বাচ্চার কাজ করতে হবে বলে স্নান করে নিতে বলা হলো। মিনু স্নান সেরে তুলির কাছে যেতেই তুলি একবার চোখ মেলে দেখে নিল যে কার কাছে তাকে যেতে হচ্ছে । ওদের ওখানে তো মানুষ জন ই কম দেখা যায়, সুতরাং একটা লোক অন্তত তার কাছে সবসময় থাকবে ভেবে কোনরকম কান্নাকাটি না করেই হাসিমুখে চলে গেল। কিন্তু খাওয়ানোর সময়ই হল বিপদ, ও তো ইংরাজি ভিডিও দেখা ছাড়া খেতেই চায়না আর মিনু জানেইনা ইংরাজি । ও কাকিমা, কি করে খাওয়াই বল তো? এই খুদে মেয়ে যে আমার কাছে একদম আসছে নি। শমি এবার প্রমাদ গুনলো। একদিন এসেই যদি বলে পারছি না তাহলে তো সেন্টারে আবার খবর দিতে হয়। খুবই ঠাণ্ডা মাথার মহিলা শমি, কোনরকম বিচলিত না হয়ে মেয়ে তিতলিকে বলল ভিডিও চালু করে দিতে।ভিডিও চালু হতেই ছোট্ট তুলি গিলে নিল । তিতলি বলে উঠল গুড জব। তারপর যতবার তুলি খাবার খায় তিতলি বলে ওঠে গুড জব। তখনকার মতো সমস্যার সমাধান হলেও পুরোপুরি মিটল না। মিনুকে দেখিয়ে দেওয়া হল কি করে ভিডিও চালু করতে এবং বন্ধ করতে হয় ।
মিনু একটু চালু হলো এবং তুলির সঙ্গে ভাব ও জমলো। সুবোধ বাবুর তো কাজ কর্ম বিশেষ কিছুই নেই, নাতি নাতনিদের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া। কিন্তু তুলিকে খাওয়ানোর সময় কি রকম একটা শব্দ কানে খটখট করে বাজছে। প্রত্যেক বার গেলার পর মিনুর গলায় আওয়াজ বেরোচ্ছে গুড় খাও, গুড় খাও । যাদবপুর থেকে বেশ কিছুদিন হলো আখের গুড় কিনে এনেছেন এবং তা থেকে তিনি তো রোজ ই খানিকটা করে খান। তাহলে এত গুড় আসছে কি করে? মাঝে মাঝে তিতলি ও তুলিকে খাওয়ার জন্য উৎসাহিত করছে। তারপর মিনু ও বলতে শুরু করল গুড় যাও যেটা সুবোধ বাবুর কান এড়ায় নি। মিনুকে ডেকে বললেন যে গুড জব বলো। হঠাৎ ই মিনুর মুখের চেহারাটা কেমন যেন হয়ে গেল আর বলল ," কাকু আমরা তো গেরামের লোক, ইঞ্জিরি তো জানিনা , আর তুলি ও ইঞ্জিরি ছাড়া কিছুই বোঝেনা, আমাকে দিয়ে এই কাজ হবেনা। তোমরা সেন্টারে বলে অন্য লোক নিয়ে নাও গো।" একেবারে থ বনে গেলেন তিনি । ও যদি চলে যায় তাহলে আর যাই হোক সুবোধ বাবুর নিজের যে কি হবে ভেবেই ভেতরে ভেতরে শঙ্কিত হয়ে উঠলেন আর বললেন তুমি যেমন ইঞ্জিরি জানো, তেমনই বল। আর তুলিরা যতদিন থাকবে তুমি ছাড়া আর কেউ এ বাড়িতে আসবে না।
No comments:
Post a Comment