Thursday, 30 May 2024

বন্ধু যখন অশরীরি

শ্রদ্ধেয়া বৌদি,
আগামী চৌঠা জুন সুজিতের চলে যাওয়া তিন বছর পূর্ণ হবে।গতকাল অর্থাত তিরিশ তারিখ রাতে ওকে দেখলাম এবং অনেকক্ষণ কথা হলো ওর সঙ্গে। শুধু ও একা আসেনি, এসেছিল শুভ, চৌধুরী ও শঙ্খকে নিয়ে। অনেক কথার পর চৌধুরী বলল," ঠিক জমছে না আসর, কবে আসছেন  বলেন?" শুভ বলল, অনেকদিন  তো কাটালি এখানে, এবার অন্যদিকটা দেখার ব্যবস্থা কর।" শঙ্খ ওর সদাহাস্য মুখে জিজ্ঞেস করল," ভাল  আছেন?"
সুজিতের আমার  বাড়িতে আসার কথা ছিল কুড়ি সালের  উনত্রিশে সেপ্টেম্বর।  ও তখন ছিল  হায়দরাবাদে ছেলে মাণিকের কাছে। আমি হাঁটুর  ব্যথার জন্য  কোথাও  যেতে না পারার জন্য ও ই আসবে বলেছিল আমার সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু ও তার প্রতিজ্ঞা রাখতে পারেনি কারণ পায়ে ওঠা সামান্য এক ফোড়া চুলকে ফেলে যে  এই বিপত্তি ঘটতে  পারে তা সম্ভবত সুজিত নিজেও আঁচ করতে পারেনি। সেপটিক  হয়ে এমন বাড়াবাড়ি হলো যে ওকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হলো। সুদীপ্তর কাছে খবর পেয়ে ফোন করলাম,  ও তার স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে বলল,"আছি ফার্স্ট ক্লাস। হাসপাতালে ডাক্তার জমে ওঠা পূঁজটা কেটে বের করে দিয়েছে এবং ব্যাণ্ডেজ করে দিয়েছে এবং দিন দুয়েকের  মধ্যেই ছেড়ে দেবে বলেছে।" কিন্তু ডাক্তার তাঁর কথা রাখতে পারেন নি এবং জহর ও সুদীপ্তর কাছে জানলাম  যে ওর হাঁটু থেকে নীচের অংশটা কেটে বাদ দিতে হয়েছে। শুনে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল  কিন্তু মানুষের বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে অনেক সময়ই  ক্ষুদ্র স্বার্থ  বিসর্জন দিতে হয় ভেবে মনকে সান্ত্বনা দিলাম। ও কিন্তু এসবের পরেও বলত ফার্স্ট ক্লাস আছি। বেশ কিছুদিন পর ওকে প্রস্থেটিক লেগ দেওয়া হলো এবং তাতেও  সে নিজেকে রপ্ত করে নিল। কলকাতায় ফিরে এসে সব সময় জমিয়ে রাখা সুজিত দিব্যি আড্ডা মেরে, আসর জমিয়ে, রিক্সায় চড়ে  বাজার করে আপনাকে বুঝতেই দেয়নি ওর অসুবিধার কথা বা দুঃখের কথা। মাঝেমধ্যেই সকাল বেলায় ফোন করে বলত," একটা গান করছি শোন। কেমন  লাগল বলবে।" বলেই সেই দরাজ গলায় গান শোনাতো ও। যেমন সুন্দর মিষ্টি গলা, তেমনই ভরাট।  ভারী সুন্দর।  ব্যাঙ্কের  ফাংশনে বা যে কোন  ফাংশনে ও গাইত এবং সকলের  প্রশংসা কুড়াতো। তখন  আমি হাঁটুতে একটা ইঞ্জেকশন নিয়ে বেশ ভাল আছি। ও আমাক  বলল কালীঘাটের মন্দিরে আসতে,  ও গান গাইবে। আমি যথারীতি ওখানে গেলাম  এবং  মায়ের সামনে চাতালে বসে অসাধারণ গান গাইল। মাটিতে বসার জন্য  খানিকক্ষণ পর আর উঠতে না পারায় ও আমাকে উঠতে সাহায্য করল এবং ট্যাক্সিতে বসিয়ে ও ফিরে গেল। তখন  ওর পা ভালই ছিল। 
রসবোধ ছিল অসাধারণ। হাসতে এবং হাসাতে একেবারে মাস্টার ক্লাস। মাঝেমধ্যেই গুরুগম্ভীর পরিস্থিতির মধ্যে এমন একটা ফুট কেটে দিত যে সবার গোমড়ামুখে ঠোঁট দুটো চওড়া হয়ে  হাসির ঝিলিক দেখা যেত। এটা মানুষের একটা বিরাট গুণ। শুভ আর সুজিতের মধ্যে কে বেশি সিগারেট খেত তা নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে কিন্তু মনে হয় শুভ ই বোধ হয় বেশি খেত। চৌধুরীর আঙুলের টোকা তবলাকে দিত প্রাণ। এত মিষ্টি করে বাজাতো যে কেউ  বলতেই পারবে না যে ওর প্রথাগত  কোন শিক্ষা নেই। এটা সম্পূর্ণ ভগবানদত্ত। শঙ্খর নীরব উপস্থিতি জানাচ্ছিল আর কতদিন? শঙ্খ তো সুজিতের  পরদিনই তার সাথী হয় যদিও  শুভ তার কিছুদিন আগেই গিয়ে সবার জন্য বন্দোবস্ত করে রেখেছে। বেশ গল্পগুজব চলছিল আর একদম ভেবেই উঠতে পারছিলাম না যে ঐ চারজনের  কেউই  আর ইহজগতে  নেই। হঠাৎই  মেঘেরগর্জন এবং আকাশে বিদ্যুতের ঝিলিকে সমস্ত ঘরটা যেন আলোয় আলোকময়  হয়ে উঠল আর সবাই যেন কোথায় উধাও  হয়ে গেল। ঘড়িতে দেখি দুটো বেজে তের মিনিট। বৃষ্টির তোড় বেশ জোরালো, উঠে জানলাগুলো ঠিকঠাক লাগানো আছে কিনা দেখতে গেলাম কিন্তু ওদের উপস্থিতির রিমঝিম শব্দটা মনের  মধ্যে ঘুরে ফিরে বেড়াতে লাগল। 
ভাল থাকবেন সবাই ।

Wednesday, 29 May 2024

মশলা মুড়ি ক্রিকেট

সম্প্রতি শেষ হলো পৃথিবীর  সবচেয়ে দামী ক্রিকেট লিগ । দুহাজার আট সালে শুরু হয়েছিল এই ক্রিকেট লিগ। দেখতে দেখতে সতের বছর কেটে গেল এই লিগের, একসময়ের চ্যাম্পিয়ন সব শেষে একদম নীচের সারিতে স্থান পাওয়ায় সেখানকার বাসিন্দাদের ও সমর্থকদের মনে বিষাদের ছায়া। কিন্তু এতে কারও কোন হাত নেই। সবাই তো আর প্রথম স্থানে আসবে না, সুতরাং সবসময়ই কারও না কারও  মনঃকষ্টের ঘটনা ঘটবেই। স্ট্যাটিসটিক্সের কচকচির জন্য অনেক পণ্ডিত ব্যক্তি আছেন  এবং তাঁরা যথাসাধ্য তথ্য ভিত্তিক আলোচনা করছেন  এবং ভবিষ্যতেও করবেন।  আমার বক্তব্য  সেখানে নয়। এই বিশাল কর্মকাণ্ডে প্রচুর অর্থের  সমাগম  হয়েছে এবং আমাদের  ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড এবং বহু সংস্থা এবং লোকজন বেশ ভাল রকম অর্থোপার্জন করেছেন। খুবই আনন্দের ব্যাপার যে  এই অল্প সময়েই বহুলোকের অবস্থার প্রভূত  উন্নতি হয়েছে কিন্তু মনে একটা ছোট্ট প্রশ্ন  উঁকিঝুঁকি মারছে সেটা যতক্ষণ না প্রকাশ করতে পারছি ততক্ষণ একটা অস্বস্তি থেকেই  যাচ্ছে।
প্রথমত  এই বিশাল যজ্ঞে দশটা দল তাদের  বিরাট  লটবহর নিয়ে প্রস্তুতি চালাচ্ছে, বহুটাকা খরচ করছে। কিন্তু এই খেলায় কেমন যেন  একপেশে ব্যবস্থা। সেরার সেরা বোলাররা বল করছে আর ভাল, মোটামুটি ভাল  ও আনাড়ি ব্যাটসম্যান সবাই  মিলে যেভাবেই হোক না কেন সেই বলকে মেরে পিটিয়ে ছাতু করে দিচ্ছে। লেগ স্টাম্পের  দিকে বল গেলেই ওয়াইড বল এবং ব্যাটিং দলের  একটা রান যোগ হলো আর বোলারকেও একটা বাড়তি বল করতে হলো। নো বল বা বাম্পার দিলে ব্যাটসম্যানদের শরীরে বা মাথায় লেগে ক্ষতি হতে পারে, সেটা না দেওয়া বাঞ্ছনীয়। ছয় ওভার  অবধি ফিল্ডিং সাজানোয় যথেষ্ট  বাধানিষেধ আছে। মোটামুটিভাবে বলা যায়,বেচারা বোলাররা  বল করো আর ব্যাটসম্যানরা  হাঁকরে দিয়ে তাকে বাউণ্ডারি বা ওভারবাউণ্ডারি মারবে আর লোকে আহা আহা বলে হাততালি দেবে। খেলাটা এতটাই বিনোদনের  উপযোগী করা হয়েছে যে কোন উঠতি ক্রিকেটার আর বোলার হতে চাইছে না, সবাই ব্যাটসম্যান হতে চায়। কিন্তু এই ব্যাটসম্যানদের  বেশিরভাগ ই টেকনিকের অভাবে টেস্ট খেলায় চান্স পাওয়ার কথা ভাবতেই  পারেনা। এমন একটা লেভেল প্লেয়িং  ফিল্ড তৈরী করা হোক যাতে প্রকৃত ভাল  বোলার  বা ব্যাটসম্যানরা তাদের  উৎকর্ষতা দেখাতে পারে। অবশ্য  একটা কথা ঠিক  যে লোকের  হাতে সময় এখন খুব কম, পাঁচ দিনের টেস্ট খেলা দেখা  আর সম্ভব হচ্ছেনা। আর দর্শকদের  কথা ভেবেই ক্রিকেটের  এই বিনোদন। 
এবার দেখা যাক, এর কি সুদূর প্রসারী ফল। আমাদের  দেশে ক্রিকেট  এখন হেঁসেলেও ঢুকে পড়েছে।  সবার মধ্যেই  এক চাপা উত্তেজনা। কলকাতা নাইট রাইডার্সে একজন বাঙালি ক্রিকেটার  না থাকলেও  আমরা সবাই কেমন  নীরবে কলকাতা নাইট রাইডার্সের সমর্থক হয়ে গেছি এবং সেইরকম ভাবে মুম্বই বা চেন্নাই এর লোকজন তাদের  প্রদেশের  নামে ক্রিকেট দলের  সমর্থক হয়ে গেছে। হাজার হলেও  রক্ত জলের  চেয়ে বেশী ঘন তাই নয় কি? আমার  মনে একটা প্রশ্ন জাগছে এবার। এই বিশাল অর্থের  কিছু অংশ এই খেলা বা অন্য কোন  খেলা  ঊৎকর্ষতা বাড়ানোর কাজে ব্যয় করা যায় কি না বা সরকারের  তরফে এই খেলাধূলার পিছনে আরও অনেক কিছু করা যায় কি না?  সমস্ত  ছেলেমেয়েরা ই যে পড়াশোনা করে পণ্ডিত  হবে এবং শিক্ষাক্ষেত্রে তাদের  অবদান  রাখবে তা নয়। যারা নিম্ন মেধা বা মধ্য মেধার কিন্তু খেলাধূলায় পারদর্শী তাদের  শৈশবাবস্থা থেকেই বিভিন্ন  অ্যাকাডেমিতে অন্তর্ভুক্ত করা হোক এবং বিদেশের  মতন সেই অ্যাকাডেমি ই তাদের ভবিষ্যতের খেলোয়াড় তৈরী করুক এবং খেলোয়াড়রাই যখন বয়স হয়ে যাবে তখন  তারাই কোচিং করুক  এবং  সমস্ত  খেলোয়াড়দের একটা পেনশনের ব্যবস্থা হোক যাতে খেলোয়াড় জীবনের  শেষে তাদের  ভবিষ্যতে অর্থাভাবে  পড়তে না হয়। এখন যেমন  ক্লাবগুলোকে বছরে দুলাখ টাকা করে দেওয়া  হয় সেটা নিশ্চয়ই  একটা ভাল  ব্যবস্থা কিন্তু তাতে সত্যিকারের  কতজন  খেলোয়াড় উঠে এসেছেন  তাতে যথেষ্ট  সন্দেহ  আছে। বরঞ্চ এটাই  দেখা  গেছে যে ঐ টাকায় ক্লাবের  বিল্ডিং তৈরী  হয়েছে এবং বিয়ে অন্নপ্রাশন ও শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে ভাড়া দিয়ে ক্লাবের কর্মকর্তাদের  মধ্যদেশ  স্ফীত করেছে  এবং ভোটের  সময় এরাই বিভিন্ন  উপায়ে ভোট নিয়ে আসার কাজ করছে। এছাড়া কিছু রিটায়ার করে যাওয়া লোকদের  তাস খেলার বন্দোবস্ত হয়েছে। 
সবচেয়ে বড় জিনিস  হলো দূরদৃষ্টি  থাকা  এবং সেটাকে সাফল্যমণ্ডিত করতে যথাযোগ্য প্রয়াস নেওয়া। অন্যথা এই টাকা কিছু বাজে লোকের হাতে পড়বে এবং যুব সমাজের কোন  উন্নতি হবেনা।

Sunday, 26 May 2024

"সম্পর্ক"

ছোট্ট একটি শব্দ কিন্তু এর গভীরতা মাপা এক বিরাট দুঃসাধ্য ব্যাপার। সম্পর্ক বলতে কি বোঝায়? বিভিন্ন সমাজ বিজ্ঞানী, পণ্ডিত মানুষ একে বর্ণনা করেছেন কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে এই পণ্ডিত মানুষরাই তাঁদের  জীবনে খেই হারিয়ে ফেলেছেন এই ছোট্ট  কথার অর্থ  অনুধাবন করতে অথচ বিদ্যা বুদ্ধি হীন কত মানুষ এর সংজ্ঞা না জেনেও  এক অত্যন্ত সুন্দর জীবন গড়ে তুলেছেন। তাঁরা গুছিয়ে ঠিক করে বলতে পারবেন না এই কথার অর্থ  অথচ নিজের জীবনে অ-সুখের কথাও ঠিকঠাক বলতে পারবেন  না। কার কথা শোনা প্রয়োজন? 

বিরাট বিরাট ডিগ্রির মালিক,  সমাজের এক একজন  মাথা, এখানে সেখানে বহু জ্ঞানগর্ভ  বক্তৃতা দিয়ে বেড়ান কিন্তু নিজের  জীবনে সম্পর্ক শূন্য। স্ত্রী হয়তো জীবিত কিন্তু একসঙ্গে থাকেন না, ছেলে মেয়েরা রয়েছে কিন্তু  সবাই যেন  চলছে নিজের তালে, ঐকতান খোঁজার চেষ্টা বৃথা। প্রত্যেকেই স্বমহিমায় মহীয়ান ঠিক যেন এক একটা দারুণ ফুল কিন্তু এইসব ফুলগুলো দিয়ে মালা গাঁথা যায়না।একে তাহলে কি বলা যায়? পাঁচমিশেলি তরকারি বা চচ্চড়িতে প্রত্যেকটি সব্জি যদি নিজেদের অস্তিত্ব  প্রকাশ  করে তাহলে সেই পাঁচমিশেলি তরকারি বা চচ্চড়ি উপাদেয়  হয়ে ওঠেনা কিন্তু প্রত্যেক অনুপান যদি নিজেদের অস্তিত্ব  বিসর্জন দিয়ে একটা নতুন  কিছুর সৃষ্টি করে তখন  তার স্বাদ  হয় অনন্যসাধারণ। একটা ছাতার  যদি একটা বা দুটো শিক ভেঙে যায় তখন  ছাতার  সেই নিটোল রূপ আর থাকেনা, তার কঙ্কাল সার চেহারা তখন প্রকট হয়ে পড়ে। এখন আমরা স্বকীয়তা  বিসর্জন দিয়ে একসুরে বাঁধা পড়ব নাকি নিজেদের  অস্তিত্ব জাহির করব, সেটা সম্পূর্ণ  নির্ভর করছে  নিজেদের মানসিকতার উপর। বিশেষ  বিদ্যার জাহাজ না হয়েও নিজেদের পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্যে যারা সীমিত থাকে তাদের  সম্পর্ক  হয় অনেক নিটোল এবং নানাবিধ  অসুবিধা, কষ্ট  থাকার পরেও  তারা অত্যন্ত সুখী।
"আমি" শব্দটা দুই অক্ষরের  হলেও খুবই মারাত্মক।  এই আমিত্ব যে কত সংসার  ছারখার করে দিয়েছে তার ইয়ত্ত্বা নেই। এই আমি সর্বস্ব  হবার কারণে নানা অশান্তি গজিয়ে ওঠে। দুই অক্ষরের  আমি থেকে তিন অক্ষরের আমরা হলেই কিন্তু বহুসমস্যার সমাধান  চটজলদি হয়ে যায় কিন্তু সব পণ্ডিত ব্যক্তি ই যদি নিজেদের আমিত্ব বিসর্জন দিতে না রাজি হন তাহলেই বাধে ধুন্ধুমার কাণ্ড। সংসার  বড় হলেই নতুন  সদস্য বা সদস্যার  উদ্ভব হবে যারা আসে অন্য সংসার থেকে। তাদের  বড় হয়ে ওঠা ভিন্ন  ধরণের, সুতরাং  নতুন  সংসারে তাদের  মানিয়ে নিতে গেলে একটুসময়ের প্রয়োজন কিন্তু আজকাল  দেখা যাচ্ছে নতুন সংসারে এসেই তার নিজের বড় হয়ে ওঠাকেই  বেশি প্রাধান্য দেয় যার পরিণতি বিষাদময় হয়ে ওঠাই স্বাভাবিক। একটা চারাগাছ অন্য একটা জমি থেকে উঠিয়ে নিয়ে এসে ভিন্ন জায়গায় রোপণ করলে চারাগাছের  দায়িত্ব  যেমন নতুন মাটির  সঙ্গে মানিয়ে নেয়া তার থেকে ঢের বেশিগুণ দায়িত্ব  নতুন মাটির  চারা গাছটিকে  আপন করে নেয়া। দুজনের ই দায়িত্ব  রয়েছে চারাগাছটির বড় হয়ে ওঠা এবং ফুলে ফলে  ভরে ওঠার মধ্যে। এই মানিয়ে নেওয়াটাই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।  জোর জবরদস্তি করে মানানোর ফল কিন্তু মোটেও  শুভ হয়না বরং ধীরে ধীরে পূঞ্জীভূত অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ একদিন গোটা সংসারকে  চুরমার করে দেয়। বিয়ের পর ছেলেমেয়েদের সংসারে  নাক না গলানোই ভাল।  প্রত্যেক মানুষের নিজস্বতা বজায় রাখার অধিকারকে স্বীকৃতি দিলে সংসারে শান্তি বজায় থাকে। একটা সময় ছিল যে শ্বশুর বা শাশুড়ি যা বলবেন বাড়ির  বৌমাকে ঘোমটা মাথায় দিয়ে স্বীকৃতি জানাতে হবে।এর  দিন শেষ বরং উল্টোটাই  এখন বেশি সত্যি। যৌথ পরিবার  ভেঙে যাওয়ার  এটা একটা বড় কারণ। পরিবার  বড় হলেই তারা আলাদা থাকুক, সময়ে অসময়ে আসা যাওয়া থাকুক, তাহলে সংসারে শান্তি বজায় থাকবে। কিন্তু যেখানেই বর্ধিত পরিবার খুব কাছাকাছি থাকে সেখানেই কোন  এক ঠুনকো কারণে মনঃকষ্টের উদ্রেক  হয়। এটা যাঁরা যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবেন  ততই  মঙ্গল। কোনরকম  আশা না করাই  বাঞ্ছনীয়।  আশা না করে কিছু বাড়তি প্রাপ্তি যেমন  আনন্দ  দেবে তেমনই  আশা করে কিছু না পেলে বা আশানুরূপ  না পেলে মনঃকষ্টের ই কারণ হবে। এ তো গেল  পারিবারিক  সম্পর্কের  কথা।
বন্ধুদের মধ্যেও  যদি মানসিক ভাবে তৈরী থাকা যায় যে প্রত্যেক মানুষের ই নিজস্বতা রয়েছে এবং দুটো যখন  ভিন্ন সত্ত্বা তখন  সব বিষয়েই যে একমত হতে হবে তার কোন মানে নেই। বরং মতপার্থক্যতাই ঠিক সিদ্ধান্ত  নিতে সাহায্য  করে। কিন্তু কারও  যদি এটাই মনে হয় যে বন্ধু মানেই সে আমার হ্যাঁ র সঙ্গে হ্যাঁ মেলাবে তাহলে সে ভুল করবে। অনেক সময় এটাও দেখা যায় শৈশবের বন্ধু যে কোন স্বার্থের  সংঘাতের  জন্য এই পৃথিবী থেকেই সরিয়ে দিচ্ছে। আবার  এমনও দেখা যায় বন্ধুর জন্য  অপর বন্ধু প্রাণ  দিতেও প্রস্তুত।  এই পৃথিবীতেই ভাল  ও খারাপ  দুইই  আছে, খারাপের  দিকে না তাকিয়ে  ভাল জিনিসের দিকে তাকালে মনটা শুদ্ধ  থাকবে।
কোন  মানুষকে বিচার করতে হলে স্বার্থের  সংঘাত  হওয়া সত্ত্বেও যদি নিজেদের শালীনতা বজায় রেখে ব্যবহার করতে পারে তখনই  তাকে ভাল মানুষ  হিসেবে গণ্য  করা যেতে পারে। ঠিক  সেরকমই প্রভু ভৃত্যের সম্পর্কেও মনিব যদি চাকরের প্রতি সহানুভূতিশীল হয় তখন  সেই সম্পর্ক  একটা আলাদা মাত্রা পায়। ভৃত্যের মনিবের প্রতি আনুগত্য  ছাড়া আর বেশী কিছু দেবার  থাকেনা কিন্তু মনিব  যদি সবসময়ই  এই চিন্তা করতে থাকেন যে আমি ওকে মাইনে দিচ্ছি, ওকে এটা করতেই  হবে সে যতটা অসাধ্য ই হোক না কেন।  সম্পর্কের মধ্যে একটা স্নেহ  বা সহানুভূতি না থাকলে সেই সম্পর্কের  বনিয়াদ তত মজবুত হয় না। সম্পর্ক  হচ্ছে দুটো পায়ের মতো। কোন একটা পায়ে চোট লাগলে মানুষের স্বাভাবিক চলার  ছন্দ যেমন ব্যাহত হয় তেমনই  তাকে টিকিয়ে রাখতে গেলে দুই পক্ষকেই পরস্পরের  প্রতি শ্রদ্ধাশীল,  সহানুভূতিশীল হতে হবে। মেঘ আকাশে ভাসতে ভাসতে কখনও কোন  জায়গার প্রতি বিশেষ সহানুভূতিশীল হয়ে এক পশলা বৃষ্টি দিয়ে লোকের  মুখে হাসি ফোটাবে আবার  কখনও তার বজ্র নির্ঘোষে অবিশ্রান্ত ভালবাসায় প্লাবন আনবে এবং মানুষের  দুর্ভোগের কারণ হবে ।মানুষ  আকাশকেও  ভালবাসে আবার  মেঘকেও এবং এই দুইজনের সম্পর্ক অটুট। 

Saturday, 25 May 2024

ফিরে যাওয়ার আগে

জীবনের  শেষ সীমানায় পৌঁছে হিসেব নিকেশ করতে বসে রাধুবাবু দেখেন সবসময়ই  তিনি জিতেই এসেছেন এবং লাভে লাভে মালামাল  তিনি এবং দেওয়ার ঘর প্রায় শূন্য।  জিততেই হবে সে যে ভাবেই হোক না কেন, ছলে, বলে বা কৌশলে। ভাদুড়িদার কাছে জানলাম যে এই গোত্রের মানুষ রাজসিক চালেই থাকেন এবং ভগবান  তাঁদের  মনোবাঞ্ছাও পূর্ণ করেন এবং দেখেন এই প্রাচুর্যের মধ্যেও বান্দা তাঁকে স্মরণ করছে কি না। বেশিরভাগ লোকই  ক্ষমতায় মদমত্ত হয়ে তাঁকে স্মরণ করতেই ভুলে যান। কিন্তু কিছু মানুষ আছেন যাঁদের হৃদয়ে তিনি অধিষ্ঠিত এবং তাঁরা সবসময়ই ভাল কাজ করতে থাকেন।  ভাল কাজ মানেই মন্দিরে গিয়ে এক অত্যন্ত মূল্যবান অলঙ্কারে ভূষিত  করলাম , এটা নয়। নিজের  সাধ্যানুযায়ী কিছু গরীব অভুক্ত মানুষকে খাওয়ানো এর থেকে অনেক  ভাল  কাজ। এই সহজ সরল কথাটি স্বামী বিবেকানন্দ অনেক দিন আগেই  বলে গেছেন। আমরা সেটা জেনেও প্রয়োজন মতো ভুলে যাই। 
ইসরাইলে দুটো হ্রদ আছে যাদের একটার নাম মৃত সাগর এবং অপরটি গ্যালিলি সাগর। মৃত সাগরে জীবনের কোন  চিহ্ন  নেই কারণ এর জলে লবণের পরিমাণ। অপরদিকে গ্যালিলি সাগরে জীবনের  প্রাচুর্য। কারণ অনুসন্ধান করলে দেখা যায় যে জর্ডন নদীর জল এর মধ্যে প্রবাহিত হয়ে সাগরে গিয়ে মেশে কিন্তু মৃত সাগর  সমুদ্রতলের অনেক নীচে হওয়ায় জর্ডন নদীর  জল ঐখানেই  আবদ্ধ হয়ে যায় এবং প্রতিনিয়ত জল বাষ্পীভূত হওয়ার কারণে  জলে দ্রবীভূত লবণ ঐখানেই পড়ে থাকে এবং লবণ মাত্রাতিরিক্ত হবার জন্য জীবনের কোন  চিহ্ন সেখানে দেখা যায়না। মানুষের জীবনেও এই একই ঘটনা। আমরা যা কিছু শিখছি বা পাচ্ছি তা যদি অন্যের মধ্যে বিতরণ  করা না যায় তাহলে সেই মৃত সাগরের অবস্থা হবে। জীবন সায়াহ্নে এসে এই কঠিন  সত্যের উপলব্ধি মানুষকে কিছু করার  অনুপ্রেরণা যোগায়। 
প্রত্যেক মানুষের ই কিছু না কিছু দেবার  আছে এই সমাজকে এবং এই নশ্বর দেহ বিলীন  হবার আগে সেটা করলে সমাজ পরিপুষ্ট  হবে অন্যথা অধীত জ্ঞান জীবনের  সমাপ্তির সঙ্গে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। রাধু বাবু এখনভেবে  পাচ্ছেন  না যে তাঁর এই বিশাল  সম্পদ নিয়ে কি করবেন। স্ত্রী অনেকদিন আগেই ছেড়ে চলে গেছেন,  কোন সন্তানাদিও  নেই, নিজের  জন্য  সামান্য  কিছু রেখে  সমস্ত সম্পত্তি রামকৃষ্ণ মিশনকে দান করে ভার মুক্ত হলেন।

Wednesday, 22 May 2024

পরিবর্তন

ব্যালকনিতে বসে ঋতু পরিবর্তন দেখা একটা দারুণ অনুভূতি। কয়েকদিন আগে গ্রীষ্মের দাবদাহে সমস্ত পশুপাখি ও তাদের  আবাসস্থল গাছগুলো যেন  ধুঁকছিল। যদিও  পার্কের মধ্যে থাকা বাদাম গাছটা তাদের পুরোন পাতাগুলো ঝেড়ে ফেলে নতুন সবুজ পাতায় নিজেদের  সাজিয়ে নিয়েছিল কিন্তু সেগুন গাছের বৃদ্ধ পাতাগুলো যেন গাছের  মায়া ছাড়তেই পারছে না তখনও যুদ্ধ করে চলেছে ঐ মারাত্মক  দাবদাহের সঙ্গে। কিন্তু কতক্ষণ আর যুঝবে? স্পার্টার মুষ্টিমেয় সৈনিক যেমন বিশাল পারস্য বাহিনীকে বেশিক্ষণ আটকে রাখতে পারেনি এই বৃদ্ধ ও ন্যূব্জ পাতাগুলোও কালের নিয়মে টুপটাপ আওয়াজ করে ঝরে পড়তে লাগল আর কিছুদিনের মধ্যেই ঐ বড় গাছটার  মাথা যেন  ন্যাড়া হয়ে গেল। এদিকে বাদাম গাছের ন্যাড়া মাথায় চুল(পাতা) গজিয়ে বেশ  ঝাঁকড়া হয়েছে, কচি পাতাগুলো তাদের  কৈশোর ছাড়িয়ে যৌবনে পা দিতে না দিতেই বেশ হৃষ্টপুষ্ট  হয়েছে। কিন্তু রোজ সন্ধে হতে না হতেই  কিচির মিচির শব্দে পাখিদের ঝগড়া শোনা যায়। মুশকিল হলো যাদের  আশ্রয়স্থল ছিল সেগুন গাছ, পাতা ঝরে পড়ায় তারা শুধু সরু ডালে কি করে থাকবে, সারাদিন  এখানে সেখানে উড়ে উড়ে খাবারের সন্ধানে শরীর ও মন উভয়েই ক্লান্ত। এরপর তো একটু ভাল  ঘুমের ভীষণ প্রয়োজন,  তাই তারা উড়ে আসে বাদাম গাছের ঘন পাতায় ঢাকা ডালে একটু বিশ্রামের জন্য।  কিন্তু বাদাম গাছের স্থায়ী বাসিন্দা যেসব পাখি তাদের প্রতিবাদ আছে এবং সেই কারণেই কিচির মিচির করে নিত্যদিন ঝগড়া। এই ঝগড়া কিন্তু বেশিদিন  স্থায়ী হয় না। দেখি সেগুন গাছের সমস্ত ডালে ছোট ছোট গুটির মতন কিসব যেন। ধীরে ধীরে রোদের  তেজ স্তিমিত  হয়ে গেলে  গুটিগুলো যেন  সভয়ে চোখ মেলতে  শুরু করে। আস্তে আস্তে গজায় ছোট্ট ছোট্ট পাতা আর বৃষ্টির একটু আলতো চাবুকেই সচকিত  হয়ে ওঠে সেই নবীন  পাতাগুলো, মেলে ধরতে শুরু করে নিজেদের।  ন্যাড়া মাথায় প্রথম যখন চুল গজাতে শুরু করে এবং তার পর যখন সেটা বাড়তে বাড়তে সমস্ত  মাথাটাকে ঢেকে ফেলে অনেকটা সেইরকম। কচি কচি হলদে পাতাগুলো বৃষ্টির পরশে ধীরে ধীরে সবুজ থেকে ঘন সবুজ  হতে শুরু করেছে আর এই গাছের বাসিন্দারাও  নিজভূমে  ফিরে আসছে আর তাদের  কলহের  কিচির মিচির স্তিমিত  হয়ে আসছে।
প্রতিবার বাদাম গাছের  বাসিন্দারা যখন সেগুনগাছে আশ্রয় নিতে চায় তখনও যেমন ঝগড়া আবার  তার কিছুদিন  পরে সেগুন গাছের বাসিন্দারা বাদাম গাছে আসতে চাইলে তখনও  হয় ঝগড়া। আমরা যারা ব্যালকনিতে সময় কাটাই, দুই দল পাখিদের ঝগড়া দেখে ভাবি কেন একটু বোঝাপড়া নেই দুইদল পাখিদের মধ্যে কিন্তু একবারও  এটা ভেবে দেখিনা এই স্বভাব  তো আমাদের ও , আমরাও  কাউকে সহ্য করতে পারিনা। এই অন্তর্কলহ শুধু মানুষ নয় পশুপাখি সবার মধ্যেই  বিদ্যমান। 

Sunday, 5 May 2024

লালু, ভোলা, কালু, টমি ও দীপু বনাম মতি,ড্যাকা,পেঁচো ও ঝগড়ু

দলের পাণ্ডা লালু একদিন  তার অ্যাসিস্ট্যান্ট ভোলাকে কঠোর  নির্দেশ  দিল যে মতি ও তার দলবল মাঝেমধ্যেই  তাদের  সীমানায় এসে হামলা করে যাচ্ছে যখন  তারা অন্য দিকে ব্যস্ত থাকে,  যেটা একদমই  বরদাস্ত  করা হবেনা। ভোলাকেও তো নানাদিকে ছোটাছুটি করতে হয় আর তাদের এলাকাটাও  তো যথেষ্ট  বড় আর সেই ফাঁকেই মতি তার দলবল নিয়ে এসে এখানে এসে গরম দেখিয়ে যাবে এটাও বাঞ্ছনীয় নয়। আর দল বাড়াব  বললেই তো বাড়ানো যায়না, কারণ আনুগত্য না থাকলে তাকে  দলে টানলে লাভের  চাইতে ক্ষতিই  বেশী। সুতরাং খুব বুঝে শুনে পদক্ষেপ  নিতে হবে। টমিকে  বলল, " তুই তো মোটামুটি বাড়ির আশেপাশেই থাকিস,  তুইই  একটু নজর রাখবি বেশী করে আর কোনরকম খারাপ  কিছু আঁচ করলেই একটা আওয়াজ দিবি আর বাকিটা আমরা দেখে নেব। মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাল সে।
এদিকে মতির  এলাকাটা বেশী বড় নয় এবং তার দলের পরিধিও  ধীরে ধীরে বাড়ছে, সুতরাং, এলাকা না বাড়ালে তাদের  চলছেই না। লালু, ভোলারা  খুবই  সতর্ক, কোনভাবেই  যেন  বেনোজল না ঢুকে পড়ে। একবার  দলে অবাঞ্ছিত  কেউ এসে গেলে তাকে গেলাও যায়না আবার  উগরেও ফেলা যায়না। খুবই  নিয়মানুবর্তী তাদের দল। ওদের বুদ্ধি দেয় দীপু যে বড়লোক বাপ মায়ের অপোগণ্ড ছেলে কিন্তু লালু, ভোলা, কালু, টমিদের  মেন্টর সে। সবসময়ই  প্যান্টের  দুই পকেটে বিস্কুট  নিয়ে ঘুরে বেড়ায় আর লালু ভোলাদের স্পনসর  হিসেবে কাজ করে আর সেই কারণেই তার কদর ই আলাদা। অন্যদিকে ঝগড়ু  খেটে খাওয়া বাবা মায়ের  ছেলে আর তাই ট্যাঁকের  জোর ও কম কিন্তু ও খুবই  কমিটেড।  বিরোধীপক্ষ  হলেও দীপুর কাছে ঝগড়ুর একটা আলাদা সম্মান  আছে। দুই যুযুধান গোষ্ঠীর  মেন্টর রা মাঝেমধ্যেই  নিজেদের  মধ্যে আলোচনা করে যে কিভাবে সংঘর্ষ  এড়ানো যায় কিন্তু এ সত্ত্বেও  ছোটখাট ঝামেলা লেগেই থাকে।
লালুর শরীরটা ইদানীং বেশী ভাল  যাচ্ছেনা, সুতরাং ভোলাকেই দলের  অনেকটাই সামলাতে হচ্ছে। মিউনিসিপ্যালিটি থেকে লোক আসছে সারমেয়কুলের সংখ্যা কমানোর উদ্দেশ্যে এবং বিভিন্ন  পাড়ায় তারা সমীক্ষা চালাচ্ছে। বাড়ির কুকুরের গলায় বেল্ট এবং পাড়ার ভাল কুকুরের গলায় দড়ি বেঁধে দিয়ে চিহ্নিত করা হতো যে এদের  ধরে নিয়ে যাওয়া বা বিষমেশানো মিষ্টি খাইয়ে মেরে ফেলা চলবে না। লালু, ভোলা, কালু বা টমিদের  স্বভাব এতই ভাল ছিল যে ওদের কেউ ক্ষতি করতে চাইলে সমস্ত পাড়ার লোক হাঁ হাঁ করে উঠত। কিন্তু মতিদের এলাকা সবই  খেটে খাওয়া মানুষদের পাড়া যারা সকাল হতেই  কাজের  সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে এবং ঝগড়ুও তার ব্যতিক্রম নয়। সুতরাং মিউনিসিপ্যালিটির  লোক আসার  সময় সে মতিদের খেয়াল রাখতে পারেনি এবং এতই নির্দয়  সেই লোকগুলো, মতিকে দেখে তারা বিষমেশানো মিষ্টি খাইয়ে দিয়েছে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই  ঐ তরতাজা তাগড়া কুকুরটা ছটফট করে মারা গেল। দীপু যখন জানতে পারল যে মতিকে বিষ খাওয়ানো হয়েছে, ছুটল তাকে দেখতে। দীপু বাড়ির  সকলের  কাছে অপদার্থ  হলেও  তার একটা হৃদয় বলে বস্তু ছিল এবং কারণে অকারণে পশুপাখির উপর কোন ধরণের  অত্যাচার  সে সহ্য  করতে পারত না আর সেই কারণেই সমস্ত জীবজন্তুরা তাকে খুব  ভাল বাসতো। এমন কি  চিরশত্রু লালু ভোলাদের মেন্টর  হলেও মতি বা তার দলবল তাকে কোনদিন  তাড়া করেনি। ড্যাকারা তাদের  নেতা মতির  ঐ হাল দেখে পাড়া ছাড়া, এসে পড়েছে লালু, ভোলাদের পাড়ায় কিন্তু না, আজ তারা আর নিজেদের  মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি ভুলে গিয়ে দীপুর পিছন পিছন এসেছে মতিকে দেখতে। মতির  এই হাল দেখে দীপুর  চোখে জল এসে গেল। পকেট থেকে বিস্কুট বের করে মতির মুখের  কাছে দিল কিন্তু মতির চোখ দিয়ে জল বেরোনো ছাড়া আর কিছুই  হলো না। পাশের কল থেকে হাতের আঁজলে করে জল মতির মুখের  কাছে দিল, সামান্য  একটু জল হয়তো মুখের  ভেতর গেল আর বাকিটা ঐ জায়গার চারপাশ টা একটু ভিজিয়ে দিল। মিউনিসিপ্যালিটির লোকগুলো হতভম্ব,  তারাও  ভাবতে পারেনি খেটে খাওয়া মানুষের এলাকায় বেড়ে ওঠা এক প্রতিবাদী কুকুরের মৃত্যুর জন্য বড়লোকের ছেলে দীপুর এহেন আচরণ।  একটু বাদেই একটা দড়ির ফাঁস মতির  পিছনের  পায়ে লাগিয়ে টানতে টানতে নিয়ে গেল, রেখে গেল কাঁচা রাস্তায় মতির শরীরের  দাগ। পকেটে রাখা সমস্ত বিস্কুট  আজ দীপু লালু, ভোলা কালু টমিদের  সঙ্গে ড্যাকাদের মধ্যেও  ভাগ করে দিল। ওরা আজ একটু থ, বিস্কুট টা শুঁকল কিন্তু কেউ খেলনা, হয়তো বা সন্দেহ তাদের ও মতির  মতন অবস্থা হবে না তো।
এর পর থেকে লালু, ভোলাদের  দলে ড্যাকারাও সামিল  হয়ে গেল এবং রেষারেষি একদম বন্ধ।

Saturday, 4 May 2024

প্রেম করে বিয়ে বনাম সম্বন্ধ করে বিয়ে

প্রেম করে বিয়ে ভাল  না সম্বন্ধ করে বিয়ে করা ভাল  এই নিয়ে তর্ক বহু যুগ ধরে চলে আসছে। দুই তরফেই চোখা চোখা যুক্তি ,কেউ কারো থেকে কম নয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার যে একপক্ষ যখন  বক্তব্য  রাখেন তখন  মনে হয় ইনি যা বলছেন সেটাই  ঠিক আবার  পরমূহুর্তেই যখন  অপর পক্ষের  বক্তব্য  শুনি তখন মনে হয় নাহ্ এই ঠিক  বলছে। যাই হোক,  একটু দুই তরফের  বক্তব্য ই শোনা যাক তারপর না হয় ঠিক করা যাবে কোনটা ভাল  আর কোনটা খারাপ। 

দুপক্ষের ই বাঘা বাঘা বক্তা( পুরুষ ও মহিলা) রয়েছেন  এবং সঞ্চালকের ভূমিকায় রয়েছেন দুঁদে সাংবাদিক  প্রজাপতি দে মহাশয়।
কাকে দিয়ে শুরু করবেন বিতর্ক  এই নিয়ে একটু দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন প্রজাপতি। কিন্তু তাঁর মতো সাংবাদিকের  কাছে এ তো নিতান্তই  জলভাত। উনি প্রথম বলার  সুযোগ  প্রেম করে বিয়ে করা ভাল  এদের দিলেন। 
প্রথম পক্ষের  বক্তারা অনেক  ইনিয়ে বিনিয়ে প্রেমের  মাহাত্ম্য বর্ণনা করলেন এবং সেই  বর্ণনা করতে  গিয়ে কত কি যে বললেন শুনে মাথাটা ভোঁ  ভোঁ  করতে লাগল। মহাভারতের  যুগ থেকে শুরু করে পঞ্চাশ বছর আগেও যেরকম ভাবে প্রেম নিয়ে একটা গদগদ  ভাব ছিল তা খুবই সুন্দর ভাবে পেশ করলেন কিন্তু এই আধুনিক  যুগে ছেলেমেয়েদের  হাতে খুবই  কম সময়, অত ধানাইপানাই করার  সময় নেই। সুতরাং আগের দিনে কড়াইয়ে মাংস চাপিয়ে  ভাল  করে কষে তারপর জল ঢালা এবং খুব  কম করে ঘন্টা দুয়েক মাংস রান্নার  গন্ধ ছড়িয়ে খিদেটা  দ্বিগুণ  করে তোলাটা একটা দারুণ ব্যাপার ছিল।  রবিবার যেদিন  মাংস  হতো সেদিন  ভাতের চাল বেশী করে নিতে হতো। ওগো তুমি আমার প্রাণ,তোমাকে না পেলে আমার  এই জীবনটাই  ব্যর্থ হয়ে যাবে এই ধরণের চিঠি চাপাটি চলতো। অবশ্য  এই প্রেমের দরুন অনেক অমর সাহিত্যের  সৃষ্টি ও হতো। অনেকসময় খেঁদি পেঁচি মেয়েকেও প্রেমিকের চোখে অমাবস্যার পর প্রথমা বা দ্বিতীয়ার চাঁদ না বলে পূর্ণিমার চাঁদ বলে বর্ণনা করা হতো বা ট্যারা প্রেমিককে  পদ্মলোচন বলে মনে করা হতো। এককথায় বলা চলে পীরিতে মজিল মন, কি বা হাড়ি কি বা ডোম। তখন  অবশ্য  জাতপাত  নিয়ে বড্ড বেশীরকম  মাতামাতি করা হতো। ব্রাহ্মণ না কায়স্থ বা কুলীন না অকুলীন এইসব নিয়ে অনেক বঙ্গবিচার  হতো। শুধু ছেলেমেয়েদের  মধ্যে প্রেম হলেই সব হয়ে গেল এমন নয় তার পরিণতি বিয়েতে গড়াত তাদের  বাবা মায়ের  সম্মতি পেলে। নাহলে ভো  কাট্টা। প্রেমে ব্যর্থ  হয়ে কেউ কেউ আত্মঘাতী হতো আবার কেউ বা বিরহে  সারাজীবন  বিয়ে না করেই কাটিয়ে দিত। কিন্তু প্রেমের  পরিণতি যদি বিয়ে অবধি গড়াতো তাহলে সেই বিয়ের মাধুর্য ই ছিল আলাদা। অনেক কচকচানির পর এবার  অন্য পক্ষের বক্তব্য  শোনা যাক।

ছেলেমেয়েদের  সময় এখন  খুবই কম। ধৈর্য অত নেই শোনার যে চাঁদের  দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন ঠোঁট ফাঁক করে বলবে যে সেই তার হৃদয়ের নাথ। এখন প্রেসার কুকারের যুগ,  ফটাফট ম্যারিনেট করে চার পাঁচটা স্টিম দিয়ে নামিয়ে বসে পড় খেতে। অত সুন্দর গন্ধ ও বেরোবে না কিন্তু খাওয়া তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। দু চারদিনের আলাপ,  তার মধ্যেই প্রেমের প্রস্তাব এবং সম্মতি এবং বাবা  মায়েরা  হচ্ছে রাবার স্ট্যাম্প অনেকটা আমাদের দেশের রাষ্ট্রপতির  মতো। নামেই তিনি একনম্বর  কিন্তু আসল ক্ষমতা অন্যজনের কাছে।  সুতরাং ছেলে ও মেয়ের উভয়ের  সম্মতি থাকলে হয়ে গেল  বিয়ে। আনুষ্ঠানিক ভাবে বাবা মায়েরা তাঁদের  সম্মতি দিলে ভাল  আর না দিলে থোড়াই  কেয়ার, রেজিস্ট্রি করে স্বামী স্ত্রী হয়ে গেল। 

এখন  দেখার  বিষয় যে কোন বিয়েটা বেশী মধুর হলো। বিয়ে মানে তো শুধু একটা ছেলের সঙ্গে একটা মেয়ের  বিয়েই নয় , একটা পরিবারের  সঙ্গে আর একটি পরিবারের সম্বন্ধ গড়ে ওঠা। সুতরাং অনেক  খোঁজ খবর নিয়ে এই সম্বন্ধ  গড়ে ওঠে মানে এককথায় যাকে বলে ডিউ ডিলিজেন্স নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ সত্ত্বেও  কি সব বিয়েই মধুর  হয়েছে বা যেখানে ছেলে বা মেয়ে নিজের পছন্দ মতো বিয়ে করেছে  তারা কি খুব  অসুখী?  আসল কথা, যদি বোঝাপড়া  থাকে নিজেদের  মধ্যে এবং পারস্পরিক  শ্রদ্ধা থাকে তবে সেই বিয়ে সেটা সম্বন্ধ করেই হোক বা প্রেম করেই হোক তা সুখের  হয়। 
জনতার মধ্য থেকে একটা হাত গুটি গুটি করে উঠল  যার মালিক একটি অল্পবয়সী মেয়ে। একটু দ্বিধাগ্রস্ত  হয়েই সে প্রজাপতি বাবুর  উদ্দেশ্যে একটা প্রশ্ন  রাখার জন্য  অনুমতি চাইল। ঐ বয়সী কোন ছেলেমেয়েই ঐ অনুষ্ঠানে ছিলনা। প্রজাপতি আর কি করেন,  আচ্ছা দেখাই  যায়না কি প্রশ্ন  মেয়েটি রাখে বলে সম্মতি দিলেন। উপস্থিত  জনতা খানিকটা ঔৎসুক্যবশত নিজেদের  মধ্যে চাওয়াচায়ি করতে থাকলেন। আচ্ছা স্যার,  হাইব্রিড বিয়ে হলে কেমন  হয়?
হাইব্রিড  বিয়ে! সবাই  হাঁ হয়ে গেলেন এই অদ্ভূত বিয়ের কথা শুনে। এইরকম  বিয়ের কথা তো সকলেরই অজানা। একযোগে বহু জোড়া বিস্মিত চোখের দৃষ্টি মেয়েটির  দিকে ধেয়ে  এল। কোন কোন  বয়স্ক মানুষ  অস্ফূট স্বরে বলে ফেললেন এঁচোড়ে পাকা মেয়ে কোথাকার। কিন্তু প্রজাপতি দুঁদে সাংবাদিক।  তিনি বললেন  যে একটু বিশদভাবে  বললে বুঝতে সুবিধে হয় কারণ এই বিশেষ বিয়ে সম্বন্ধে কারও  কোন ধারণা নেই। মেয়েটি এইবার  বলল যে ধরুন কোন  ছেলের সঙ্গে কোন মেয়ের প্রেম হলো কিন্তু কোন কারণে সেটা ম্যাচিওর করলনা এবং দুজনেই পরবর্তী কালে সংসারী হলো এবং দুজনের মধ্যেই  একটা সুসম্পর্ক  থেকে গেল। 
কেউ কেউ  বলে উঠলেন এ তো পরকীয়া। আবার  কেউ কেউ  বললেন  যে না, এটাকে পরকীয়া বলা ঠিক  হবেনা বরং এটাকে প্লেটোনিক লাভ বলা উচিত। সময় প্রায় শেষ  হয়ে আসছে দেখে প্রজাপতি পাকা খেলোয়াড়দের  মতো বললেন  যে আজকের  বিতর্ক  ছিল কোন বিয়ে ভাল  প্রেম করে না সম্বন্ধ করে। আপনার  কথামতো হাইব্রিড  বিয়ে নিয়ে অন্য একদিন  ভালভাবে আলোচনা করা যাবে।
  প্রজাপতি দে  ফল অমীমাংসিত বলে ঘোষণা  করলেন।  সুতরাং বরাবরের  মতো এই আলোচনাতেও ঠিক হলোনা কোনটা ভাল  আর কোনটা বিষময়।

Wednesday, 1 May 2024

দমকা হাওয়া

টুটুটু টুটুটু  টুটু,  টুটুটু টুটুটু টুটু রিং টোনে সচকিত মোবাইলে দৌড়ে এল সুনন্দ, কে ফোন করেছে দেখতে। হ্যালো বলতেই একটা দারুণ  সুরেলা গলায় আওয়াজ  ভেসে এল কানে," কাকু, কেমন আছেন?"
গলাটা চেনা চেনা কিন্তু এই মূহুর্তে মনে পড়ছে না। কিন্তু এতটুকুও  বিচলিত  না হয়ে অত্যন্ত  সপ্রতিভ ভাবে উত্তর দিল, " ভাল, তুমি কেমন আছো?" কিন্তু মনটা তখন খুঁজতে শুরু করেছে এই দুরন্ত কণ্ঠস্বরের মালকিন  কে।ব্রেনে একটু খোঁচাখুঁচি করতেই মনে পড়ে গেল বছর সাতেক আগে মুম্বই গামী দুরন্ত এক্সপ্রেসে এক সহযাত্রীনির কথা। হ্যাঁ, অবশ্যই তিনি। কিন্তু ঐ ভদ্রমহিলাকে সুনন্দ তো আপনি সম্বোধন করে কথা বলেছিল, আজ হঠাত তুমি বলে ফেলে একটু লজ্জা লজ্জা বোধ হচ্ছিল।  আসলে কাকু বলে কেউ ডাকলে তাকে আপনি বলে উত্তর দিলে হয়তো তাকে অপ্রস্তুত করে ফেলা হয়। যাইহোক,  কথোপকথন  বেশ ভালোই হলো। কাকিমা কেমন আছেন,  বম্বে আসলে একবার  আমাদের  বাড়ি আসবেন এই জাতীয় কথাবার্তায় শেষ হলো ফোনালাপ। 

কিছুদিন ধরেই  মনে হচ্ছিল  সেই অসামান্য  কণ্ঠস্বরের অধিকারিনীর কথা কিন্তু নামটা কিছুতেই মনে আনতে পারছিলনা সুনন্দ। ফোন ছাড়ার পরেই ফোনে নামটা দেখার  চেষ্টা করল কিন্তু চেনা নম্বর  নয়, অন্তত  এই মোবাইলে নম্বর টা নেই। পুরোন
 ছোট মোবাইলে এই নম্বর টা ডায়াল করতেই ফুটে উঠল নাম শ্রাবস্তী মজুমদার।  এতক্ষণে সমস্ত ট্রেন যাত্রার  পুঙ্খানুপুঙ্খ ঘটনা মনে পড়ে গেল। একেই বলে টেলিপ্যাথি,  সুনন্দ ও চিন্তা করছিল  আর সেও কিনা আজই তাকে  টেলিফোন করে খবরাখবর নিল।
শ্রাবস্তীর  বাবা টাটার উচ্চপদস্থ অফিসার  ছিলেন।  ওর স্বামী গৌরবের  বাবাও ঐখানেই  তাঁরই  সমকক্ষ অফিসার  ছিলেন  এবং ছিলেন অভিন্ন হৃদয় বন্ধু। তাঁদের  বন্ধুত্ব তাঁদের  ছেলেমেয়েদের মধ্যেও  ছড়িয়ে পড়েছিল এবং গৌরব ভারতীয় সেনাবাহিনীর  কর্নেল পদে ছিল। শ্রাবস্তী ছিল খুবই  ডাকাবুকো ধরণের।  পড়াশোনার  সঙ্গে সঙ্গে খেলাধূলায় ও ছিল চরম উৎকর্ষতা। কিন্তু একদিন  দুর্ভাগ্যবশত প্যারাসেলিং করার  সময় প্যারাসুট ঠিকঠাক  না খোলায় এক মারাত্মক দুর্ঘটনায় পড়ে যায় এবং ভগবানের অশেষ করুণায়  ও প্রাণে বেঁচে যায় কিন্তু তার মেরুদন্ডে আঘাতের  জন্য  তার হাত পা অবশ হয়ে যায়। কিন্তু দারুণ  লড়াকু  শ্রাবস্তী হার মানার মেয়েই নয় এবং দুর্জয় মনোবল এবং গৌরব ও তার পরিবার শ্রাবস্তীর পরিবারের  পাশে দাঁড়ানোয় তার পুনরুত্থান হয় এবং  গৌরব শ্রাবস্তীকেই বিয়ে করে যা আজকের দিনে বিরল ঘটনা। কথায় কথায় ছাড়াছাড়ি, এমনকি ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে গেছে তখনও  ছাড়াছাড়ি এবং বাবা বা মায়ের  বিয়েতে ছেলে মেয়েরাও  সেলিব্রেট  করছে, এই ধরণের  ঘটনাও আকছার আর সেইখানে ভালবাসার  মর্যাদা দিতে গৌরবের শ্রাবস্তীকে বিয়ে করা এক অত্যাশ্চর্য ঘটনা। এ বোধহয় আমাদের  ভারতীয় সেনাবাহিনীর  অধিকারীদের  পক্ষেই সম্ভব।  সেলাম জানাই  ভারতীয় সেনাবাহিনীর  সমস্ত সেনা এবং আধিকারিকদের। গর্বে বুক ভরে ওঠে গৌরবদের মত ছেলেদের কথা ভেবে। ট্রেনে যখন  দেখা হয় তখন সে ভাল করে ফোনটাও  ধরতে পারছিল  না  এবং ভয়েস  মেসেজ  সে পাঠাচ্ছিল। আর তাতেই আমার  কান তার অসাধারণ কণ্ঠের  পরিচয় পেয়েছিল। ছত্রপতি  শিবাজী টার্মিনাসে তার স্বামী গৌরবের  সঙ্গে সুনন্দর পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল  এবং সঙ্গে সঙ্গে সুনন্দর  ছেলের সঙ্গেও।  কথায় কথায় সুনন্দ  জেনেছিল  তার স্বামী গৌরবের  ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমির কথা এবং সুনন্দর ছেলের ই ব্যাচের  কিন্তু তার ছেলে সেখান থেকে বেড়িয়ে সিভিলিয়ান জব করেছিল। একই  ব্যাচের হওয়ায়  আলাদা স্কোয়াড্রন  হলেও পরস্পরকে চিনতে পারল এবং মিনিট  পাঁচেক কথাবার্তার পরেই ওরা নিজেদের গাড়িতে  উঠল।

দুহাজার একুশের  পাঁচই মে শেষ কথা হয়েছিল যখন শ্রাবস্তীর মা ও শ্বাশুড়ি দুজনেই কয়েকদিনের ব্যবধানে এই পৃথিবীর  মায়া কাটিয়েছিলেন। বাবা এবং শ্বশুর মশাই  আগেই চলে গিয়েছিলেন।  সুনন্দ জানতে পারল যে আমেরিকায় অস্ত্রোপচারের পর সে এখন যথেষ্ট  ভাল  আছে এবং নিজের কাজ নিজেই করতে পারছে। গৌরবের প্রতি সে কৃতজ্ঞ যে বিপদের  দিনে সে পাশে না দাঁড়ালে  শ্রাবস্তী হয়তো স্বাভাবিক  জীবনে  ফিরতেই পারতো  না। আমাদের  দেশে হাজার  হাজার  গৌরব  জন্ম নিক যাতে আমাদের  সমাজ কলুষ মুক্ত হয়।