এদিকে মতির এলাকাটা বেশী বড় নয় এবং তার দলের পরিধিও ধীরে ধীরে বাড়ছে, সুতরাং, এলাকা না বাড়ালে তাদের চলছেই না। লালু, ভোলারা খুবই সতর্ক, কোনভাবেই যেন বেনোজল না ঢুকে পড়ে। একবার দলে অবাঞ্ছিত কেউ এসে গেলে তাকে গেলাও যায়না আবার উগরেও ফেলা যায়না। খুবই নিয়মানুবর্তী তাদের দল। ওদের বুদ্ধি দেয় দীপু যে বড়লোক বাপ মায়ের অপোগণ্ড ছেলে কিন্তু লালু, ভোলা, কালু, টমিদের মেন্টর সে। সবসময়ই প্যান্টের দুই পকেটে বিস্কুট নিয়ে ঘুরে বেড়ায় আর লালু ভোলাদের স্পনসর হিসেবে কাজ করে আর সেই কারণেই তার কদর ই আলাদা। অন্যদিকে ঝগড়ু খেটে খাওয়া বাবা মায়ের ছেলে আর তাই ট্যাঁকের জোর ও কম কিন্তু ও খুবই কমিটেড। বিরোধীপক্ষ হলেও দীপুর কাছে ঝগড়ুর একটা আলাদা সম্মান আছে। দুই যুযুধান গোষ্ঠীর মেন্টর রা মাঝেমধ্যেই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে যে কিভাবে সংঘর্ষ এড়ানো যায় কিন্তু এ সত্ত্বেও ছোটখাট ঝামেলা লেগেই থাকে।
লালুর শরীরটা ইদানীং বেশী ভাল যাচ্ছেনা, সুতরাং ভোলাকেই দলের অনেকটাই সামলাতে হচ্ছে। মিউনিসিপ্যালিটি থেকে লোক আসছে সারমেয়কুলের সংখ্যা কমানোর উদ্দেশ্যে এবং বিভিন্ন পাড়ায় তারা সমীক্ষা চালাচ্ছে। বাড়ির কুকুরের গলায় বেল্ট এবং পাড়ার ভাল কুকুরের গলায় দড়ি বেঁধে দিয়ে চিহ্নিত করা হতো যে এদের ধরে নিয়ে যাওয়া বা বিষমেশানো মিষ্টি খাইয়ে মেরে ফেলা চলবে না। লালু, ভোলা, কালু বা টমিদের স্বভাব এতই ভাল ছিল যে ওদের কেউ ক্ষতি করতে চাইলে সমস্ত পাড়ার লোক হাঁ হাঁ করে উঠত। কিন্তু মতিদের এলাকা সবই খেটে খাওয়া মানুষদের পাড়া যারা সকাল হতেই কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে এবং ঝগড়ুও তার ব্যতিক্রম নয়। সুতরাং মিউনিসিপ্যালিটির লোক আসার সময় সে মতিদের খেয়াল রাখতে পারেনি এবং এতই নির্দয় সেই লোকগুলো, মতিকে দেখে তারা বিষমেশানো মিষ্টি খাইয়ে দিয়েছে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই ঐ তরতাজা তাগড়া কুকুরটা ছটফট করে মারা গেল। দীপু যখন জানতে পারল যে মতিকে বিষ খাওয়ানো হয়েছে, ছুটল তাকে দেখতে। দীপু বাড়ির সকলের কাছে অপদার্থ হলেও তার একটা হৃদয় বলে বস্তু ছিল এবং কারণে অকারণে পশুপাখির উপর কোন ধরণের অত্যাচার সে সহ্য করতে পারত না আর সেই কারণেই সমস্ত জীবজন্তুরা তাকে খুব ভাল বাসতো। এমন কি চিরশত্রু লালু ভোলাদের মেন্টর হলেও মতি বা তার দলবল তাকে কোনদিন তাড়া করেনি। ড্যাকারা তাদের নেতা মতির ঐ হাল দেখে পাড়া ছাড়া, এসে পড়েছে লালু, ভোলাদের পাড়ায় কিন্তু না, আজ তারা আর নিজেদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি ভুলে গিয়ে দীপুর পিছন পিছন এসেছে মতিকে দেখতে। মতির এই হাল দেখে দীপুর চোখে জল এসে গেল। পকেট থেকে বিস্কুট বের করে মতির মুখের কাছে দিল কিন্তু মতির চোখ দিয়ে জল বেরোনো ছাড়া আর কিছুই হলো না। পাশের কল থেকে হাতের আঁজলে করে জল মতির মুখের কাছে দিল, সামান্য একটু জল হয়তো মুখের ভেতর গেল আর বাকিটা ঐ জায়গার চারপাশ টা একটু ভিজিয়ে দিল। মিউনিসিপ্যালিটির লোকগুলো হতভম্ব, তারাও ভাবতে পারেনি খেটে খাওয়া মানুষের এলাকায় বেড়ে ওঠা এক প্রতিবাদী কুকুরের মৃত্যুর জন্য বড়লোকের ছেলে দীপুর এহেন আচরণ। একটু বাদেই একটা দড়ির ফাঁস মতির পিছনের পায়ে লাগিয়ে টানতে টানতে নিয়ে গেল, রেখে গেল কাঁচা রাস্তায় মতির শরীরের দাগ। পকেটে রাখা সমস্ত বিস্কুট আজ দীপু লালু, ভোলা কালু টমিদের সঙ্গে ড্যাকাদের মধ্যেও ভাগ করে দিল। ওরা আজ একটু থ, বিস্কুট টা শুঁকল কিন্তু কেউ খেলনা, হয়তো বা সন্দেহ তাদের ও মতির মতন অবস্থা হবে না তো।
এর পর থেকে লালু, ভোলাদের দলে ড্যাকারাও সামিল হয়ে গেল এবং রেষারেষি একদম বন্ধ।
No comments:
Post a Comment