বসন্ত এলেও রোদের তাপ বেশ বেড়ে উঠেছে, ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে একটা গাছের তলা খুঁজছেন তিনি। সেটাও আজকাল বড্ড অমিল। গাছ একটু বড় হতেই না হতেই বুকড ফর শিবু দা বা বড় ঠাকুর বা শ্রী হনুমানজীর। তাঁদের মতো ছোটখাট দেবতাদের কেউ পাত্তাই দেয়না। কিন্তু এটা মানুষ ভুলে যায় এই পঞ্চশরে বিদ্ধ না হলে জীবনটাই জ্বলেপুড়ে খাক। ছোটবেলায় হলে কাট্টি, বড় বয়সে হলে ডিভোর্স। আর ডিভোর্স যেন ঘরে ঘরে। কচিকাঁচা দম্পতি থেকে বুড়োবুড়ির ডিভোর্স যেন আকছার ঘটনা। জজসাহেবরা পর্যন্ত হয়রান। কোর্টে উচ্ছেদ আর বিচ্ছেদ সামলাতে সামলাতে নিজের পারিবারিক জীবনে পর্যন্ত অশান্তির একশেষ। উৎস সেই একই জায়গায়। মদনদেবের কথা তখন মনে পড়ে। কিন্তু ততক্ষণে তিনি তো পগারপাড়। অতএব, মদনদেবের ও মন্দির তৈরী করার তোড়জোড় করতে হবে। দরকার হলে বিভিন্ন বয়সের স্বামী স্ত্রী বা প্রেমিক প্রেমিকাদের মিছিল করে ডেপুটেশন দিতে হবে। মদনদেব তো মিটি মিটি হাসছেন। যতই বাবার মাথায় জল ঢালো বা শনিবার বড়ঠাকুরের সামনে ধর্ণা দাও বা নির্বিঘ্নে জীবন যাপনের জন্য হনুমান চালিশা পড়, এই বিশেষ জায়গায় আমার আশীর্বাদ ছাড়া এক পা ও চলতে পারবে না।হতে পারি আমি নাক কান গলার ডাক্তার কিন্তু রাতে কানব্যথা হলে আমি ছাড়া অন্য কেউ সেখানে আসবে না। অতএব, কর ভজনা আমার, লাগাও মন্দির।
প্রেম বললেই কৈশোরের প্রেমের কথা মনে পড়ে। একটু কারো বিলোল কটাক্ষে হৃদয় হলো উদ্বেলিত, তবেই না? মদন দেবের তীরগুলো যেন ঠিক ছুঁচের মতো, নরম চামড়ায় পুটুশ করে ঢুকে জ্বালা ধরাতে পারে। কিন্তু কথায় আছে না, কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ, পাকলে করে ট্যাঁসট্যাঁস। সুতরাং, বয়স হলে চামড়া ও মোটা, তীর ও ঢোকেনা, প্রেম ও আর আসেনা। তাহলে কিশোর বয়সের প্রেম ছাড়া আর কোনটাকেই প্রেম বলা যাবে না? যাবে, কিন্তু ব্যাপারটা একটু খটোমটো। অপারেশনের আগে বুড়োমানুষের হাতে চ্যানেল করা হাসপাতালের স্টাফদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় যদিও অনেকের কাছেই এটা একটা জল ভাত। শিরা খুঁজে পেতেই তাদের হিমশিম খেতে হয়। ঠিক সেরকমই বুড়োবুড়িদের মধ্যে প্রেম সঞ্চার করা। এরা অনেক সুখ দুঃখের মুখোমুখি হয়েছে। এদের কাত করা বা হাতে চ্যানেল করা ও একই রকম কঠিন কাজ। মদনদেবকে অনেক ভেবেচিন্তে এগোতে হয়। প্রথমে দে বুড়োর সঙ্গে বুড়োর বৌ বুড়ির সংসারে আগুন লাগিয়ে। ক্রমাগত বুড়ির কাছে ধ্যাঁতানি খেয়ে খেয়ে বুড়ো একেবারে খাপচুরিয়াস। ভাল করে চোখে দেখেনা , কানে শোনেনা, হাঁটুতে কোমড়ে উঠতে বসতে ব্যথা তবুও জজসাহেবের সামনে ডিভোর্স নেবার জন্য আর্জি জানাতে আসা। বেচারা জজসাহেব ছেলের বয়সী কিন্তু খাণ্ডারনি বুড়ির সামনে একেবারে কেঁচো। বুড়োর প্রতি সমবেদনা থাকলেও এই বয়সে বুড়ো কি করে বাঁচবে এই চিন্তায় ঘোর মগ্ন। ঠিক করতে না পেরে শুনানির তারিখ পিছিয়ে দেন এই ভেবে যে এর মধ্যে যদি দুই যুযুধান পক্ষ নিজেদের মধ্যে মিটমাট করে নেয় বা ভগবান যদি কোন একজনকে তাঁর নিজের কাছে ডেকে নেন এই ভেবে। কিন্তু মোটামুটি শক্ত সামর্থ্য বুড়োবুড়িদের ক্ষেত্রে ডিসিশন নেওয়া সুবিধা হয়। মদনদেব হয়তো এরকম ক্ষেত্রে অন্য এক জুড়িদের মধ্যে কাউকে আলাদা করে দেন এবং দুইজোড়া বুড়োবুড়িদের মধ্যে বিপক্ষ লিঙ্গের মাঝে সেতুবন্ধনের চেষ্টা করেন। ওঁর একটা কেস করা নিয়ে কথা যেমন ভাল হোক, মন্দ হোক একটা পলিসি তো গছিয়ে দাও, আমার রোজগার হলেই হবে। সুতরাং এখানেও তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। এইভাবেই দেখা যায় একজন প্রখ্যাত মনস্তত্ত্ববিদ যাঁর নিজেরই রয়েছে বিবাহযোগ্য পুত্র ও কন্যা তিনিও তাঁর প্রেম করে বিয়ে করা স্ত্রীকে আইনত বিচ্ছেদ নিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে চড়ে বসলেন। একবারও তাঁর মনে পড়লনা তাঁর ছেলেমেয়েদের মনে সেটা কি রকম প্রভাব ফেলবে। আগের দিনে হয়তো দাঁতে দাঁত চেপে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিত এবং প্রাকবিবাহ জীবনে অসম্পূর্ণ প্রেমের সমাপ্তি ঘটাতে ব্যগ্র হতো এবং সেটাও অত্যন্ত চুপিসারে কিংবা সেরকম কিছু না থাকলে নিষিদ্ধ পল্লীতে গিয়ে নিজেকে একটু হাল্কা করে আসত। কিন্তু আজকের দিনে সবাই খুব সাহসী এবং অধৈর্য্য এবং চটজলদি সমাধান হচ্ছে আদালতের শরণাপন্ন হওয়া এবং সকল দ্বন্দ্ব বিরোধ মিটিয়ে নিজেকে নতুন ভাবে প্রতিষ্ঠিত করা তাতে ছেলেমেয়েদের উপর কি প্রতিক্রিয়া হলো, তার থোড়াই কেয়ার। এইসব ক্ষেত্রে মদনদেবের কারিগুরি যে আছে সেটা কে অস্বীকার করবে?
অতএব, প্রেম ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে তবে কতটা ঘন সেটা পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল। সুতরাং, মদনদেবের মন্দির এবার হলো বলে।
No comments:
Post a Comment