত ও হতে হচ্ছে। আমরা চলেছি কোথায়? পারিনা কি ফিরিয়ে আনতে সেই সোনালী দিনগুলো?

Saturday, 6 April 2024

সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত

অনেক সময় আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে কোনটা বেশী আকর্ষণীয় ---- সূর্যোদয় না সূর্যাস্ত? দুই যুযুধান গোষ্ঠীর ই অনেক বাঘা বাঘা প্রবক্তা রয়েছেন যাঁরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে জামার আস্তিন গোটাচ্ছেন অপর পক্ষকে ঘায়েল করার জন্য তাঁদের  যুক্তি দিয়ে। সত্যি কথা বলতে কি কোনদিন  সিরিয়াসলি ভেবেই দেখিনি যে কোনটা বেশী সুন্দর। 
সূর্যোদয়ের পক্ষে প্রথম বক্তা তাঁর বক্তব্য শুরু করলেন কবিগুরুর আজি এ প্রভাতে রবির কর আবৃত্তি করে। বর্ণনা তাঁর দারুণ সুন্দর,  বক্তব্য ও অত্যন্ত বলিষ্ঠ।  ভোর বেলায় ধীরে ধীরে আলো ফুটে উঠছে আর অন্ধকারের ঘনত্ব ধীরে ধীরে কমছে, পূর্ব দিকে লাল আভা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে,ঘোষণা করছে তাঁর  আগমন বার্তা। পাহাড় এবং সমুদ্রে সূর্যোদয় একটু যেন ভিন্ন। পাহাড়ের চূড়ার  পিছন দিক থেকে তিনি যেন টুকি টুকি বলে লুকিয়ে পড়ছেন আর অনেকক্ষণ  একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখটা একটু কচলে ভাল করে দেখার জন্য   যেই না হাতটা চোখে দিয়েছে অমনিই তাঁর  আত্মপ্রকাশ  হলো আর সূর্যোদয় দেখার  জন্য  হাজির  সমস্ত লোক সমস্বরে চিৎকার  করে উঠল। বেচারা ভদ্রলোক,  সেইসময় ই তাঁর  চোখ রগড়াতে হলো। আগামীকাল  আবার  আকাশের  অবস্থা কেমন থাকবে না থাকবে এই ভেবে মনটা খুব খারাপ  হয়ে গেল। তবেএটা সাময়িক  প্রতিক্রিয়া। তিনি প্রচণ্ড জোরালোভাবে বক্তব্য  রাখতে থাকলেন  যে নতুন সূর্যর আগমনে নতুন  দিগন্ত  খুলে যাবে এবং পৃথিবী নতুন উদ্যমে জেগে উঠবে এবং ঝেড়ে ফেলবে পুরোন  সবকিছু। নতুন প্রভাত, নতুন উদ্যম,নতুন আশা সরিয়ে ফেলবে  মনের জঞ্জাল।  এইসব নানাবিধ বিশেষণে তাঁর  বক্তব্য  পেশ হলো এবং পরিশেষে বিরাট হাততালি। জনগণের অভিব্যক্তি দেখে খুবই খুশী বক্তা, ডায়াস ছেড়ে তাঁর  চেয়ারের  দিকে এগিয়ে গেলেন। হাততালি আর থামতেই চায়না। এই পরিস্থিতিতে  এসে অপর পক্ষের  বক্তব্য  রাখা ভয়ানক  কঠিন।  যাই হোক,  হাততালির  রেশ একটু কমতেই অন্যপক্ষের বক্তা ধীরে ধীরে চেয়ার ছেড়ে জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য  রাখার জন্য  মাইক তুলে নিলেন  হাতে। মনে হচ্ছে তাঁর  বক্তব্য  শোনার জন্য  কেউই খুব  আগ্রহী নন। এইরকম  প্রতিকূল  পরিবেশে বক্তব্য  পেশ করা বেশ কঠিন। কিন্তু তিনিও  অত্যন্ত  পণ্ডিত মানুষ,  জনতাকে কি করে আকর্ষণ  করতে হয় তাও তাঁর  অজানা নয়। তিনি শুরু করলেন হাট কবিতা থেকে উদ্ধৃত করে, " বকের পাখায়  আলোক লুকায় ছাড়িয়া পূবের  মাঠ, দূরে দূরে গ্রামে জ্বলে ওঠে দীপ আঁধারেতে থাকে হাট।" পরক্ষণেই  তিনি শ্রোতাদের বিভিন্ন  শ্রেণী থেকে তাঁদের  বয়স জিজ্ঞেস  করতে শুরু করলেন।  কেউ বা বলেন পঁচিশ  তিরিশ, কেউ বা বলেন  সত্তর এবং দেখা গেল বর্ষীয়ান  লোকের  সংখ্যাই অধিকতর যেটার অ্যাডভান্টেজ তিনি পুরোপুরি নেওয়ার চেষ্টা করলেন। শুরু হলো সূর্যাস্তের  সময় পাহাড়ের  বর্ণনা। জ্বলন্ত সূর্য কেমন ম্রিয়মান  হয়ে  আসছে, গনগনে  হলুদ  রঙ কেমন স্তিমিত হয়ে  লাল হয়ে আসছে, আঁধারের  কালগ্রাস যেন গিলে ফেলতে চাইছে সেই পরম শক্তিমান সূর্যকে আর তিনি যেন পাহাড়ের  আড়ালে সেই শক্তিমান অন্ধকারের  থেকে লুকিয়ে পড়তে চাইছেন।  কিন্তু নাছোড়  আঁধার, ছাড়িবনা আজ তোমারে, নির্বল করে গ্রাসিব আজি দেখাব বিশ্বমাঝারে।  সূর্যের  এই আত্মসমর্পণ বিষাদিল আজি মোরে। অসাধারণ এই রূপ সূর্যাস্তের এককথায় অবর্ণনীয়।  সূর্যোদয়ের পরাক্রমী রূপ এবং সূর্যাস্তের এই আত্মসমর্পণের  রূপ এ তো চিরন্তন সত্য।  আমরা আজ জীবন  সায়াহ্নে পৌঁছেছি,  আমাদের  নিজেদের  সাধ্যমত  এই বিশ্বসংসারে দিয়েছি যা পরিপুষ্ট  করেছে আগামীদিনের প্রজন্মকে এবং তারাও তাদের  নিজেদের  সাধ্যমত  এই সংসারে  তাদের কর্তব্য করবে এবং এই চক্র চলতে থাকবে চিরদিন যতদিন  মানব সভ্যতা বজায় থাকবে। পরিশেষে এটাই বলি যে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত এক প্রবহমান  চক্র এবং তাদের  দুজনকেই  জানাই স্বাগত।
হাততালিতে গমগম করে উঠল সারা হল এবং এখানে কোন হারজিত  নেই, সবাই বিজয়ী, বিজয়ী মানবসমাজ। 

Wednesday, 3 April 2024

চল বেড়িয়ে পড়ি

দীর্ঘদিন ধরে প্ল্যান করে বেড়িয়ে পড়ার মধ্যে অবশ্যই আনন্দ আছে কিন্তু হঠাৎই যাব মনে করে দুম করে বেড়ানোর আনন্দ  বোধ হয় আরেকটু বেশী যদি সবকিছুই ঠিকঠাক চলে। কিন্তু তার জন্য যিনি প্ল্যান করলেন  তাঁকে অনেক বেশী ঝুঁকি নিতে হয়, যেটা অল্পবয়সীদের পক্ষে নেওয়া সম্ভব কিন্তু অনেকদিন  আগে যাঁরা যৌবনকে বিদায় জানিয়েছেন তাঁদের  অনেক হিসেব করে এগোতে হয়।

গরমের ছুটিতে  ছেলে, বৌমা ও নাতি নাতনিদের আসা নিয়ে বাসু বাবু ও তাঁর  স্ত্রী খুব  উত্তেজিত।  ঘরদোর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন  করা নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে নিত্যদিন কিছু না কিছু নিয়ে মতান্তর চলছেই। মানে পরিষ্কার  করতে গিয়ে এলোমেলোভাবে চলায় অভ্যস্ত বাসুবাবু নিজের জিনিসপত্র ঠিক জায়গায় দেখতে না পেয়ে মাথা গরম করছেন  আর আগুনকে আগুন  দিয়ে নেভানোর নীতি মেনে বাসুগিন্নীর তাঁর থেকে দুই ডিগ্রী উপরে গলা চড়ানোতে ব্যাপারটা খুব সাধারণ জায়গায় থেমে থাকছে না। আশেপাশের বাড়িতে রীতিমত গুঞ্জন  উঠছে যে বাসু বাবুর বাড়িতে নিশ্চয়ই  বিশেষ কিছু  হতে চলেছে। অবশ্য  এই ফ্যাঁস ফোঁস  যতদিন  চলতে থাকবে ততদিন ই ভাল। যে কোন  একটা স্তব্ধ হয়ে গেলেই ব্যালকনিতে বসে গাছ, পাখি দেখা ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। যাই হোক, এর ই মধ্যে ভাঙা নৌকায় আধখানা ভালবাসা নিয়ে ছেলে আর নাতনি এসে পৌঁছেছে। বৌমার অফিসের  কাজ আর নাতির  ক্লাস কামাই না করানোতে তারা পরে আসবে। দুধের  স্বাদ ঘোলে মেটাতে হলো বাসুবাবুদের। একদিন  কেটে গেল, পরদিন বৌমার নাতিকে নিয়ে আসার কথা। হঠাত খেতে খেতে ছেলে বাবা মাকে সুটকেস গোছানোর  কথা বলতেই তাঁরা আকাশ  থেকে পড়লেন।  একটু শাল, সোয়েটার নেবার কথা বলতেই একটু ধন্দে পড়ে গেলেন বাসুবাবুরা। কি বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা কিন্তু নাতনির আবদারের কাছে মাথা নোয়াতেই হলো । প্ল্যানটা কি জিজ্ঞেস  করাতে তাঁরা জানলেন যে পরদিন  তাঁদের  যেতে  হচ্ছে বাগডোগরা এবং সেখানে সন্ধে বেলায়  বৌমা আসবে নাতিকে নিয়ে এবং সেইদিন  শিলিগুড়িতে থেকে পরদিন যাত্রা হবে কালিম্পঙের পথে। বাসুবাবুরা তো পৌঁছলেন  বাগডোগরা  কিন্তু জানা গেল যে বৌমার  ফ্লাইট কোন বিশেষ  কারণে বাতিল  হয়েছে। সুতরাং প্ল্যান বাতিল করে শিলিগুড়ির কোন  এক হোটেলে যেতে হলো। হোটেল  তারা ঠিকই করে রেখেছিল কিন্তু বৌমা ও নাতিকে বাদ দিয়েই তারা হোটেল  সালুজাতে গিয়ে উঠল। রাতের খাবার  ঐ হোটেলের  রেস্তোরাঁয় সেরে পরদিন সকালে গাড়িতে বাগডোগরা এয়ারপোর্টে বৌমা ও নাতনিকে নিয়ে সরাসরি কালিম্পঙের পথে দিল রওনা। এখন পুরো পরিবার সমেত চেটেপুটে আনন্দ নিতে নিতে চললেন বাসু বাবু ও তাঁর  পরিবার।  মাঝপথে প্রয়াস হোটেলে চায়ের সঙ্গে একটু হাত পা ছাড়িয়ে নিয়ে আবার  চলা শুরু হলো কালিম্পঙের  পথে। বেলাবেলি কালিম্পঙের হোটেল এলগিন সিলভার ওকসে পৌঁছালেন তাঁরা। স্বাগত জানাতে এলগিন হোটেলে মজুত ছিল রাশিয়ান হাস্কি  "ফেরো।" অত বড় সাদা ধবধবে লোমশ কুকুর ফেরোকে দেখে একটু ভয় ই পেয়েছিলেন  তাঁরা কিন্তু এই কাজ ফেরো  গত পনের বছর থেকে করে আসছে। সুতরাং, খুব  শান্তভাবে সবাইকে একঝলক দেখে নিয়ে সব ঠিক আছে এই গ্রীন সিগন্যাল  দিয়ে দিল। দারুণ সুন্দর  এই হোটেল  এলগিন সিলভার ওকস।  দোতলায় পাশাপাশি দুটো ঘরে তাঁদের  ঠাঁই হলো এবং পর্দা সরিয়ে জানলা দিয়ে অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য দেখা গেল। কোথায় যাব, এইখানে বসে থাকলেই তো হৃদয় মন জুড়িয়ে যায়। একটু ফ্রেশ হয়ে  একতলায় ডাইনিং হলে লাঞ্চ করতে আসতে হলো। যেমন সুন্দর  হোটেল, তেমনই সুন্দর  হোটেলের  কর্মীবৃন্দ এবং অসাধারণ খাবার  মেনু। কোনটা ছেড়ে কোনটা খাওয়া উচিত এটা ভাবতে ভাবতেই  একটু একটু করে সব জিনিস  চাখতে চাখতেই  পেট একেবারে ভরপুর।একটু বিশ্রাম  নিয়ে হোটেলের লনে বসে চা খাওয়া সাব্যস্ত হলো। একটু দূরে দূরে রয়েছে ছাতা যাকে ঘিরে রয়েছে বেতের চেয়ার। এইরকম ই একটা ছাতার তলে তাঁরা বসে চায়ের সঙ্গে কিছু টা ও অর্ডার করলেন।  সুসজ্জিত  ওয়েটার কিছুক্ষণ পরেই হাসিমুখে হাজির।  নাতি নাতনিদের আবার  অন্য কিছুর  বায়না, তাও হাসিমুখে তাদের  আবদার মেটালেন সেই সুন্দর  হাসির ওয়েটার।  ভাল  হোটেলের  এইটাই বিশেষত্ব কারণ গোমরামুখো স্টাফদের কেউই পছন্দ  করে না এবং হোটেলের সুনাম  এদের সঙ্গেই জড়িত। রাস্তার পাশেই হোটেল এবং আস্তে আস্তে সেই রাস্তা উপরের দিকে চলে গিয়েছে যার ফলে হোটেলের জানলা দিয়ে অনেক দূর অবধি নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখা যায়। ভিতরের দিকের লনে বসে দূর উপত্যকায় গাছপালা ঘেরা কিছু বসতি, সন্ধে বেলায় আলো জ্বলে উঠে তা আরও  মনোরম  হয়ে উঠেছিল। লনে নানাধরণের ফুলগাছ, একপাশে ফেরোর জন্য  সুন্দর  ঘর, মাঝেমাঝেই এসে তদারকি করে যাচ্ছে অতিথিদের  কোন অসুবিধে হচ্ছে কি না, তারপর নিজের ঘরে গিয়ে বিশ্রাম  কর্তামশায়ের। অনেক রাত অবধি চুপ করে বসে পাহাড়ের  সেই চোখ জুড়ানো দৃশ্য  দেখে রাতের  খাবারের  জন্য ডাইনিং হলে জমায়েত  হলো সবাই। পরের দিন সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে কালিম্পঙ শহরের  দ্রষ্টব্য স্থান দেখার জন্য বেড়িয়ে পড়লেন তাঁরা। ছোট্ট শহর পরিক্রমায় বেশিক্ষণ সময় লাগেনা, তাই বিভিন্ন স্থানে অনেকক্ষণ সময় কাটাতে কোন অসুবিধা হলো না তাঁদের। আর্মির  একটা ক্যাম্পের খুব  কাছে একটা বৌদ্ধমন্দির যেখানে প্রার্থনা চলছে আর সেই কারণেই ভেতরে না গিয়ে বাইরে থেকে পরিক্রমা সেরেই ফিরতে হলো। বৌদ্ধমন্দিরগুলোয় গেলেই কেমন যেন একটা শান্তির পরিবেশ অনুভূত  হয়। এরপর তাঁরা গেলেন  কালিম্পঙের  সায়েন্স  সেন্টারে। অনেকটা ওপরে এই সায়েন্স সেন্টার যেখানে আমাদের  ভারতবর্ষের নামী বিজ্ঞানীদের আবক্ষ মূর্তি দেখে সত্যিই ভীষণ আনন্দ  হয়। কে নেই সেখানে? ডক্টর হোমি ভাবা, বিক্রম সরাভাই,  সি ভি রমন, বীরবল সাহনি,  জগদীশ চন্দ্র বোস, রামানুজম , সত্যেন বোস এবং আরও  অনেক দিকপাল বিজ্ঞানীদের দেখে মনটা উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে। নাতি নাতনির ঔৎসুক্য বাবা মা এবং ঠাকুমা ও ঠাকুর্দাদের মধ্যে সঞ্চারিত  হলো এবং ছোট হলেও  ছিমছাম  এক সুন্দর অডিটোরিয়াম যা সবাইকেই  আকৃষ্ট করে। এবার যাওয়ার পালা ডেলো পার্কে। গাড়ি যেখানে পার্ক করা হলো সেখান থেকে অনেকটা ওপরে উঠতে  হয় ডেলো পার্কের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে। বেশ হাঁফ ধরে যাচ্ছিল  বাসুবাবু ও তাঁর  স্ত্রীর কিন্তু এতদূর এসে না দেখে ফিরে যাওয়া যায়না। সুতরাং মাঝে মাঝেই বিশ্রাম করে ওপরে উঠলেন তাঁরা। ওপরে উঠে পৌঁছানো মাত্রই ঝিরঝির করে বৃষ্টি শুরু হলো।পাহাড়ে বৃষ্টি নামলে যে কত নয়নাভিরাম দৃশ্য  হয় তা সাধারণ  লোকের পক্ষে বর্ণনা করা মুশকিল। কিন্তু ভাসমান  মেঘের একটু দয়ার সঞ্চার হলো,  তাই হাসতে হাসতে ভেসে চলল অন্য দিকে আর বৃষ্টি ও হলো  উধাও।  উপস্থিত সমস্ত  ছেলেমেয়েরা এবং বৃদ্ধ বৃদ্ধারা  সবাই মনে মনে বলে উঠল, " বনরাজি উচ্ছসিল তোমার আগমনে, এখন যাও ফিরে ওই দূরদিগন্তের পানে।" মেঘ সে তো কারো তোয়াক্কা করেনা, চলে গেল , ঘরেখে গেল নূপুরের ছন্দ।  নাতি নাতনিদের ঘোড়ার  পিঠে চড়া, সে এক অপূর্ব  অভিজ্ঞতা। ফিরে আসা হলো এলগিনে ফেরোর সান্নিধ্যে। পরের দিন সকাল বেলায় ব্রেকফাস্ট  সেরে গ্যাংটকের রাজধানী সিকিমের উদ্দেশ্যে যাত্রা। বিদায় ফেরো, বিদায়। জানা নেই এর পরের বার এখানে এলে বৃদ্ধ ফেরো আবার  অভিবাদন  করবে কি না।

শুরু হলো গ্যাংটকের পথে যাত্রা। সাথী সেই পরমাসুন্দরী তিস্তা চলেছে তার নিজস্ব তালে। কত জনপদকে  সিঞ্চিত করেছে তার অববাহিকায় কিন্তু তার রুদ্রমূর্তিও সাঙ্ঘাতিক।  উত্তাল জলরাশিতে ভাসিয়ে নিয়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম।  অনেকটা মা দূর্গার মতন মনে হয়। মায়ের  সেই শান্ত স্নিগ্ধ অভয়ারূপ আর অসুরবিনাশীর রূপ দুটোই যেমন চরম, তিস্তার  রূপ ও অনেকটাই  সেইরকম। কোন কোন জায়গায় চোখে পড়ল ছেলেমেয়েদের  ওয়াটার র‌্যা্ফটিং, নিপুণ  হাতে তাদের নৌকাটাকে জলের  স্রোতের  সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে। নাতনি বড় হলেও নাতিও কিছু কম যায়না। প্রশ্নে প্রশ্নে জর্জরিত করে তুলছে  তাদের  মা ও বাবাকে। মাঝপথে থামতে থামতে ছবি তোলার জন্য পৌঁছাতে খানিকটা বেশী সময়ই  লাগল। এসে পড়ল গ্যাংটকের নরখিল হোটেল।  মনে হয় এটাও সেই কালিম্পঙের এলগিন সিলভার ওকসের একটা চেন। সাজানো গোছানোতে সেই এলগিনের ই প্রতিচ্ছবি। পাশেই একটা স্টেডিয়াম যেখানে চলছে ছেলেদের খেলা। বাইরের লনে বসে থাকতে থাকতেই  ফেরোর ই এক ছোট সংস্করণ দেখে চমকে ওঠার মতো ব্যাপার।  এখানেও  একটা রাশিয়ান  হাস্কি সাদা ধবধবে লোমশ কুকুর,  নাম যার হিলটন।  হিলটনের  বোধহয  এখনও  ট্রেনিং শেষ  হয়নি কারণ  বয়স তার খুবই কম।  যাই হোক সখ্যতা জমতে বেশী সময় লাগল না। ও তো বাচ্চাদের ও খুব  ন্যাওটা। যাই হোক, খাওয়া দাওয়া সেরে গ্যাংটকের ম্যালে যাওয়া স্থির  হলো। ভারী সুন্দর  এই ম্যাল, গমগম করছে এবং শহরের  মান মর্যাদা বাড়াতে সদাই উন্মুখ।বছর পাঁচেক আগে দুহাজার  আঠারো সালে নভেম্বরের  শেষাশেষি একবার  আসার  সৌভাগ্য  হয়েছিল পাণ্ডবসাথী হয়ে কিন্তু এতটুকুও গ্ল্যামার কমেনি সেই ম্যালের। শহরের  প্রাণ কেন্দ্র এই ম্যাল। রাতে নরখিলের অপূর্ব খাবার এবং থাকার এই সুন্দর  বন্দোবস্তে বাসুবাবুদের আনন্দের  শেষ নেই। আগের বারেও  হোটেলটা ছিল ফায়ার ব্রিগেডের ঠিক উল্টোদিকে এবং প্রত্যেকটি ঘরের  জানলা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘায় সূর্যোদয় দেখা যেত। বাসুবাবুদের মনে পড়ল ভোরবেলায় অর্জুনের ডাকে কয়েক মুহুর্ত হলেও সেই সূর্যোদয় তাঁরা দেখেছিলেন।  এর পরে দিন তিনেক থাকলেও তিনি আর দেখা  দেননি, লুকিয়েছিলেন মেঘের ফাঁকে। পরদিন  সকালে বেড়িয়ে পড়লেন বাঞ্জাখারি ঝর্ণা দেখতে এবং সেখান থেকে রামটেক বৌদ্ধ মঠের  উদ্দেশ্যে। রামটেক বৌদ্ধমঠের কাছে কোন  গাড়িকে  যেতে দেওয়া হয়না। মিলিটারিদের  গাড়িতে বৃদ্ধ এবং অক্ষমদের  মঠের  গেট অবধি পৌঁছে দেওয়া হয়। বাসুবাবুদের বয়স দেখে এবং চলাফেরায় অসুবিধা দেখে আর্মির গাড়ি তাঁদের  পৌঁছে দিল এবং ছোট  বলে নাতি নাতনিরাও তাঁদের সঙ্গে গেল। তাঁর  ছেলে এবং বৌমা হাঁটতে হাঁটতে অনেক উপরে থাকা মঠে  পৌঁছাল। মঠের ভিতরে অনেকখানি বর্গক্ষেত্রাকার জায়গা যেখানে সন্ন্যাসীরা  বিভিন্ন  শারীরিক কসরত দেখাচ্ছিলেন যেটা সচরাচর  চোখে পড়েনা। ফেরার পথে আর গাড়ির  প্রয়োজন  হলো না কারণ ঢালু রাস্তা। মাঝপথে ঐখানেই একটা হোটেলে কিছু খেয়ে নিয়ে নরখিল হোটেলে ফেরার পালা। ফেরার পথে  চোখে পড়ল কোন কোন জায়গায় সাদা কাপড়ের  ফ্ল্যাগ বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে হাওয়ায় পতপত করে উড়ছে  আবার কোন কোন জায়গায় সেটা লাল , হলুদ এবং নানা রঙবেরঙের । বাসুবাবুর মনটা উশখুশ করছে কারণটা জানার জন্য  কিন্তু কোন সঠিক  উত্তর  হাতড়াতে না পেরে স্থানীয় ড্রাইভারের  শরণাপন্ন  হলেন। ড্রাইভার  জানাল যে কারও বাড়িতে কোন মৃত্যুশোক হলে সাদা কাপড় এবং কোন  আনন্দানুষ্ঠান হলে রঙবেরঙের পতাকা লাগানো  হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে এই শোকের পরিবেশ একশ আটদিন পর্যন্ত  রাখা হয়।  ঠিক সেইরকম ই  আনন্দানুষ্ঠান ও ঐভাবেই পালন করা হয়। আমরা ভাবি আমরা অনেক কিছুই জানি কিন্তু প্রকৃত পক্ষে আমাদের  জানার থেকে অজানাই  বেশী। সামনা সামনি দুটো ঘরে বাসুবাবুরা এবং তাঁদের  ছেলে বৌমারা আছেন।  নাতনি ঠাকুমা অন্ত প্রাণ,  অতএব বলাই বাহুল্য যে তিনি তাঁদের  সঙ্গেই থাকবেন।  ভোরবেলায় ছোট্ট  ছয় বছরের নাতনি উঠে তার ঠাম্মাম ও ভাইয়ের  জন্য চা করেছে এবং ডাকছে  ভাই ওঠো, ওঠো। ঘরেই রাখা ইলেকট্রিক  কেটলিতে জল গরম করে, চা বানিয়ে ঠাম্মাম এবং ভাইকে ডাকছে , এটা অভাবনীয়।  প্রত্যেক মানুষকেই একদিন  এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়েচলে যেতে হবে কিন্তু কোন কোন সৌভাগ্যবানের এই বাড়তি পাওনা ভগবানের  আশীর্বাদ  বলেই মনে হয়। অনেকেই কথায় কথায় বলেন  যে আজকালকার  ছেলেমেয়েদের  মধ্যে সভ্যতা ভব্যতার  বড়ই  অভাব কিন্তু না তারা খুব  নিশ্চুপে  দেখে যে তার বাবা এবং মা তাদের বাবামায়েদের  সঙ্গে কিভাবে ব্যবহার করছে এবং কোনরকম  বইয়ে না পড়লেও  তাদের মস্তিষ্কতে কিভাবে যেন ঢুকে যায়। বাসুবাবুর হৃদয় পরিপূর্ণ হয়ে উঠল কৃতজ্ঞতায়  ভগবানের প্রতি। পরেরদিন  সকালে যাত্রা শুরু নাথুলার  পথে। 
সঙ্গে নেওয়া হয়েছে কর্পূর এবং অক্সিজেন  সিলিন্ডার নাথুলার উচ্চতার  কথা ভেবে কারণ আগের বার বাবামন্দিরের কাছে গিয়ে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে প্রায় মরতে বসেছিলেন  বাসুবাবু। নাথু লা তো বাবামন্দিরের চেয়েও উঁচুতে। সুতরাং এবার  আর কোন রকম রিস্ক নেওয়া নয়। তবে হিমালয়ের  কোলে যদি কারও  মৃত্যু  হয় সেটা তো ভগবানের ই আশীর্বাদ।  কিন্তু মানুষ ভাবে যে আরও  কিছুদিন  বাঁচলে হয় না?  লম্বা জীবন  নিয়ে কি হবে যদি তা অন্য কারও  প্রয়োজনে না লাগে? সব কথা জেনেও  মানুষ  তো নিজেকেই সবচেয়ে বেশী ভালবাসে। পথে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপূর্ব  রূপ ধরা হলো মোবাইল ক্যামেরায়। সামনে চলছে নাথু লার রাস্তা। মাঝপথে নাথু লা যাওয়ার  জন্য  প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র সংগ্রহ করা হলো। তারপর পিঁপড়ের সারির মতো গাড়ি চলতে শুরু করল নাথুলার পথে। পথে পড়ল সোমগো বা ছাঙ্গু লেক কিন্তু ওখানে না থেমে আগে নাথুলা যাওয়াই  সাব্যস্ত  হলো।  প্রচুর  গাড়ি ওখানে। কোথায় পার্কিং করা হয়েছে না দেখলে ফেরার  সময় গাড়ি খুঁজে পাওয়াই মুশকিল।  যাই হোক, বাসুবাবু ও তাঁর  স্ত্রী খানিকটা উঠে একটা প্রশস্ত জায়গায় বসলেন।  ছেলে, বৌমা ও নাতি নাতনিদের  বয়স কম হবার  কারণে আরও  অনেক  উপরে উঠল।  অনতিদূরে চীনের  সীমানা। আমাদের  দেশের প্রহরীদের  তাই সদাই সতর্ক থাকতে হয়। খানিকক্ষণ সময় ওখানে কাটিয়ে এবার  ফেরার  পালা। গাড়ির ড্রাইভার আগেই  বলেছিল কোথায় থাকবে,  সুতরাং খুঁজে পেতে সময় লাগল না। চারিদিকে  বরফ, ওখানে খানিকক্ষণ  থাকলেই কেমন হাঁফ ধরে যায় আর আমাদের  জওয়ানরা প্রাণপাত  পরিশ্রম করে আমাদের নিশ্চিন্তে ঘুমানোর  বন্দোবস্ত করে অথচ সুযোগ  পেলেই  আমরা তাদের  গালিগালাজ  করতে ছাড়িনা।  কি বিচিত্র  মানুষের  এই ব্যবহার।  এবার  সুন্দরী নাথুলাকে বিদায় জানিয়ে ফেরার পালা। মাঝপথে সোম গোতে( ছাঙ্গু লেকে) খানিকক্ষণ বিশ্রাম এবং চা ও খাবার খাওয়া। নাতি ও নাতনির বাসনা হলো চমরি গরুর পিঠে চাপা। আর তা ই বা অপূর্ণ  থাকে কেন? সন্ধেবেলায় হোটেল  নরখিলের লনে হিলটনের  সঙ্গে খানিকটা সময় কাটানো। পরদিন  সকাল  বেলায় ফিরে আসার  প্রস্তুতি। গাড়িতে বসে আসতে আসতেই বাসুবাবুর মনে হলো যেন  হঠাৎই  একটা স্বপ্ন চোখের  সামনে বাস্তব রূপ  নিল। মাঝখানে খানিকটা চায়ের  ব্রেক  এবং লাঞ্চ  ব্রেক করে ছেলে বৌমারা নাতি নাতনিদের নিয়ে বম্বের  পথে এবং বাসুবাবুদের কলকাতার ফ্লাইট  ধরা। একটা সপ্তাহ যে কি করে চোখের  নিমেষে অদৃশ্য  হয়ে গেল  ভাবলেই যেন  গায়ে কাঁটা দেয়। আসলে বোম্বাই  কা বাবু বিবিরা সব ঠিক  করে রাখলেও  কলকাত্তাইয়াদের একেবারে অন্ধকারে রেখে দিয়েছিলেন।  মাঝেমধ্যে এরকম হলে ক্ষতি কি?